বিপ্লবের রক্তে লেখা প্রত্যাশা: আগামীর বাংলাদেশ গড়ার সময় এখনই

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী :
ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আজকের এই বিপ্লবের বাস্তবতা। ইতিহাস সাক্ষী-বাংলার রাজপথে যদি কোনোদিনও কোনো পরিবর্তনের পদধ্বনি শোনা যায়, তার জন্ম হয়েছে ছাত্র আন্দোলনের গর্ভ থেকে। ১ জুলাইয়ের রাজপথে গর্জে ওঠা সেই ছাত্র জনতার রক্তে লিখিত প্রত্যয়-আর কোনো স্বৈরাচার নয়, আর কোনো বিদেশি দালাল নয়, এখন সময় এক নতুন বাংলাদেশের।

এই বিজয় শুধু একটি স্বৈরাচার পতনের নয়, এটি একটি যুগান্তরের সূচনা। তবে এই বিপ্লব যদি বাস্তব পরিবর্তনে রূপ নিতে চায়, প্রয়োজন একসাথে সবাইকে-রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে, দলমতের বেড়াজাল ভেঙে সকল দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যই এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

হিংসা, জঞ্জাল, লুটপাট, পাচার-রুখে দিতে হবে
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি পরিণত হয়েছে একটি লুটপাটের প্রকল্পে। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ক্ষমতার নামে খুন-গুম, ভুয়া নির্বাচন আর প্রশাসনের দলীয়করণ-সব মিলিয়ে একটি জাতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলেছে অনেক দূর পর্যন্ত। এর পাশাপাশি ভারতীয় আগ্রাসন, সীমান্তে হত্যাযজ্ঞ, অর্থনৈতিক শোষণ এবং সংস্কৃতি দখলের যে নগ্ন অপচেষ্টা চলছে, তা প্রতিহত না করলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে।

এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে একটিই পথ খোলা-একটি সর্বদলীয়, নিরপেক্ষ, আন্তরিক, দেশপ্রেমিক অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার, যেখানে একটিই লক্ষ্য থাকবে-বাংলাদেশকে আবার গড়ে তোলা। সেই সরকারই আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন যাত্রা
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস-যিনি সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত একজন মানবতাবাদী, সমাজ পরিবর্তনের রোল মডেল হিসেবে-তাঁর নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেবল একটি প্রশাসনিক রদবদল নয়, এটি একটি নৈতিক পুনর্জাগরণের সূচনা।

এই সরকার কেবল স্বৈরাচার পতনের পর “একটি ফাঁকা চেয়ার” পূরণ করেনি, এটি জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মিশনে নেমেছে। প্রশাসনিক শুদ্ধি, লুণ্ঠিত সম্পদ ফিরিয়ে আনা, গুম-খুনের বিচার, নির্বাচনী সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা-সবকিছুর পুনর্গঠনের সূচনা শুরু হয়েছে।

জনগণের আকাঙ্ক্ষা: একটি নতুন বাংলাদেশ
জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন-একটি সুশাসিত, গণতান্ত্রিক, মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ। যেখানে নাগরিক নিরাপদ, অর্থনীতি টেকসই, দুর্নীতির জায়গায় জবাবদিহিতা থাকবে। এই বাংলাদেশে কেউ রাজনৈতিক মতের কারণে নির্যাতিত হবে না, কেউ কোনো রাষ্ট্রের দালালি করে গদিতে বসতে পারবে না।

এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে, শুধু সরকারের সদিচ্ছা যথেষ্ট নয়-প্রয়োজন গণমানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। শিক্ষিত, সচেতন নাগরিক সমাজের জাগরণ, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা, এবং কৃষি-শিল্প-প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন অর্থনীতি গড়ে তোলাই হতে পারে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশের প্রকৃত রূপরেখা।

ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় আগামীর নতুন বাংলাদেশ?
এখনো সময় আছে। আমরা যদি সবাই একসঙ্গে দাঁড়াই, দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে, দেশকে ভালোবেসে ঐক্যবদ্ধ হই-তবে এই বিপ্লব কেবল একটি আন্দোলনই থাকবে না, এটি হয়ে উঠবে ইতিহাস বদলে দেওয়া এক নবযাত্রা।

এই বিপ্লব কেবল পতনের নয়-এই বিপ্লব পুনর্গঠনের।
বাংলা কারো একার না-বাংলা সবার। ইতিহাসের ডাকে সাড়া দিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রায় আপনি কি প্রস্তুত?
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক-
নবজাগরণ।
www.thenabajagaran.com