মো:আবু তাহের পাটোয়ারী :
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু দৃশ্য আমরা প্রত্যক্ষ করেছি-কারফিউ জারি করা রাজধানী, হেলিকপ্টার থেকে গুলি, সাধারণ মানুষের বাড়ির ওপর নামানো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, আর তারই মাঝে একটি মুখবার্তা: “আমরা গুম হব, মরবো, কিন্তু ফিরে যাবো না!”
এই লাইনটা কে বলেছিল? মনে আছে?
আসিফ মাহমুদ-ওই তরুণকে গুম করা হয়েছিল দিনের আলোতে। যখন তার বাবা সংবাদ সম্মেলন করে কাঁদছিলেন ছেলের খোঁজে, তখন পাশে কাঁদছিল হাসনাত, আরেক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল চিন্তিত নাহিদ ও সার্জিস। তারা জানতো, এখন ফিরে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই। এখন শুধু সামনের দিকে যাওয়া-আর সামনে তখন ছিলো কেবলমাত্র বন্দুকের নলা, গুম, মৃত্যু আর রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিশোধ।
এই ছেলেরা তখন কী ভাবছিল?
আমরা জানি না। আল্লাহ জানেন। তবে তারা যে ভয় পেয়েও পালায়নি, সেটা ইতিহাস জানে। তারা জানতো-যদি জয় হয়, তাহলে সকলের। আর যদি পরাজয় হয়, তাহলে কেবল তাদের জন্যই থাকবে জেল, গুম কিংবা নিরুদ্দেশের দড়ি।
তাদের ভুল হতেই পারে। মানুষ তো।
তাদের মধ্যে কেউ হয়তো রাজনীতি করবে, কেউ পিছিয়ে যাবে, কেউ হয়তো নীরব থাকবে। কিন্তু সেই একটা মুহূর্তে-যখন বাকি সবাই ঘরে, এই ছেলেগুলো বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল রাজপথে, সামনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চলছিল, তখন ওরা হঠাৎ করে ‘ভবিষ্যতের কন্ঠস্বর’ হয়ে উঠেছিল।
আপনি ট্রল করতে পারেন…
হ্যাঁ, আপনি তাদের নিয়ে ট্রল করতে পারেন।
আপনি হাসতে পারেন তাদের পোশাক, বক্তব্য বা আজকের অবস্থান নিয়ে।
কিন্তু আপনি যদি আপনার অন্তরের গভীরে যান, আপনি জানবেন-আজ যেটুকু স্বাধীনভাবে আপনি কথা বলতে পারেন, যেটুকু ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য আপনি বুঝতে শিখেছেন, সেটুকু এই সাহসী মুহূর্তগুলোরই ফসল।
আপনি যেই দলের হোন, যেই মতের হোন না কেন, মানতে বাধ্য হবেন-যখন সরকার গোটা রাষ্ট্রকে বন্দী করে ফেলেছিল, তখন এই তরুণরাই রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়েছিল।
তারা যদি ব্যর্থ হতো?
তারা সফল হয়েছে বলেই আজ কথা বলা যাচ্ছে।
কিন্তু ভাবুন তো, তারা ব্যর্থ হলে কী হতো?
আসিফ আজো গুম হয়ে থাকতো। হাসনাত হয়তো একটা নদী থেকে ভেসে উঠতো। নাহিদ, সার্জিস হয়তো একটা ‘আননোন’ কবর পেতো যেখানে ফুল দিতে কেউ আসতো না। আর আমরা হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় নিঃশব্দে স্ক্রল করে যেতাম।
ইতিহাসের দায় কখনো শেষ হয় না
এটা সত্যি, ওরা মানুষ। তারা ভুল করবেই। হয়তো ভবিষ্যতে সবাই এক জায়গায় থাকবে না। কিন্তু তাদের সেই সময়কার সাহস আর আত্মত্যাগ অস্বীকার করার অর্থ হবে-নিজের বিবেককে হত্যা করা।
তাদের জন্য আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত নয় শুধু, আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
আমরা যদি ইতিহাসে সঠিকভাবে শ্রদ্ধা জানাতে না পারি, তাহলে আগামী প্রজন্ম একদিন সাহস করতে ভয় পাবে। তারা ভাববে, সাহসীরা ভুলে যায়, ট্রলের শিকার হয়, একদিন একাকী হয়ে পড়ে।
কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। কারণ আমরা জানি-আসিফ, হাসনাত, নাহিদ, সার্জিসদের সাহসে দাঁড়িয়ে আছে এই নতুন বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। ইতিহাস তোমাদের মনে রাখবে। আমরা যেন রাখতে না ভুলি।
লেখক :সম্পাদক ও প্রকাশক
নবজাগরণ।
জুলাই যোদ্ধা আহত সাংবাদিক।
www.thenabajagaran.com
#জুলাই_আন্দোলন #আসিফ_হাসনাত_নাহিদ_সার্জিস #ভুলতে_নয়