বিএনপির নেতৃত্ব সংকট ও মুক্তির পথ-জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় এখনই

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী :
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দীর্ঘদিনের “ওপেন সিক্রেট” ছিল-বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একটি অংশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়ার রাজনীতি। কথাটা অনেকে বলতো না, কিন্তু বাস্তবতার ভেতর গেঁথে ছিল এই নীলনকশা। ঠিক এই কারণেই ঢাকাভিত্তিক কোনো বিপ্লব, গণজাগরণ, এমনকি সৎ প্রতিবাদও গড়ে উঠতে পারছিল না – যতক্ষণ না পর্যন্ত নেতৃত্বের শিকড় ভেঙে ভিতর থেকে নতুন কিছু উঠে আসছে।

২০১৩: বিশ্বাসঘাতকতার এক নির্মম দিন
২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি ঘোষণা করেছিল “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি”- সেই সময়কার দুঃসাহসিক একটি কর্মসূচি।
দেশজুড়ে উত্তাল জনতা, প্রস্তুত মিছিল, ঢাকামুখী মানুষের ঢল, কিন্তু রাজধানীর বিএনপি নেতৃত্ব ছিল যেন হঠাৎ করেই গুম।
একটি সন্ত্রস্ত নীরবতা- যেখানে লক্ষ মানুষ হাজির হয়েছিল, সেখানে দলের নেতাদের দেখা মেলেনি।

তৃণমূলের কর্মীরা হতাশ, ক্ষুব্ধ- কারণ তাদের সাহস ছিল, প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু আশ্রয়স্থল বলে মনে করা নেতৃত্বটাই ছিল ঘরের শত্রু বিভীষণ। ঢাকা মহানগরের অনেক প্রভাবশালী নেতা তখন হাসিনার সাথে আঁতাতে ব্যস্ত ছিল। গণতন্ত্র বাঁচাতে নয়, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ বাঁচাতে।
এই বিশ্বাসঘাতকতাই শুধু আন্দোলন ধ্বংস করেনি, গণতন্ত্রের সম্ভাবনাকে করেছে ধূলিসাৎ।

৫ আগস্ট ২০২৫: নতুন বাংলাদেশ, পুরোনো বিএনপি?
যখন ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে একটি নতুন বিপ্লবী রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি হলো, যখন জনগণের অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো- তখন আমরা দেখলাম বিএনপির কেন্দ্রীয় কিছু অংশ কীভাবে চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলল এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেলো তারা আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ও দিচ্ছে।

সত্যি বলতে কি, বিএনপি আজও মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার ভারে নুয়ে পড়েছে।
একেকটি আসনে একাধিক গ্রুপ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানে না স্থানীয় নেতৃত্ব, আর তৃণমূল চরম হতাশার মধ্যে।

এখন প্রয়োজন জিয়াউর রহমানের মত সাহসী নেতৃত্ব!
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের মনে পড়ছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর নাম। যিনি যুদ্ধের ময়দানে “আমি মেজর জিয়া বলছি…” বলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। যিনি জানতেন, জনগণই সর্বশক্তির উৎস। যিনি যুদ্ধের মাঠে শুধু শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, নিজের ভেতরের ভয় ও সংশয়ের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেছিলেন।

তার হাতে গড়া বিএনপি ছিল একটি বিপ্লবী দল – যা তৈরি হয়েছিল সিপাহী-জনতার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে। তার নেতৃত্ব ছিল নীতিনিষ্ঠ, সামরিক কঠোরতা ও গণতান্ত্রিক অভিপ্রায়ের মিশ্রণ। তিনি জানতেন কাকে বাদ দিতে হবে, কাকে হাতে রাখতে হবে।

আর বেগম খালেদা জিয়া?
বেগম খালেদা জিয়া ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেত্রী, যিনি আওয়ামী লীগের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন। তার শাসনামলে গুম, খুন, গ্যাসের দাম বাড়ানো, দ্রব্যমূল্যের উল্লম্ফন – এসব ছিল না। তার সততা ও দেশপ্রেম আজকের তথাকথিত নেতাদের জন্য একটি আয়না, যেখানে নিজেদের মুখ দেখলে তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত।

তিনি ক্ষমতায় থেকেও ভারতের গোলামি করেননি। কোনো আন্তর্জাতিক শক্তির হাতে দেশের সার্বভৌমত্ব তুলে দেননি। তার শাসনামল হোক আলোচনার বিষয়, সমালোচনার নয়।

এখন কী করণীয়?
এই সময়ে বিএনপিকে বাঁচাতে হলে পুরোনো নেতৃত্বকে দায় নিতে হবে।
যারা আওয়ামী লীগকে রক্ষা করেছে, যারা ২০১৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে জনগণের বিশ্বাস নষ্ট করেছে, যারা মিটিংয়ের নামে সমঝোতা করে নিজেদের পকেট ভারী করেছে – তাদের রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে।
বিএনপিকে আবার ফিরতে হবে জিয়াউর রহমানের বিপ্লবী দর্শনের কাছে, খালেদা জিয়ার আদর্শিক দৃঢ়তার কাছে।

নতুন নেতৃত্ব গড়তে হবে যারা সাহসী, মাঠে নেমে লড়তে পারে, জনগণের কণ্ঠে কথা বলতে পারে – যারা গুমের ভয় পেয়ে পালায় না।

নির্বিশেষে জনকল্যাণে বিএনপিকে নতুন নেতৃত্বের খোঁজে অগ্রসর হতে হবে:
আজ যারা রাজনীতি করছে, তারা যদি অতীতের শিক্ষা না নেয়, তবে ভবিষ্যতও তাদের ক্ষমা করবে না।
আর যারা জিয়ার রক্ত, খালেদার চোখের অশ্রু, আর তৃণমূলের স্বপ্ন নিয়ে খেলছে – তারা শুধু নিজের দল নয়, পুরো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলছে।

এখনও সময় আছে। সত্যের দিকে ফিরে আসার। বিপ্লবের স্রোতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের।
বাংলাদেশের জন্য, বিএনপির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য – জিয়াউর রহমানের আদর্শে প্রত্যাবর্তন এখনই জরুরি।

লেখক: সম্পাদক-
নবজাগরণ
শেয়ার করুন সবাই
অনলাইনে পড়তে :
www.thenabajagaran.com