ইরানের পরমাণু শক্তি ও ‘মিসাইল সিটি’: যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল ব্যর্থ, ভয় জিইয়ে রেখেছে মাটির ৫০০ মিটার নিচে গোপন ঘাঁটি!

নবজাগরণ প্রতিবেদক:
৬ জুলাই ২০২৫
ভূগর্ভস্থ এক অদৃশ্য বিপদ: ‘মিসাইল সিটি’
ইরান সরকারের প্রকাশ্য ঘোষণায় জানা যায়-তাদের ‘মিসাইল সিটি’গুলো মাটির ৫০০ মিটার নিচে গড়ে তোলা হয়েছে। এসব সুরক্ষিত সুড়ঙ্গ ও ঘাঁটিতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে মাঝারি ও দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল, যা প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো সময় উৎক্ষেপণযোগ্য।

এগুলো কেবল গোপন সামরিক স্থাপনাই নয়, বরং ইরানের কৌশলগত আত্মরক্ষার প্রধান ভিত্তি। এসব সুড়ঙ্গ এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যা “Bunker Buster” টাইপ মার্কিন বা ইসরায়েলি বোমা দিয়েও ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল: রণকৌশলগত ব্যর্থতা
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ২০০৫ সাল থেকেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে থামানোর চেষ্টা করে আসছে। হুমকি, নিষেধাজ্ঞা, গুপ্তচরবৃত্তি এমনকি সাইবার হামলার মতো প্রচেষ্টা চালিয়েও তারা বাস্তবিকভাবে খুব কমই সফল হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো যেমন ফোরদো, নাতাঞ্জ বা পারচিন গভীর ভূগর্ভে অবস্থিত এবং সেগুলো এতটাই সুরক্ষিত যে ২০০২۰ সালে ইসরায়েল যখন ‘স্টাক্সনেট’ নামক সাইবার অস্ত্র ব্যবহার করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া ধ্বংস করতে চায়, তখনও ইরান খুব দ্রুত সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়।

‘নির্বাক’ হয়ে পড়েছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো
একাধিক পশ্চিমা গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে-ইরানের মিসাইল সিটি সম্পর্কে তারা পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানে না। ঘন পাহাড়ি এলাকা, অন্ধকার সুড়ঙ্গ এবং চৌম্বকীয় তরঙ্গ-বিধ্বংসী কংক্রিট দেয়ালে তৈরি এই শহরগুলো “Deep Earth Fortress” হিসেবে বিবেচিত।

এছাড়া Revolutionary Guards বা আইআরজিসি’র এলিট বাহিনী এসব স্থাপনায় নিয়োজিত, যারা যুদ্ধক্ষেত্রে আগেও প্রমাণ দিয়েছে—তারা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণের ক্ষেত্রেও ভয়ঙ্কর কার্যকর।

ইরান কি সত্যিই পরমাণু অস্ত্রের দোরগোড়ায়?
মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান চাইলে ৬ মাসের মধ্যে একটি পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে সক্ষম। তারা ইতোমধ্যেই ৮৩.৭% মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে-যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন ৯০%। এর মানে দাঁড়ায়-ইরান এখন ‘Nuclear Threshold State’।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট সম্প্রতি বলেছেন,
“ইরান এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে তারা আমাদের কৌশলগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলেছে।”

আঞ্চলিক রাজনীতি ও মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
ইরানের এই ভূগর্ভস্থ শক্তি শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের মাথাব্যথা নয়। এটি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, তুরস্কের মত দেশগুলো মনে করছে-ইরান হয়তো একমাত্র মুসলিম দেশ হিসেবে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে পরমাণু ভারসাম্য তৈরি করতে পারছে।

যুদ্ধ না কূটনীতি?
ইরানের ভূগর্ভস্থ মিসাইল শহর এবং পারমাণবিক ক্ষমতা থামাতে না পারার অর্থ-পশ্চিমাদের এক যুগের চেষ্টার ব্যর্থতা। তেহরান বুঝিয়ে দিয়েছে-যুদ্ধ নয়, আত্মরক্ষার জন্যই প্রস্তুতি। আর এই প্রস্তুতি এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে কেউ সহজে আঘাত হানার সাহস পায় না।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:
ইরানের ভূগর্ভস্থ মিসাইল ঘাঁটির ছবি, উপগ্রহচিত্র এবং অ্যানিমেশন গত কয়েক বছরে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হলেও, প্রকৃত অবস্থান এখনো পুরোপুরি অজানা। মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা একে ‘Invisible Military Doctrine’ বলেও উল্লেখ করেছেন।