জুলাই ২৪: দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, নতুন বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :
১৯৪৭ আমাদের দিয়েছে ভৌগোলিক মানচিত্র, ১৯৫২ দিয়েছে মাতৃভাষার অধিকার, ১৯৭১ দিয়েছে স্বাধীনতার পরিচয়, ১৯৬৮ গণঅভ্যুত্থান দিয়েছে সংগ্রামী জনশক্তির ঐক্য, আর ১৯৯১ দিয়েছিল স্বৈরতন্ত্রমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো।
কিন্তু এই সব অর্জন কতটা স্থায়ী ছিল? কতটা মুক্তি এনেছে বাস্তবে? আর অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাই, বিশেষ করে জুলাই ২৪, জন্ম দিয়েছে সেই ইতিহাসের-যা একবিংশ শতাব্দীর নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

❝এইবারের সংগ্রাম রাষ্ট্রের পূর্ণ পুনর্গঠনের সংগ্রাম❞

জুলাই ২৪ ছিল শুধু ভারতীয় আধিপত্য, অভ্যন্তরীণ স্বৈরতন্ত্র কিংবা অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে নয়-এটি ছিল পুরো রাষ্ট্র কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রজন্মের জাগরণ। যে কাঠামো তৈরি হয়েছিল একাত্তরের পর ভারতের ছত্রছায়ায়, আর তারপর যা পরিণত হয় দুর্নীতিগ্রস্ত, দমন-পীড়নমূলক, ভোটাধিকারহীন এক ছদ্ম-গণতন্ত্রে।

এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল না কোনো রাজনৈতিক দল, বরং ছিল অদম্য তরুণ-তরুণী, শহীদ রিকশাচালক, বিপ্লবী ছাত্র, গার্মেন্টস শ্রমিক, মধ্যবিত্ত শিক্ষক। তাঁদের কণ্ঠে ছিল একটি স্লোগান:
“ভারতীয় প্রভুত্ব নয়, পূর্ণ মুক্তি চাই!”

❝ভারতের শোষণ নয়, নতুন প্রজন্মের নতুন বাংলাদেশ চাই❞

১৯৭১ সালে আমরা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়েছিলাম মুখোমুখি যুদ্ধে। কিন্তু স্বাধীনতার পরে ভারত হয়ে উঠেছে ছায়া-শাসক। সীমান্ত হত্যা, পণ্যবাজারে দখল, পানি সমস্যায় একতরফা চুক্তি, ট্রানজিটের নামে সার্বভৌমত্ব হরণ-এইসব কিছু প্রমাণ করে যে, স্বাধীনতা কাগজে ছিল, বাস্তবে নয়।

জুলাই ২৪-এ এই ভণ্ডামির মুখোশ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। হাজারো তরুণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে একটাই মেসেজ-
“আমরা ভারতীয় উপনিবেশে আর থাকব না।”

২০২৬: একটি নতুন সূচনা, একটি নতুন রাষ্ট্রচিন্তা

এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব এসেছে। সর্বসম্মতভাবে একটি নাম উচ্চারিত হয়েছে-
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এই ব্যক্তিত্ব শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের দরবারে একজন নৈতিক, নিরপেক্ষ এবং সক্ষম নেতৃত্ব হিসেবে স্বীকৃত।
তিনি একমাত্র নেতা যিনি কোনো দলের নয়, কোনো দেশের নয়, বরং মানুষের পক্ষে।

তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ৫টি রূপান্তর আনবে:

১. ভারতকেন্দ্রিক অসাম্য চুক্তির পূর্ণ পর্যালোচনা ও বাতিল।
২. নতুন সংবিধান: জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার মডেল।
৩. নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার: সেনা তত্ত্বাবধানে শতভাগ স্বচ্ছ ভোট।
৪. আর্থিক স্বাধীনতা: বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ নির্ভরতা থেকে মুক্তি, স্বনির্ভর অর্থনীতি।
৫. নতুন প্রজন্মের রাষ্ট্র গঠন: তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, পরিবেশবান্ধব ও মানবিক বাংলাদেশ।

ইতিহাস দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে

যেমন ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণার পর একটি সংবিধান সম্মেলন হয়েছিল, যেমন ১৭৮৯ সালে ফরাসিরা রাজতন্ত্র ভেঙে গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র গড়েছিল, তেমনি আমাদের সামনে এসেছে ২০২৬ সালে একটি “নতুন বাংলাদেশের জাতীয় পুনর্গঠন সনদ” রচনার ঐতিহাসিক সুযোগ।

এইবার আর শুধু ভোট নয়, শুধু দলবদল নয়-এইবার সংগ্রাম রাষ্ট্র কাঠামো বদলের, জনগণের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার।

ইতিহাসে বাঁচার সময় এখনই!
আমরা আর প্রতীক্ষা করবো না, যারা শুধু ‘স্বাধীনতা’ বলে ভোট চায়, অথচ স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়।
আমরা নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত।
আমরা জেগেছি, আমরা হাঁটছি, আমরা গড়বো সেই রাষ্ট্র,
যেখানে জনগণই হবে চূড়ান্ত মালিক।

“জুলাই ২৪” শুধু একটি দিন নয়, এটি একটি অঙ্গীকার-প্রজন্মের প্রতি, দেশের প্রতি, আগামী ভবিষ্যতের প্রতি।
লেখক: সম্পাদক-
নবজাগরণ।