নবজাগরণ প্রতিবেদক: ৮জুলাই,
শাহবাগ শহীদের রক্ত আজ রাষ্ট্রের দরজায় ধাক্কা খাচ্ছে
আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিসে এক চরম উত্তপ্ত ঘটনার জন্ম হয়। আন্দোলনে আহত যোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা দেন এবং পরে কিছু অংশে ভাঙচুর চালান। অভিযোগ-বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও চিকিৎসা সহায়তার অর্থ দেওয়া হয়নি, বরং তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে।
ঘটনার সময় উপস্থিত প্রায় ২০-২৫ জন আন্দোলনকারী জানান, তারা কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফাউন্ডেশনের সিইও কামাল আকবর ঘোষণা দেন যে, আজও টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এর পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
আহত আন্দোলনকারী মামুন হোসেন বলেন,
“জুলাই ফাউন্ডেশনের এক কর্মী আমাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার কথা বলেন। এরপর ক্ষোভে সবাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর চালান। আমরা তো কোনো দয়াভিখারী নই। আমাদের রক্তের দাম চাই, চিকিৎসার অধিকার চাই।”
তালিকার নামে তালবাহানা, যাচাইয়ের নামে প্রহসন!
জুলাই আন্দোলনের আহত ও নিহতদের স্বজনরা অভিযোগ করছেন-তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে আবেদন করে বসে আছেন।
সেসব আবেদন চূড়ান্ত করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
কিন্তু ঈদের আগে তালিকা প্রকাশের আশ্বাস দিয়ে এখন নতুন করে সময়ক্ষেপণ শুরু হয়েছে।
জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন-তালিকা পাঠানো হয়েছে।
আর ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানাচ্ছে-
“তালিকা পড়ে আছে। এনসিপির নেতারা গড়িমসি করছে।”
এ ধরনের দ্বিচারিতা ও দায়িত্বহীনতা আহতদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
কাদের জন্য এই রাষ্ট্র? শহীদদের জন্য নয়, নিশ্চয়ই!
২৪ জুলাই ২০২৪ সালে শুরু হওয়া গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ দিলেন, যাঁরা রক্ত দিলেন, যাঁরা পঙ্গু হয়ে ঘরে ফিরলেন-আজ তাদের ভাগ্যে জুটছে প্রতারণা, অবজ্ঞা ও নির্লজ্জ উপেক্ষা।
জুলাই ফাউন্ডেশন যাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাদেরই অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে-তারা কি দায় এড়াতে পারে?
সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়, এনজিও, ফাউন্ডেশন-সবার মধ্যে দায় চাপাচাপি চলছে। কিন্তু আহতরা আজও চিকিৎসার টাকা পাননি, শহীদের পরিবাররা পাননি একবিন্দু মর্যাদার আশ্বাস।
আমরা প্রশ্ন রাখছি-
১.কেন ৩ বার তারিখ দিয়ে আবার ঘোরানো হলো আহতদের?
২. কেন ‘এইম’, ‘আইএস’, ‘এনসিপি’ তালিকা চূড়ান্ত করলেও তা প্রকাশ করা হচ্ছে না?
৩. কোথায় গেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা?
৪.এই ফাউন্ডেশনের আর্থিক হিসাব কোথায়? কে দিচ্ছে বরাদ্দ, কে আটকে দিচ্ছে অর্থ?
এই রাষ্ট্র বদলাতেই হবে-শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না!
জুলাই বিপ্লবের তাত্পর্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
কিন্তু আজকের ঘটনা প্রমাণ করে-এই রাষ্ট্র এখনো প্রজাদের চোখে ধোঁকা দেয়, শহীদদের রক্তকে অবহেলার বালুচরে ফেলে রাখে।
এজন্য প্রয়োজন:
১. আহতদের জন্য অবিলম্বে বরাদ্দকৃত চিকিৎসা সহায়তা প্রদান
২. চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ও ওয়েবসাইটে উন্মুক্তকরণ
৩.ফাউন্ডেশনের আর্থিক হিসাব জনগণের সামনে আনা
৪.দায়িত্বপ্রাপ্তদের ৫.জবাবদিহিতার আওতায় আনা
এবং-একটি অন্তর্বর্তীকালীন, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ সরকার গঠন
শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা দিতে চাই?
তবে তাদের পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধ করুন।
আহতদের চিকিৎসা দিন, তাদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিন।
রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন।
নবজাগরণ অনলাইন ডেস্ক: