নবজাগরণ ডেস্ক:১১ জুলাই ২০২৫
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি নতুন ঘূর্ণিঝড় বইতে শুরু করেছে-চীন,পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিয়ে সম্ভাব্য এক আঞ্চলিক জোটের নাম উঠে এসেছে:SACA-South Asia-China Alliance। অনেকে ইতিমধ্যে এর বাংলা নামকরণ করছেন‘সাকা’।এ যেন শুধু নতুন একটি সংস্থার নাম নয়, বরং ভূ-অর্থনৈতিক ক্ষমতার মানচিত্রে একটি গর্জন!
সার্ক মৃতপ্রায়,‘সাকা’তার কবর!
২০১৪ সালে কাঠমান্ডুর পর আর কোনো পূর্ণাঙ্গ সার্ক সম্মেলন হয়নি। ভারতের একাধিপত্যবাদী নীতির কারণে সার্ক আজ প্রায় অচল। এমন এক শূন্যতায় চীন তার ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ পাকিস্তানকে নিয়ে নতুন একটি বলয় গড়তে চাইছে। এর পেছনে রয়েছে সুস্পষ্ট কৌশল-ভারতের প্রভাব খর্ব করা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত অঞ্চল তৈরি করা, এবং সর্বোপরি চীনা আধিপত্য বিস্তার করা।
চীনের স্বপ্ন:ভারতীয় উপমহাদেশে ‘ড্রাগন বেল্ট’
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর আওতায় পাকিস্তানের গা ঘেঁষে চীন গড়ছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC)। এরই পাশে এবার দক্ষিণ এশিয়ার একটি আলাদা জোট-‘সাকা’-চীনের প্রভাব বাড়ানোর এক নতুন কৌশল। বলা হচ্ছে, আগস্টে ইসলামাবাদে হতে পারে এর প্রথম সম্মেলন।
বাংলাদেশ কেন এই বলয়ে?
প্রশ্ন হচ্ছে-বাংলাদেশ এই জোটে কী করছে?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে কিছু বাস্তবতা সামনে আসে:
ভারত বাংলাদেশকে দিয়ে নিরাপত্তার বিনিময়ে বাণিজ্য করে;
চীন বাংলাদেশে অবকাঠামো,সমুদ্রবন্দর ও সামরিক প্রযুক্তিতে আগ্রহী;
আর বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এখন আর “এক মেরু”তে আটকে থাকতে রাজি নয়।
এখানেই প্রশ্ন-বাংলাদেশ কি এক নতুন জোটের অংশ হতে যাচ্ছে,নাকি ভারত-চীন প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে?
আফগানিস্তান-মালদ্বীপ-শ্রীলঙ্কা:ছোট রাষ্ট্র, বড় ভূমিকা
দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান মৌখিকভাবে এই জোটে যুক্ত হওয়ার সম্মতি দিয়েছে। শ্রীলঙ্কাতেও চীনের লবিং চলছে জোরেশোরে। মনে রাখা দরকার, এই রাষ্ট্রগুলো এককালে ভারতের ঘনিষ্ঠ ছিল, এখন চীনের দিকে ঝুঁকছে।
এটাই কি “ভারতীয় বলয়” ভেঙে “চীনা বলয়” গড়ার সূচনা?
বিপ্লবী প্রশ্ন:সার্ক যখন ভারতকেন্দ্রিক,তাহলে সাকা কি চীননির্ভর হবে না?
হ্যাঁ, হবে-তবে এখানেই বাংলাদেশের জন্য খোলা থাকবে ‘চতুর কূটনৈতিক নিরপেক্ষতা’র দোরগোড়া। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বলয়ের বাইরে গিয়ে, বাংলাদেশ যদি কৌশলগতভাবে চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করে,তাহলে ভবিষ্যতের ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ হতে পারে একটি মধ্যম শক্তি।
কিন্তু এ সতর্কতার সঙ্গে প্রশ্ন জাগে-
বাংলাদেশের ভূমিকা কী হবে-আজ্ঞাবহ সদস্য,না কী স্বাধীন কৌশল নির্ধারক?
বিপ্লবের ডাক: উপনিবেশবাদ নয়, সহযোগিতার জোট চাই!
চীন যেভাবে আফ্রিকা থেকে এশিয়া জুড়ে কেবল অর্থনৈতিক বলয় গড়ছে, তা অনেক সময় “ঋণ-ফাঁদ” বা “নতুন ঔপনিবেশিকতা” হিসেবে দেখা হয়। আমাদের দরকার নয়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা-যেখানে জোট গঠনের মানে হবে সমান মর্যাদায় পারস্পরিক সহযোগিতা। পাকিস্তান ও চীনের বন্ধন যদি কেবল রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদ আর সামরিক জোটের দিকে মোড় নেয়, তবে বাংলাদেশকে তা ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে।
বাংলাদেশের সামনে ৩টি পথ-
১. ভারতকেন্দ্রিক একমেরু নীতিতে আটকে থাকা; ২. চীনপন্থী জোটে চোখ বন্ধ করে ঢুকে পড়া; ৩. কৌশলগত স্বাধীনতা নিয়ে বহু-মেরু সমতা বজায় রেখে এগিয়ে যাওয়া।
আমাদের প্রশ্ন-বাংলাদেশ কি আবারও”প্রভুর ছায়া” খুঁজবে, নাকি নিজেকে প্রভু হিসাবে গড়বে?
জোট নয়, জাগরণ দরকার। সাকা হোক নতুন ভূরাজনীতির সূচনা, কিন্তু আমাদের শর্তে-স্বাধীনতা ও স্বার্থে অটুট থেকে।