স্বরুপকাঠীর দূধর্ষ সন্ত্রাসী সোহেল শিকদার গনহত্যা সহ ৫ টি ফৌজদারি মামলার আসামী গা বাঁচাতে বিএনপিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা

আব্দুল বাসির: একের পর এক অপরাধ করে মামলায় জড়াচ্ছে পিরোজপুরের নেসারাবাদ ( স্বরুপকাঠী) উপজেলার সারেংকাঠী গ্রামের সন্ত্রাসী সোহেল শিকদার। আবারও একটি মামলার এফআইআর ভুক্ত আসামি হয়েছে। একই উপজেলার দক্ষিণ সোহাগদল গ্রামের মৃত শাহাদাৎ হোসেনের পুত্র মো: মাইনুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারী পিরোজপুরের নেছারাবাদ থানায় দন্ডবিধির ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৫০৬(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। নেছারাবাদ থানার মামলা নং ১০ তারিখ: ২০. ০২.২০২৫।

মামলা সূত্রে জানা যায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সকাল আনুমানিক ১০ ঘটিকায় বাদী মোঃ মাইনুল ইসলাম নিজ এলাকার আলকিরহাট রজ্জব আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় উপস্থিত হয়। ঐ সময় পূর্ব থেকে সেখানে উপস্থিত একদল সন্ত্রাসী তার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা কাটা কাটি শুরু করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাইনুল ইসলামকে লোহার রড,জিআই পাইপ ও রামদার উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে তাকে আহত করে। তার আত্মচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এলাকাবাসী ভিকটিমকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নেছারাবাদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে মাইনুল ইসলাম ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০/৩০ জনকে আসামি করে নেছারাবাদ থানায় ২০ ফেব্রুয়ারী একটি এজাহার দায়ের করেন। এই মামলায় সন্ত্রাসী সোহেল শিকদার ৩ নাম্বার আসামী। মামলার বাদী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভিকটিমকে মারপিট করার সময় আসামি সোহেল শিকদারই তাকে দেশিয় অস্ত্র দ্বারা মারাত্মকভাবে আঘাত করে।

এলাকায় অনুসন্ধানে জানা গেছে হামলার সাথে জড়িত আসামীরা বেশিরভাগই বিএনপির স্হানীয় নেতা কর্মী এবং অন্যরা বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী। মামলার ৩ নং আসামি সোহেল শিকদার ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলো। বিভিন্ন তথ্য সূত্রে আরো জানা যায় গত বছরের জুলাই- আগস্টের আন্দোলনে পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পক্ষে সন্ত্রাসী সোহেল শিকদার ঢাকা ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ছাত্র জনতা হত্যাযজ্ঞে সশস্ত্র অংশ গ্রহন করে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার সিজিএম আদালতে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। যার মামলা নং সিআর ১২১৮ /২০২৪ (আশুলিয়া) ধারা : ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬(২)৩৪ দন্ডবিধি। তার বিরুদ্ধে ঢাকার সি.এম.এম. আদালতে গুলি করে ছাত্র জনতা হত্যা প্রচেস্টার অভিযোগে অপর একটি মামলা হয়। যার মামলা নং সিআর ৭৯৮/২০২৪ ( যাত্রাবাড়ী)। ধারা: ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬(২)৩৪ দন্ডবিধি। উভয় মামলাই পিবিআইতে তদন্তনাধীন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে গুলি করে ছাত্র জনতা হতাহত করার অভিযোগে ঢাকার সি.এম.এম আদালতে দায়েরকৃত একটি মামলায় আদালত রাজধানীর বাড্ডা থানাকে এফআইআর ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। যার মামলা নং সিআর ৬৩/২০২৫। ধারা : ১৪৭/১৪৮/৩২৬/৩০৭/৫০৬(২) ৩৪ দন্ডবিধি। এর পূর্বে তার নিজ গ্রামের জালিস মাহমুদ নামে এক যুবককে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্রের মুখে অপহরণ ও মারপিট করে মারাত্মক আহত করার অভিযোগে পিরোজপুরের নেছারাবাদ থানায় মামলা হয়। নেছারাবাদ থানার মামলা নং ১২৭৩/ ২৪। উক্ত মামলায় সে গ্রেফতার হয়ে হাজত বাস করে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্ত হয়েই সে একের পর এক ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

তথ্য সূত্রে আরো জানা গেছে গনহত্যা মামলায় জড়িত হয়ে মামলা থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে যুবদলের কর্মী পরিচয় দিয়ে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল বেরুনী সৈকতের সাথে ছবি জুড়ে দিয়ে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেয়। যা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে তিনি একটি লিখিত বিবৃতিতে জানিয়ে দেন সোহেল শিকদার নামে আমি কাউকে চিনি না এবং সে আমাদের দলের কেউ নয়। তার কাছে আশ্রয় না পেয়ে সোহেল শিকদার নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ সমর্থক নেতা কর্মীদের সাথে জোট বাঁধে। আলকিরহাট এলাকায় ভিকটিম মাইনুল ইসলামের উপর হামলায় সে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
এ বিষয়ে বিএনপির একটি সূত্র জানায় ত্রী- বিভক্ত নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপিতে চলছে আওয়ামী লীগ ও সন্ত্রাসী পূনর্বাসন প্রকল্প। নিজ নিজ গ্রুপ ভারী করতে আওয়ামী লীগ ও সন্ত্রাসীদের দলে পূনর্বাসন করছে কোনো কোনো নেতা। আওয়ামী লীগ কর্মী ৫টি মামলার আসামী উক্ত সোহেল শিকদার এই পূনর্বাসন প্রকল্পেরই অংশ। এলাকাবাসী আরও জানায় উক্ত সোহেল শিকদারের এলাকায় রয়েছে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা সংঘবদ্ধ ভাবে দাপটের সাথে এলাকায় বিচরণ করে। এদের ভয়ে এলাকাবাসী সবসময়ই ভীতসন্ত্রস্ত থাকে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নিকট এলাকাবাসীর দাবী এই ৫ মামলার আসামী সোহেল শিকদারকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হউক।