পটুয়াখালীতে দীর্ঘ সাত বছর পরে হত্যা মামলায় ২৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পটুয়াখালীর বাউফলে একটি রাজনৈতিক সহিংসতা জনিত হত্যা মামলায় ২৩ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে পটুয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. এনামুল করিম এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত ২৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, আবুল কাশেমের ছেলে মো. হাফিজুর রহমান (২৭), আব্দুর রহমান সরদারের ছেলে তোফায়েল সরদার (৩৯), জালাল সরদারের ছেলে মো. শামীম সরদার (৩৫), সেকান্দার সরদারের ছেলে এলমাছ সরদার (৩৪), গেদু সরদারের ছেলে মো. সোহরাব সরদার (৪৭), আব্দুর কাদের মল্লিকের ছেলে মো. নাঈম মল্লিক (৫৭), আব্দুর রাজ্জাক সরদার (৪২), জয়নাল সরদারের ছেলে মুসা সরদার (৩২) ও সামসু সরদার (৩৪), চারু সরদারের ছেলে মাওলা সরদার (৩৯) ও ইউসুফ সরদার (৩৭), সামসুল হকের ছেলে ফরিদ আহম্মেদ (৬১), আ. খালেকের ছেলে জসিম সরদার (৪১), ছোবহান হাওলাদারের ছেলে বাবলু (৪৫)।

বাকিরা হলেন, মো. কাদের তালুকদারের ছেলে মো. ডালিম তালুকদার (৩১), মৃত হাসেম আলী সিকদারের ছেলে মো. ফিরোজ সিকদার (৪৩), হারুন গাজীর ছেলে হাসান গাজী (৩২), মৃত গেদু সরদারের ছেলে সেকান্দার সরদার (৫৭), মাতাহার মাস্টারের ছেলে মো. জামাল (৩৫), চুন্নু মিয়ার ছেলে শামীম হাওলাদার (২৮), আব্দুল খালেক সরদারের ছেলে জহিরুল ইসলাম বাবুল (৫২), ছত্তার সরদারের ছেলে মন্টু সরদার (৩৫) এবং শিরু সরদারের ছেলে মো. দুলাল সরদার ওরফে ভয় (৪৫)। সাজাপ্রাপ্তরা সবাই বাউফল উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের বাসিন্দা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কালিশুরী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্ট সাইদুর রহমান সোহেল মল্লিকের বাড়িতে হামলা চালায় আসামিরা। ওই হামলায় সোহেলের বাবা আব্দুল ওহাব মল্লিক গুরুতর আহত হন। পরদিন ২১ মার্চ তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাইদুর রহমান সোহেল মল্লিক বাদী হয়ে বাউফল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১৮ সালে মামলার চার্জশিট দাখিল করে।

দীর্ঘ সাত বছরের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করলেন।

মামলার বাদী সাইদুর রহমান সোহেল বলেন, ‘আমার বাবার হত্যার দীর্ঘদিন পর আমরা ন্যায়বিচার পেলাম। বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। এখন আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’ দেশে সত্যিকারের আইন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই বিচারের প্রতি আমরা সম্মান জানাই।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) অ্যাডভোকেট মো. ফরিদ হোসেন বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, যে যত বড়ই অপরাধী হোক না কেন, কোনো অপরাধীই আইনের হাত থেকে রেহাই পায় না। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পেরেছি।

এই রায়ের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামিদের পরিবার। তারা দাবি করেন, ‘এই রায় একপক্ষের ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। প্রকৃত অপরাধীরা আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব এবং আসল অপরাধীরা ঠিক ধরা
পড়বে।