রাতের আঁধারে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে পুকুর ভরাট নীরব ভূমিকায় প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রামের চাঁদগাও থানা এলাকায় রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ পুকুর ভরাট কার্যক্রম, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে
ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে
২৫ থেকে ৩০ টি ড্রাম ট্রাক ও অর্ধ শতাধিক লেবার দিয়ে
দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি ভরাট করছেন সেখানকার
স্থানীয় বাসিন্দা জাশেদ নামের প্রভাবশালী ব্যক্তি। যিনি কিনা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেও
এলাকায় বেশ সু-পরিচিত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,রাহাত্তারপুলের পূর্ব পাশে পূর্ব ষোলশহর কে.বি আমান আলী রোডস্থ পুলিশ বীট সংলগ্ন বানুর বাপের বাড়ীর সুবিশাল পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। রাতের ১০ টা থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ড্রাম ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থান হতে আনা হচ্ছে বালু এবং সেই বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর এবং সেখানে কাজ করছেন অর্ধ শতাধিক শ্রমিক। সেখানকার একাধিক জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায় জাশেদের নেতৃত্বেই নাকি এই পুকুর ভরাট কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চারিদিকে টিনের ঘেরাও দিয়ে রাতের আঁধারে জাশেদ নেতৃত্বে পুকুরটি ভরাট করছেন শ্রমিকরা এমনটা দাবি এলাকাবাসীর।

পুকুর পাড়ের টিনের বেড়ার সাথে ঝুলানো সাইনবোর্ডে খরিদা সূত্রে মালিক হিসেবে বেলাল উদ্দীন, দিদারুল আলম, মামুনুর রশিদ এবং মুমিনুল ইসলামের নাম দেখা গেলেও পুকুর ভরাটের পুরো কার্যক্রমটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন
মিন্নত আলী বাড়ীর জাশেদ নামের এই ডেনমার্ক প্রবাসী।

তথ্যমতে জানা যায় যে,অতীতে পুকুরটি জনসাধারণের ব্যবহারের একমাত্র মাধ্যম ছিল। কিন্তু পরে পুকুরটিকে খরা মৌসুমে সংস্কার না করে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাটের জন্য ব্যবহারের অনুপযোগী করে দেওয়া হয়।
পুকুরের মালিকানা সাইনবোর্ড যাদের নাম দেওয়া আছে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় পুকুরটির জায়গা তারা জাশেদ থেকে ক্রয় করেছেন পুকুর ভরাটের বিষয়ে তারা জানে না। তাদের দাবি তারা নাল জমি ক্রয় করেছেন তাদেরকে জায়গাটি তৈরি করে দিবে এটা তাদের সাথে চুক্তি করেছে মালিক কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ জলাধার সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ’-এ পরিষ্কার বলা আছে, ‘অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন,জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট করা যাবে না।’প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী, ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

জমির একাধিক মানিকগণ আরো দাবি করেন আমরা নাল জমির বাজার মূল্য হিসেবে টাকা পরিশোধ করেছি পুকুর ভরাট ও সিডিএ প্ল্যান নিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তাদের যদি তারা না পারে তাহলে আমাদের টাকা ফেরত দিবেন তারা।

পুকুর ভরাটের বিষয়ে জায়গার মালিক জাশেদ গং এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি প্রথমে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীর পরিচয় দেন এবং পরক্ষণে এশিয়ান টিভির একজন সাবেক সংবাদকর্মীর নাম ভাঙ্গিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি প্রদর্শন করেন। এবং তিনি বলেন ওই সংবাদকর্মী নাকি প্রেসক্লাবে আছেন উনার সাথে দেখা করতে উনি নাকি পুকুর ভরাটের পুরো বিষয়টা দেখছেন।

এ ব্যাপারে,পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন,আমাদের দুজন প্রতিনিধি সেখানে গিয়েছেন তারা নোটিশ দিয়ে আসবেন নোটিশের মাধ্যমে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে পরবর্তীতে শুনানির মাধ্যমে যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, জাশেদ গং আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং খুবই উশৃংখল প্রকৃতির লোক। তারা এলাকাবাসীর কোন মতামতকে সমর্থন কিংবা পাত্তা দেন না। এই পুকুরটি এলাকাবাসীর অনেক উপকারে এসেছে। বড় কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড নির্বাপনে এই পুকুরটির ভুমিকা অপরিসীম। তাদের মালিকানাধীন পুকুর তারা ভরাট করতেছে সেখানে আমাদের তো বাঁধা দেওয়ার সুযোগ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে পুকুরটি রক্ষা করা যেতো।