দল থাকলে আমি থাকব, দল বাঁচলে আমি বাঁচব, তাই বিএনপির জন্য কাজ করছি, ইউপি নির্বাচন মূখ্য নয় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় – শহীদুল ইসলাম বাবলু

নবজাগরণ ডেস্ক ঃ গত ০৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নবজাগরণ পত্রিকায় ” ইউপি নির্বাচনের হাওয়া (০১) সারেংকাঠী ইউনিয়নে বিএনপির একাধিক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করে দল ভারী করার চেষ্টা শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত সংবাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির একটি অংশের আহ্বায়ক মোঃ শহীদুল ইসলাম বাবলু। লিখিত এবং সাক্ষাৎকারে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, ইউনিয়ন বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে আমার নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যাহাতে এলাকার বিএনপি নেতাকর্মী তথা সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখিত ঘটনা ও তথ্যসমূহ আমি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অভিহিত করছি না। সংবাদপত্র ও প্রতিবেদকের প্রতি সন্মান জানিয়ে আমি আমার পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি ব্যাখ্যা প্রদান করছি। যাহা এলাকার জনমনে যে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে তা অবশ্যই দূরীভূত হবে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে শিরোনাম করা হয়েছে “সারেংকাঠী ইউনিয়নে বিএনপির একাধিক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ” এ বিষয়ে শহীদুল ইসলাম বাবলু বলেন, ইউপি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো রোড ম্যাপই দেয় নি। সুতরাং ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গোছানোর প্রশ্নই আসে না। অন্য কেউ অতি উৎসাহী হয়ে ইউপি নির্বাচনের জন্য নিজেকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ঘোষণা দিতে পারে কিন্তু আমি দেই নি। তিনি আরো বলেন আমি ব্যাক্তিগতভাবে ইউনিয়ন বিএনপিকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করছি ইউপি নির্বাচনের জন্য নয়।

আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করে বিএনপির দল ভারী করার মত অবস্থা সারেংকাঠী ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। এ ইউনিয়নে বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দোসররা বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়েছে। কিন্তু গুটিকয়েক কিংকর্তব্যবিমূঢ় মনের অধিকারী ছাড়া সকলেই বিএনপিকে আঁকড়ে ধরে আছে। এ সকল লড়াকু ও ত্যাগী বিএনপি এবং তার অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীদের জন্য সারেংকাঠী ইউনিয়নে বিএনপি শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তিনি আরো বলেন বিএনপি নামধারী যে সকল ইউপি সদস্য বিগত সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে টাকার লোভে মাফিয়া সম্রাট পলাতক সাবেক সাংসদ মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজের নির্বাচনে মাঠে ভুমিকা পালন করছে তাদের তালিকা উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে রয়েছে। তাদের বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নিবে।

শহীদুল ইসলাম বাবলু তার প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেন, এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সালিশ বানিজ্যেসহ অন্যান্য যে সকল অভিযোগ রয়েছে তার লেশমাত্রও আমাকে স্পর্শ করতে পারে নি। তিনি আরও বলেন, কোথাও বিএনপির নাম ভাংগিয়ে কোনো অপরাধ অনিয়ম আমার দৃষ্টিগোচর হলে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। যার ফলে অপকর্ম করতে না পেরে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার ছিলাম এবং থাকব। অন্যায়ের সাথে কোনো আপোষ নয়।

আওয়ামী লীগের দোসর এবং গনহত্যাসহ একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামীদের বিএনপিতে আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সারেংকাঠী ইউনিয়নের এক আওয়ামী লীগের দোসর আমাদের অনুমতি না নিয়ে গত বছর ৭ই নভেম্বর বিপ্লব ও জাতীয় সংহতি দিবসে আমার এবং নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল বেরুনী সৈকত এর ছবির সাথে তার ছবি জুড়ে দিয়ে ফেইসবুকে একটি পোস্ট করে। যা নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঐ ঘটনায় আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার বিরুদ্ধে জুলাই -আগস্টের ছাত্র জনতা হতাহত করার ঘটনায় ঢাকা ও তার আশেপাশের থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও নেছারাবাদ থানার সে দুটি মামলার এফ আই আর ভুক্ত আসামি। বিতর্ক এড়াতে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবাদলিপি প্রেরন করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, উক্ত ব্যাক্তি আমাদের দলের কেউ নয় এবং আমি তাকে চিনি না। তার পরও ইউনিয়ন বিএনপির কেউ যদি তার ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গনহত্যা মামলার আসামীকে দলে স্থান দিয়ে দলকে বিতর্কিত করতে চায় এর দায় দায়িত্ব আশ্রয় দাতার উপর বর্তাবে। এর সাথে সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির কোনো সম্পর্ক নাই। তিনি বলেন যারা গনহত্যা মামলার আসামি তারা কখনোই বিএনপির কেউ নয়।

দলীয় নির্দেশ অমান্য করে মোটরসাইকেল শোডাউনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি দেশের সরকারে নেই। উপরন্তু সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপি চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। সেখানে দলের হয়ে মোটরসাইকেল শোডাউন দলীয় শৃঙ্খলা ভংগের সামিল। সুতরাং এই শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।

তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ১৯৮০ দশকে ছাত্র দলের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তারপর যুবদল নেতা, ইউনিয়ন বিএনপি কমিটিতে স্থান পাওয়া, উপজেলা যুব কমিটির পদ অর্জন সবকিছুই সাংগঠনিক দক্ষতা ও দলীয় সিদ্ধান্তে অর্জন করেছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হামলা মামলার শিকার হয়েছি। আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যেতে হয়েছে। নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি। কিন্তু বিএনপির মুলধারার রাজনীতি থেকে কখনো সরে যায় নি।

আগামী ইউপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ার আশা থাকাটা অমূলক কিছু নয়। আমি ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট যুদ্ধে লড়াই করেছি। ২০১৬ আমাকে প্রথমে দলীয় প্রতীক ” ধানের শীষ ” বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্তে তা পরিবর্তন করে সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম গোলাম মোস্তফা সরদারকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। আমি দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল করিনি। ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করার জন্য দলীয় হাইকমান্ড থেকে স্থানীয় নেতা কর্মীদের নির্দশ দেয়া হলে ঐ নির্দেশ মেনে আমি উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকি। কিন্তু দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে আওয়ামী লীগের সাথে তাল মিলিয়ে সারেংকাঠী ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা ঐ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের তাঁবেদারি করা ঐ সকল বিতর্কিত নেতারাও এখন বিএনপি হিসেবে নিজেকে জাহির করতে ব্যাস্ত। তিনি উল্লেখ করেন ২০০৩ সালেই সারেংকাঠী থেকে একবারই মাত্র বিএনপি সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল। এর পূর্ব এবং পরে কখনোই বিএনপি পন্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় নি। তাই দলীয়ভাবে শক্তি অর্জন করে জনগণের আস্হা অর্জন করে স্হানীয় সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ পদটি বিএনপির পুনরুদ্ধার করা উচিৎ।

সর্বশেষ তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী কে হবেন তা নির্ধারণ করবে দলীয় হাইকমান্ড। তাই সর্বাগ্রে আমাদের দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত রাখতে হবে। তাই দল বাঁচলে আমি বাঁচব। দল থাকলে আমি থাকব। তাই সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করে আমি দলকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।