মোস্তাফিজুর রহমান : মাদক সেবন করে গৃহকর্মীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে আলোচিত চিত্রনায়িকা শামসুন নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ভূক্তভোগি নারী। এ মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে পরীমনির সঙ্গে একই ফ্লাটে বসবাসরত সৌরভ (২৮) নামে এক ব্যক্তিকে।
মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী গৃহকর্মী পিংকি আক্তার। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ৮ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসিদুস জামান নিশান এ তথ্য নিশ্চিত করেন গণমাধ্যম কর্মীদের।
জানা গেছে, মামলার বাদী ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার (২৪) নেত্রকোনা জেলা সদরের মৌগাতী ইউনিয়নের ফাদুলিয়া গ্রামের মোঃ মোজাম্মেলের হোসেন এর মেয়ে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করে ওই ভূক্তভোগি অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের মার্চে অভিযোগকারী পিংকি আসামিদ্বয়ের বাসায় কাদের এজেন্সি নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহকর্মীর চাকরিতে যোগ দেন। শর্ত থাকে একটি বাচ্চাকে দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও নিয়োগের পরে দুটি বাচ্চার দায়িত্ব পালন করতে হতো। এছাড়াও বাদীকে দিনে ও রাতে উভয় সময় বাসার রান্নার কাজ করতে হতো। তবুও বাদীর চাকরি একান্ত প্রয়োজন হওয়ায় পিংকি সব কিছু নীরবে সহ্য করে নিরলস ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তবে চলতি বছরের ২ এপ্রিল দুপুর ১টায় আসামি পরীমনি তার মেকআপ রুম হতে মাদক গ্রহণ করে বাচ্চার রুমে এসে বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। বাদী গালাগাল কেন করছেন জানতে চাইলে পরীমনি বলে ‘তুই আমার বাচ্চার জন্য দুধ কেন তৈরি করছিস, এখন ওকে সলিড খাবার দিবি’। বাদী বলেন, ‘বাচ্চার খাওয়ার রুটিন অনুসারে এখন দুধ খাওয়ানোর কথা, তাই আমি দুধ তৈরি করেছি’।
এ সময় পরীমনি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীর মাথায়, মুখে ও চোখে এলোপাতাড়িভাবে চড়-থাপ্পড় মেরে আহত করেন। একপর্যায়ে বাদী পিংকি পরীমনির মারধরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর বাদী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য পিংকি তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরীমনিকে অনুরোধ করতে থাকেন। ঘটনার সময় ২নং আসামি সৌরভ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আসামিরা বাদীর কোনো কথা শোনেন নাই। আসামি সৌরভ পিংকিকে আরও নির্যাতন করার জন্য পরীমনিকে উৎসাহিত করতে থাকেন এবং বাদীকে বাসার বাইরে যাওয়া থেকে বিরত করেন।
পরে ভুক্তভোগী পিংকি ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে যান। পরে পিংকি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় পিংকি আক্তার গত ৪ এপ্রিল ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে এটির কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩/৩২৪/৩০৭/৫০৬/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
