বুলেটের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতা গনঅভ্যুত্থানের যোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম, মামলা হলেও গ্রেফতার হচ্ছে না আসামীরা

কোর্ট রিপোর্টারঃ গত বছর জুলাই – আগস্টে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারীর যোদ্ধা ছিলেন আরবী বিশব্বিদ্যালয়ের ছাত্র মুজাহিদুল ইসলাম। আন্দোলন যখন তুংগে তখন ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখ সকাল থেকেই রাজধানীর যাত্রবাড়ি থানা এলাকায় স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের একদফা দাবিতে স্হানীয় জনসাধারণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। ঐ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম ছাত্র জনতার সাথে সরাসরি অংশগ্রহন করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সহায়তায় স্বৈরচারের দোসর আওয়ামী লীগ ও তাদের অংগ সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষন করে। ইহাতে ছাত্র জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার দিন দুপুর আনুমানিক ১২.০০ – ২.০০ ঘটিকায় যাত্রাবাড়ী থানা ঘেড়াও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে পুলিশ ও স্বৈরাচারী আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভরত ছাত্র জনতার উপর গুলি চালায়। গুলিবর্ষণে অসংখ্য নিরিহ ছাত্র জনতা হতাহত হয়। ঐ সময় মুজাহিদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। মারাত্নক আহত অবস্থায় স্হানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। গুলি তার দেহের বাম পাশে সামনে থেকে প্রবেশ করে পিছন থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে অপারেশন করে তার প্লীহা কেটে বাদ দেয়া হয় এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে গত বছরের ১৪ অক্টোবর যাত্রাবাড়ি থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা কতৃপক্ষ মামলা গ্রহন করতে অনীহা প্রকাশ করে। অবশেষে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মুজাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি নালিশী আবেদন দাখিল করেন। যার সি.আর. মামলা নং ৭৯৮/২০২৪ (যাত্রাবাড়ী)। ধারা : ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬/(২)৩৪ দন্ডবিধি ১৮৬০। বিজ্ঞ আদালত নালিশি দরখাস্ত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। উক্ত মামলায় মোট ৫৭ জন আসামির নামোল্লেখ করা হয়। আরও ২০০/২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এজাহার নামীয় আসামিদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮ জনকে হুকুমের আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা সশস্ত্র অবস্থায় ছাত্র জনতা হতাহতের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে বলে ভিকটিম মুজাহিদুল ইসলাম জানান। হুকুমের আসামিদের মধ্যে ৬ নং আসামি সাবেক আই জি পি আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং ৮ নং আসামি যাত্রাবাড়ি থানার সাবেক ওসি মোঃ আবুল হাসান অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। হুকুম দাতা অন্য আসামি শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওবায়দুল কাদের, হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে।

মুজাহিদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালত থেকে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেয়ার পর কয়েকটি তারিখ অতিবাহিত হলেও তদন্ত সংস্থা এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ইতিমধ্যে একাধিক বার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষীও নিয়েছেন। তারপরও তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বিলম্ব হওয়ার কারণ বুঝতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, যে সকল দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে তাদেরকে গ্রেফতার করতে আইনের কিছু জটিলতা রয়েছে। কিন্তু যেসব দেশের মধ্যেই রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করতে এখন তো কোনো আইনে বাধা নাই। তিনি আরো বলেন ঐ সময় যারা হত্যাযজ্ঞে অংশ গ্রহন করেছে তারা মামলায় জড়িয়ে ঢাকার ঠিকানা পরিবর্তন করে দেশের অন্যত্র গিয়ে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছে। এছাড়াও অনেকে তাদের গ্রামের স্হায়ী ঠিকানায় গিয়ে বসবাস করছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন শান্তিতে আছেন। তাদের হত্যাকারীদের চোখের সামনে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে দেখতে হচ্ছে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা যারা মরে বেঁচে আছি তাদের কষ্ট দুটি। একটি হলো শরীরের যন্ত্রনা আর অন্যটি মানষিক কষ্ট। আমাদের হত্যা করার চেষ্টা যারা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও বীরদর্পে আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই প্রশাসনের কাছে তার দাবি, যারা আমাকে অর্ধমৃত করে রেখেছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হউক