কে.এ.সাদাত : পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার ভাগ্যে সংসদীয় আসনে কখনোই স্হায়ী ঠিকানা জোটেনি। এখনো এ উপজেলা নিয়ে চলছে টানাহেঁচড়া। আর এ অবস্থার জন্য নেছারাবাদ উপজেলা রাজনীতিবিদদের দায়ী করছেন সমূদয়কাঠীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম সাইদ। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন বর্তমান নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব তিন ভাগে বিভক্ত। তারা নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়া ছুড়িতে ব্যাস্ত।
০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনে নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা কর্মী আত্মগোপনে চলে যায়। সাথে সাথে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুরো উপজেলা ব্যাপী আধিপত্য বিস্তার করে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় সে আধিপত্যে ভাটা পড়েছে। আর ত্রী-বিভক্ত উপজেলা নেতৃবৃন্দ রয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর ০২ আসন থেকে নিজের মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টায়। কিন্তু বর্তমান পিরোজপুর ০২ আসনের সাথে আগামী সংসদ নির্বাচনে নেসারাবাদ উপজেলা সংযুক্ত থাকবে কিনা তা নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কোনোই মাথাব্যাথা নাই।
এ প্রসংগে নাজমুল ইসলাম সাইদ বলেন, বর্তমান পিরোজপুর ০২ আসনটি নেসারাবাদ, কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। কিন্তু এ আসনটির সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা পড়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এ আসনটির বর্তমান সীমানা বহাল থাকলে নেছারাবাদ উপজেলা থেকে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়া সহজ হত। তিনি বলেন নেছারাবাদ উপজেলা যদি পিরোজপুর ০১ আসনের সাথে সংযুক্ত হয় তাহলে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন পিরোজপুর সদর থেকে।
সেক্ষেত্রে ১,৯৫,০০০ ভোটার অধ্যুসিত এ উপজেলার জনসাধারণকে বরাবরের মতোই অন্য উপজেলা থেকে নির্বাচিত সাংসদের লেজুড়বৃত্তি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভান্ডারিয়া উপজেলা থেকেই প্রার্থী রয়েছে কয়েকজন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী ও এমপি জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মেদ সোহেল মঞ্জুর (সুমন), বিএনপি নেতা মাহমুদ হোসাইন, বিএনপি দলীয় কেন্দ্রীয় চিকিৎসক নেতা ডাঃ রফিকুল ইসলাম লাবু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমূখ। এ ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী শামীম সাইদির বাড়িও রয়েছে পাশের উপজেলা জিয়া নগরে। নেছারাবাদ উপজেলার জনসংখ্যা ও আয়তন নিয়ে অন্য উপজেলা থেকে মনোনয়ন প্রার্থী সকলেরই রয়েছে ভীতি। তাই এ উপজেলাকে পরিত্যাগ করে জিয়া নগর উপজেলাকে সাথে নিয়ে সীমানা পুনঃ নির্ধারণে কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও জিয়া নগর উপজেলা একাট্টা হচ্ছে।
নাজমুল ইসলাম সাইদ আরো বলেন, নেছারাবাদের নেতারা নিজেরা এম পি না হয়ে অন্য উপজেলা থেকে নির্বাচিত এমপির পিছনে ঘুড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তারা নেতৃত্বের আড়ালে নগদ ব্যাবসায় বেশি উৎসাহী। তাই নেছারাবাদ উপজেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মতো নেতা কখনোই তৈরি হয়নি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নেছারাবাদ উপজেলার সাথে বরিশাল জেলার বানাড়ীপাড়া উপজেলাকে মিশ্রন করে সংসদীয় আসন ছিল। তখনও বানাড়ীপাড়া উপজেলা থেকেই বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এমপি হয়েছেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেছারাবাদ, কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর ০২ আসন গঠিত হয়। তখন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১/১১ সরকারের মামলায় জড়িয়ে দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যক্রমে নেছারাবাদ উপজেলার মো: শাহ আলম এমপি নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেছারাবাদ উপজেলাকে পিরোজপুর ০১ আসনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এজন্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কলকাঠি নেড়েছেন বলে নেছারাবাদ উপজেলা নেতৃবৃন্দ মনে করেন। কিন্তু মূল বিষয় হলো নেছারাবাদ উপজেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়নি। দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুর উপজেলা থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেছারাবাদ উপজেলা আবারও পিরোজপুর ০২ আসনের সাথে সংযুক্ত হয়। ঐ নির্বাচনে দুজন প্রার্থীই ছিলো ভান্ডারিয়া উপজেলা থেকে।
জনাব নাজমুল ইসলাম সাইদ বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে নেছারাবাদ উপজেলা যদি পিরোজপুর ০১ আসনের সাথে সংযুক্ত হয় তাহলে এ উপজেলা থেকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংসদীয় আসন বাড়ানোর জন্য যে দাবি তুলছে তা যদি বাস্তবায়িত হয় তবে নেছারাবাদ উপজেলায় একক সংসদীয় আসন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নেছারাবাদ বিএনপি যদি আসন পূনর্বিন্যাস ঠেকানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এ উপজেলা থেকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার আর কোনোই সম্ভাবনা নাই।
তাই এখই নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপিকে পদক্ষেপ নিতে হবে।