আয়রন ডোমের পতন: ইরান যে পাঠ দিল দম্ভচূর্ণ ইসরায়েলকে

বিশেষ উপসম্পাদকীয়-
নবজাগরণ রিপোর্ট-মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :

ইসরায়েলের অহংকার-তার বহু বিজ্ঞাপিত “আয়রন ডোম”-যা এতদিন পশ্চিমা বিশ্বে অজেয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতীক ছিল, সেই প্রতিরক্ষাই এবার এক জোড়া মিসাইল ও ড্রোনের আঘাতে ধসে পড়লো। ‘ইয়া আলী ইবনে আবি তালিব’ কোডনামে ইরানের ‘ট্রু প্রমিজ-৩’ অভিযানে কার্যত হাঁটু গেড়েছে ইসরায়েলি সামরিক তন্ত্র।

তেহরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) যেভাবে যুগপৎ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার সমন্বয় ঘটিয়েছে, তা আধুনিক যুদ্ধকৌশলের নতুন মডেল হয়ে উঠেছে। হাইফা, তেল আবিব, ও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল এবার কেবল আগুনের নগর নয়-সামরিক ও বেসামরিক কাঠামোতে সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি।

আক্রমণের কৌশল: অস্ত্র ও অব্যর্থতা

‘ইমাদ’, ‘কাদর’ ও ‘খায়বার শেকান’ – এই তিন ক্ষেপণাস্ত্র শুধু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার নিদর্শন নয়, বরং যুদ্ধশিল্পে মুসলিম বিশ্ব যে পশ্চিমের বিরুদ্ধে পাল্টা দাঁড়াতে সক্ষম-তার প্রমাণ।

ইমাদ ক্ষেপণাস্ত্র: ২ হাজার কিলোমিটারের পাল্লা ও লক্ষ্যচ্যুতি-প্রতিরোধী নিখুঁত নেভিগেশন সিস্টেমে তেল স্থাপনায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।

কাদর ক্ষেপণাস্ত্র: ইরানের তরল জ্বালানিচালিত অস্ত্র যা লজিস্টিক ও জ্বালানি অবকাঠামো ভেঙে ফেলে।

খায়বার শেকান: স্টেলথ প্রযুক্তি ও ত্রিকোণ ওয়ারহেডসহ ডেভিডস স্লিং ও আয়রন ডোমকে কার্যত অকার্যকর করে দেয়।

ফলাফল: ধ্বংসস্তূপে ইসরায়েল, উত্তাল জনগণ জীবন যায় নেতানিয়াহু’র

হাইফা থেকে তেল আবিব-সবখানে বিস্ফোরণ। মৃতের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়েছে, আহত শতাধিক। বিদ্যুৎহীনতা, জ্বালানি সংকট, ও বিমানঘাঁটির ধ্বংস-ইসরায়েল যেন যুদ্ধ নয়, কেয়ামতের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।

নেতানিয়াহুর যুদ্ধবাজ ও উগ্র ডানপন্থী নীতির বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ এবার অগ্নিস্ফুলিঙ্গে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভে রাস্তায় নামছে ইহুদি তরুণরাও, যারা গণহারে মিলিটারিতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। লিকুদ পার্টির ভেতরেও বিভাজন শুরু হয়েছে। একে তো সামরিক পরাজয়, তার উপর জনঅসন্তোষ-নেতানিয়াহুর সরকার এখন রাজনীতির দোলাচলে টিকে থাকার জন্য ছটফট করছে।

পাকিস্তান-ইরান-মুসলিম ঐক্যর নতুন অধ্যায়?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি এসেছে ইসলামাবাদ থেকে-পাকিস্তান পারমাণবিক নীতির পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। ইসরায়েল যদি ‘নিউক্লিয়ার ফার্স্ট স্ট্রাইক’-এর মত কল্পনাও করে, তাহলে পাকিস্তানও ‘ফুল স্কেল রেসপন্স’ দেবে-এমনই হুঁশিয়ারি এসেছে সেনা সদর দপ্তর থেকে।

গাজার ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি এবার তেল আবিবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে নাটকীয় পরিবর্তন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমেরিকা-ইসরায়েলের একতরফা সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব যে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে যাচ্ছে, এটি তার সূচনা মাত্র।

মুসলমানদের নতুন দিগন্তের সূচনা

এই হামলা কেবল একটি সামরিক পরাজয় নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিপ্লব। পশ্চিমা প্রপাগান্ডার যাদুকাঠি ভেঙে পড়েছে বাস্তবতার ধাক্কায়। ইরানের এই প্রত্যাঘাত প্রমাণ করে দিয়েছে-দখলদার রাষ্ট্র যত শক্তিধরই হোক, সত্য ও ন্যায়ের শক্তির কাছে সে অসহায়।

ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ আজ ভেঙে গেছে, কিন্তু মুসলিম উম্মাহর আত্মবিশ্বাস আবারও গড়ে উঠেছে-এই হলো “ট্রু প্রমিজ-৩”-এর আসল বিজয়।