মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বিশ্বজুড়ে তোলপাড়-ইরানের গোপন পারমাণবিক ঘাঁটিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে ভয়ঙ্কর ‘ব্যাঙ্কার বাস্টার’। ভূমির গভীরে বিস্ফোরিত এই বোমা তৈরি হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত বাঙ্কার ধ্বংস করতে। বলা হয়, একেকটি বোমার ওজন প্রায় ১৩,৬০০ কেজি, ধ্বংসক্ষমতা প্রায় শহর ধ্বংস করার সমতুল্য। এই বোমা ইরানে পড়েছে ঠিকই, বিশাল গর্ত সৃষ্টি করেছে ঠিকই-কিন্তু অবাক করা সত্য হলো: ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা আজও অক্ষত! অটুট! অদম্য!
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো, পশ্চিমাদের প্রযুক্তি আর আগ্রাসনের দম্ভ যতই প্রবল হোক, ইরানের প্রতিরক্ষা ও কৌশলের সামনে তা শিশুতোষ। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি-সম্মিলিতভাবে একের পর এক মিথ্যা তথ্য, ভুয়া স্যাটেলাইট ছবি, আর প্রপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। “আমরা ধ্বংস করেছি ইরানের গোপন স্থাপনা”-এই মিথ্যা প্রচার করে তারা পুরো বিশ্বকে বোঝাতে চেয়েছিল, “দেখো, আমরাই শ্রেষ্ঠ, আমরাই অদ্বিতীয়!”
কিন্তু বাস্তব বলছে ভিন্ন কথা। ইরান এই আঘাতের ভেতর থেকেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু প্রতিরোধ নয়, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতায় ইরান বিশ্বের সামনে এক নতুন ইতিহাস গড়েছে। তারা প্রমাণ করেছে-তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল প্রতিরক্ষা নয়, আত্মমর্যাদার প্রতীক।
অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছে ইরান
ইরানের প্রতিটি বাঙ্কার, গবেষণা কেন্দ্র এবং প্রতিরক্ষা কাঠামো এতটাই সুচিন্তিতভাবে নির্মিত যে বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী অস্ত্র দিয়েও তা ধ্বংস করা যায়নি। তারা জানতো, ‘মুক্তি’ আর ‘সার্বভৌমত্ব’-এর পথ রক্ত, ঘাম আর প্রযুক্তির সাহসে রচিত হয়। এই কৌশলগত প্রস্তুতির মূল পুরুষ হচ্ছেন ইসলামী বিপ্লবের রূপকার আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং তার উত্তরসূরিরা। তাঁর দর্শন ছিল-“প্রতিরক্ষা নয়, প্রতিরোধই হোক অস্ত্র”।
পশ্চিমা বিশ্ব কি ভুলে যাচ্ছে ইতিহাস?
পশ্চিমা শক্তি ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সিরিয়াকে ধ্বংস করেছে একই ছকে-ভুয়া অভিযোগ, মানবাধিকার রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নাম করে আগ্রাসন। কিন্তু ইরান সেই একই ফাঁদে পা দেয়নি। বরং সে নিজের কৌশল, প্রযুক্তি, এবং সর্বোপরি জনগণের অটল ঐক্যে ভর করে আগ্রাসনকারীদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের গৌরব
ইরান আজ শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, এটি একটি প্রতিরোধের নাম। একটি দুঃসাহসিক ভাবাদর্শের নাম। আয়াতুল্লাহ খোমেনির বিপ্লবী চেতনা আজ মুসলিম বিশ্বের মুক্তির আলোকবর্তিকা। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ইসলামী প্রজাতন্ত্র পশ্চিমা আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি প্রমাণ করেছেন-পশ্চিমা আধিপত্যের নিচে মাথা নত করা ছাড়াও রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে, স্বাধীন থাকতে পারে, সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে।
আজীবনের একতরফা খেলার দিন শেষ!
আমেরিকা-ইসরায়েলের একতরফা ‘খেলা’ আর চলবে না। ইরান দেখিয়েছে, তারা শুধু প্রতিরোধই করতে জানে না, পাল্টা আঘাত করতেও প্রস্তুত। তারা কূটনীতি, প্রযুক্তি ও আস্থার ত্রিভুজে দাঁড়িয়ে তৈরি করেছে এক নতুন পরাশক্তির প্রতিরূপ। একতরফা আঘাত করে, মিডিয়ায় মিথ্যা বলে, আর জনগণকে ভয় দেখিয়ে আজকের দুনিয়া শাসন করা যাবে না। এই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে ইরান, ব্যাঙ্কার বাস্টারের বিস্ফোরণের চেয়েও জোরালো শব্দে।
একতরফা নীতির খেলা চলবে না বিশ্বে;অন্যায়ের পরিণতি ভোগ করতে হবে ভয়ংকর ভাবে ;ইরান থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে জুলুমকারীদের-মুনাফেক মুসলমানদের:
ইরানের বাঙ্কার অক্ষত রয়েছে, কারণ ইরানের ভিত মজবুত। মজবুত তাদের নেতৃত্ব, ঐক্য, বিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা। পশ্চিমা মিথ্যাচার আজ চূর্ণবিচূর্ণ, আর ইরান আজ প্রমাণ করে দিয়েছে-বিপ্লব কখনো মরেনা, দমে না, হারেও না।
শেয়ার করুন। মন্তব্য দিন। বিতর্ক ছড়ান। সত্যের পক্ষে দাঁড়ান।
লেখক:সম্পাদক-নবজাগরণ।