ইসরায়েলের পতনের মুখে ইতিহাসের মোড়-যুদ্ধ নয়, এটি আত্মসমর্পণ!

নবজাগরণ ডেস্ক :
একসময় যারা নিজেদের ‘অজেয়’ বলে প্রচার করতো, যারা মনে করত মধ্যপ্রাচ্য তাদের করতলে বন্দী, আজ তারাই ইতিহাসের সবচেয়ে গভীর সংকটে। ইসরায়েল-একটি পরাশক্তির মিথ-আজ কার্যত উন্মোচিত হয়ে গেছে। ইরানের সার্জিকাল রকেট আঘাত, হিজবুল্লাহর সীমান্ত লাঞ্চিং, হুথিদের ড্রোন অভিযান, হামাসের তেলআবিবমুখী বার্তা-সবকিছু একত্রে ইসরায়েলের অস্তিত্বকে নি:শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলেছে।

এটি আর কেবল একটি যুদ্ধ নয়। এটি একটি ন্যারেটিভের পতন, একাধিপত্যের ভাঙন, এবং একটি পরাজিত রাষ্ট্রের নিঃশব্দ আত্মসমর্পণ।

Iron Dome: গর্ব থেকে গর্তে
যে “Iron Dome” ছিল ইসরায়েলের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, সেটিই আজ পরিণত হয়েছে ছিদ্রপথে ভর্তি ভাঙা ছাতা।

এক সময় বলতো, ৯০% রকেট থামিয়ে দেয়।
এখন তা নামছে ৬০% এর নিচে।
ড্রোন, মিসাইল, সাইবার স্ট্রাইক-সব পেরিয়ে ঢুকছে তেলআবিব, হাইফা, আশকেলোনে।

ইরানের আঘাতের শৈল্পিক নিখুঁততা পুরো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কাঠামোকে পরিণত করেছে দেখার মতো ধ্বংসস্তূপে।

নেতানিয়াহুর নিঃশব্দ বিদায়: Silence is the new scream

মি. সিকিউরিটি-বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যিনি এক সময় গর্জাতেন “We will destroy them!”
আজ তার সেই মুখ নিঃশব্দ।
না মিডিয়ার সামনে, না মন্ত্রিসভার মধ্যে-কোথাও নেই তার উপস্থিতি।

এটা কি কৌশলগত চুপ থাকা? না কি এক পরাজিত সম্রাটের শেষকালীন নিরবতা?

ইতিহাসে বহু রাজা যুদ্ধক্ষেত্রে হার মানলেও, তাদের মুখে অহংকার থাকে। কিন্তু নেতানিয়াহু যেন বুঝে গেছেন-এ লড়াই আর জিতবার নয়।

মধ্যপ্রাচ্যে এখন যুদ্ধ নয়, বিপ্লব চলছে

এই যে একযোগে হিজবুল্লাহ, হামাস, হুথি ও ইরান একসঙ্গে আক্রমণ চালাচ্ছে-এটা কেবল সামরিক কৌশল নয়। এটা একটি যৌথ প্রতিরোধ ফ্রন্ট। একটি ঐতিহাসিক প্রতিশোধপর্ব, দীর্ঘকাল ধরে জমা হওয়া ক্ষোভের বিস্ফোরণ।

এ যুদ্ধের পেছনে রয়েছে-

ইসরায়েলের একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
ফিলিস্তিনি নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ
ইরানের ‘অপরাজেয়’ অবস্থান প্রতিষ্ঠার সংকল্প
পশ্চিমা বিশ্ব তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষপাতদুষ্ট নীতির বিরুদ্ধাচরণ

Narrative বদলে যাচ্ছে: এই লড়াই মনস্তত্ত্বেরও

ইসরায়েল এতদিন লড়াই করেছে অস্ত্র দিয়ে, কিন্তু এবার ইরান লড়ছে “মানসিক যুদ্ধ” দিয়ে।

ইরান বলছে-

> “আমরাও পারি। আর তোমরা অজেয় নও।”

আর সেই বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে আরব বিশ্ব, মুসলিম জনগণ, এমনকি পশ্চিমা মানুষের মনেও। ট্রাম্প পর্যন্ত বলছেন “Ceasefire now”!

মজার ব্যাপার, এই ট্রাম্পই এক সময় বলেছিলেন-“Only force can stop Iran.”

এই যুদ্ধ বিজয়ের নয়, পতনের ভাষা

যে দেশ যুদ্ধবিরতির কথা মুখে আনে, তার চোখে বিজয়ের ভাষা থাকে না। ইসরায়েল এখন সেই ভাষা হারিয়েছে। তারা যুদ্ধ চাইছে না, তারা রক্ষা চাইছে।
“Ceasefire” এখন একরকম SOS।

আর ইতিহাস বলে, যার মুখে SOS আসে-সে যুদ্ধে পরাজিত।

ইসরায়েলের “hegemonic myth” ভেঙে গেছে

ইসরায়েল মানে ছিল “মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটি”, “অপার শক্তির প্রতীক”।
আজ সেই দেশটি-

মাটিতে মিসাইল হজম করছে
আকাশে ড্রোন ঠেকাতে পারছে না
সাইবার ঘাঁটিতে আঘাত পাচ্ছে
প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলছেন না
বন্ধুরাও চুপ

এটা আর শুধুই সামরিক ব্যর্থতা নয়, এটি তাদের অস্তিত্বের উপর চ্যালেঞ্জ।

কে নিয়ন্ত্রণে? উত্তর পরিষ্কার-তেলআবিব নয়

ইতিহাস এই প্রথম দেখছে, ইসরায়েল নয়, বরং প্রতিরোধ শক্তিগুলো এখন নিয়ন্ত্রণে।
তেলআবিবের ছায়া লম্বা হলেও আজ তা বিস্বাদ অন্ধকার।
আর ইরান, হিজবুল্লাহ, হামাস, হুথিদের মতো শক্তিরা বলছে—

> “আমরা শোষণের চূড়া নয়, প্রতিরোধের ভিত্তি গড়বো।”

মধ্যপ্রাচ্য আজ নতুন পথে হাঁটছে। একচেটিয়া আধিপত্য নয়, সম্মিলিত প্রতিরোধের দিকে। এই লড়াইয়ে কে জিতবে জানি না, তবে হারার নাম এখন একটাই-ইসরায়েল।

নবজাগরণ উপসম্পাদকীয় বিভাগ