ইরানের আগুনে কাঁপছে আরব রাজতন্ত্র:মুসলিম জাগরণের নাকি নতুন সূচনা?

নবজাগরণ আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্য আবার উত্তাল। তবে এই উত্তালতা এবার আর কেবল তেলের দাম নিয়ে নয়, বা কূটনৈতিক নাটক নিয়ে নয়-এবার উত্তালতার কেন্দ্রবিন্দু ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ। এবং এই যুদ্ধ শুধুই দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে নয়, এটি গোটা মুসলিম বিশ্বের আত্মার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
আর তাই, ইরানের বিজয়ের সম্ভাবনায় যখন সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে আশার ঢেউ, তখন আরব রাজতন্ত্রের প্রাসাদে নেমেছে আতঙ্কের ছায়া।

যুদ্ধ নয়, এটি এক শতাব্দীর জবাব
১৯১৬ সালে যখন সাইক্‌স-পিকো চুক্তি দিয়ে আরবভূমিকে ছিন্নভিন্ন করে ব্রিটেন-ফ্রান্স নিজেদের মধ্যকার শেয়ারে ভাগ করে নেয়, তখন থেকেই মুসলিম বিশ্ব পরিণত হয় এক টুকরো টুকরো”জমি-মালিকানার” খণ্ডচিত্রে। সেই বিভক্তির ফলেই সৃষ্টি হয় ইসরায়েল নামের একটি দখলদার রাষ্ট্র।
আজ ইরান সেই শত বছরের দুঃসহ ইতিহাসের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বলছে-“আমরাই প্রতিশোধের আগুন হবো।”আর সেই আগুনেই কাঁপছে সৌদি, আমিরাত,কাতার,বাহরাইনসহ আরব রাজতন্ত্র।

কেন কাঁপছে আরব রাজতন্ত্র?
কারণ তারা জানে-ইরান যদি এই যুদ্ধজয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে শুধু ইসরায়েল নয়,তাদের সিংহাসনের বৈধতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে।
এক শতাব্দী ধরে পশ্চিমা আগ্রাসন আর তেলের বাণিজ্যে গড়ে ওঠা এই রাজতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো-কোনো গণভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নেই।
তারা চায়নি ফিলিস্তিন মুক্ত হোক, তারা ভয় পেয়েছে ‘সাহস’ শব্দটিকে।
তারা সৌদির পেট্রোডলার দিয়ে ইসরায়েলের গোপন মিত্র হয়ে উঠেছে।
আজ যখন ইরান যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে জবাব দেয়-তখন একে শুধু যুদ্ধ বলা যাবে না, একে বলা উচিত”অভ্যন্তরীণ মুসলিম জাগরণের সূচনা।”

ইরানের ‘ভূমিকম্প’শুধু তেল নয়, তখতের দিকেও
ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যদি পশ্চিমা থাবাকে ঠেকাতে পারে, তবে আগামীতে এই মডেল অফ প্রতিরোধ রফতানি হবে ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া,এমনকি জর্ডান বা মিসরের ভেতরও।
এরপর আরব রাজতন্ত্রের নাগরিকরা জিজ্ঞেস করবে-
কেন আমরা ভোট দিতে পারি না?
কেন আমাদের রাষ্ট্রীয় অর্থে আমেরিকার অস্ত্র কেনা হয়?
কেন ফিলিস্তিন আজও দখলিত?
ইরান এই প্রশ্নগুলোকে শুধু শত্রুদের জন্য নয়, রাজা-প্রিন্সদের জন্যও ভয়ের কারণ করে তুলছে।
মুসলিম বিশ্বের আশা: ইরান কি সত্যিই পারবে?

এই প্রশ্ন খুব যৌক্তিক। কারণ মুসলিম বিশ্ব বহুবার প্রতারিত হয়েছে-ইরাক, সিরিয়া, আরব বসন্ত, সব কিছুর পর মনে হয়েছে বোধহয় কিছুই বদলায় না।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন-

ইরান যুদ্ধ করছে আমেরিকার হুমকি অগ্রাহ্য করে।
তারা প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়েছে।
তারা প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সবচেয়ে বড় কথা, তারা প্রমাণ করেছে-ইসরায়েল পরাজয়যোগ্য।

এই বিজয় কাদের?
ইরান একা জিতছে না। প্রতিরোধের বিজয় মানে মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া।
আজ গাজায় যদি এক শিশু বাঁচে, লেবাননে যদি এক যুবক অস্ত্র তুলে নেয়, ইয়েমেনের আকাশে যদি সাহস উড়তে থাকে-তবে তা ইরানের কূটনৈতিক বিজয় নয়, এটা গোটা উম্মাহর আত্মার পুনর্জন্ম।

যুদ্ধই শেষ কথা নয়, বিপ্লবই চূড়ান্ত উত্তর!
আমরা জানি, ইরানকেও নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়-দেশের ভেতরে গণতন্ত্রের সংকট,ধর্মীয় কর্তৃত্ববাদ ইত্যাদি। কিন্তু এখন প্রশ্ন তা নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে-কে এই মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বের পক্ষে সত্যিকারের দাঁড়িয়েছে?
আর উত্তরটা যদি ইরান হয়,তাহলে আমাদের কর্তব্য-এই সাহসকে ব্যবহার করে নিজ নিজ দেশে পরিবর্তনের দাবি তোলা। ইরান যদি বিজয় অর্জন করে, তবে সেটা হবে শুধু যুদ্ধের না,সেটা হবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রবাদ ও দখলদারিত্বের শতবর্ষী দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি।