গেরামের তারা চাচার খোলা চিঠি – পত্র নং ২

গেরামের তারা চাচার খোলা চিঠি – পত্র নং ২
প্রাপক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রেরক: তারা চাচা, গেরামের খোলা মন ও গরিবের পক্ষ হইতে

চাচাগো,
আসসালামু ওলাইকুম।
এই চিঠি আমি আর কইর‌্যা চুপ থাকতে পারলাম না। আপনারে আগের চিঠি লিখছি বটে, ভাবছিলাম বেচার‌্যা আপনি একা একা বড় দুঃসাধ্য লড়াইতে নামছেন-তাই একটু সাহস দেই। কিন্তু চাচা, গেরামের হাওয়া বুইঝা লন-এখন সাহস না, রাগ উথাইতেছে!

চাচা,
৩০টা ছেলেমাইয়া আগুনে পুইড়া কয়লা হইয়া গেল,আপনি একটা লাইনও বললেন না। বুলেট থাইকা বাঁচলেও আমরা এই রাষ্ট্রের অবহেলা থাইকা বাঁচতে পারলাম না।
এইবারও তাড়াতাড়ি দাফন কইরা রাষ্ট্র পালাইল, আপনি চুপ।
আপনার মুখের নীরবতা অনেক কিছু বলে, কিন্তু আমরা শুনতে চাই-আপনার আওয়াজ।

আর চাচা,
ফেল কইরা গেল সাড়ে ছয় লাখ পোলাপাইন। ওদের কাঁধে কি খালি ব্যাগ? না, ওদের কাঁধে একেকটা বাংলাদেশ বইসা আছে।
কিন্তু শিক্ষা নামক একখান বড়লোকী যন্ত্র ওদের থাইকা বাংলাদেশ কেড়ে নিছে।

চাচা,
এই শিক্ষা উপদেষ্টা আর সচিবগো মুখের ভাষা আমরা বুঝি না। আমরা শুধু দেখি-একটা একটা কইরা দুঃস্বপ্ন ভাঙতেছে।
একজন ব্যর্থ শিক্ষাপ্রণালীতে ৬,৬৬,০০০ ফেল মানে-গণহত্যার মতো মেধাবিনাশ।
আপনি কি এই গণহত্যার বিচার করবেন?

চাচা,
আপনার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কই? হাসপাতালে মানুষ হাউমাউ কইরা কাঁদতেছে, আর তিনি কাগজে নীতির লেকচার দিতেছেন।
হাসপাতালে মানুষ মরতেছে,আর উপদেষ্টা সাহেব থাইকা নাই। এটা কি’সামাজিক ব্যবসা’? না এটা’রাষ্ট্রীয় গাফিলতি’?

চাচাজান,
আমরা গেরামের মানুষ চাষ করি,ঘাম ঝরাই, কিন্তু এখন ভাবতেছি-আপনার নেতৃত্বে কি নতুন চাষ হবে?
না কি পুরান সিস্টেমেই পচা ফসল বইসা রইবে?

আরও একটা কথা না কইলেই না,
জুলাই আন্দোলনে যারা রাস্তায় নামছিল-যারা গুলি খাইছে, যারা আহত হইছে-তাদের তালিকা এখনো নাই!
নোয়াখালীতে তো গা গরম হইতেছে,ভাতিজারা বলতেছে-ঢাকায় আইসা সরকারের মুখে বাতি ধরবো।

চাচা,
আপনে তো বলছিলেন-‘মানুষই বড় শক্তি’।
তয় এখন মানুষ বুঝতেছে-‘শক্তি’ হইতে হইলে মুখ খুইলা সত্য কইতে হয়।

চাচা,আমাগো আশা যেন আপনার নীরবতার কবরেই দাফন না হয়।
এই চিঠি যদি আপনি পড়েন-তাহলে একটা বাউলের গান ভেবে পড়েন,
তাতে গলা আছে, ব্যথা আছে, আশাও আছে।

ইতি,
তারা চাচা
গেরামের তরফ থাইকা
(যাদের সন্তান আগুনে পুরে গেছে, যাদের নাম তালিকায় নাই,যারা ফেল করেছে,তবু স্বপ্ন ছাড়ে নাই)