নবজাগরণ ডেস্ক:
২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া গণআন্দোলনের পর,একে একে ভেঙে পড়ছে পুরনো রাষ্ট্র কাঠামোর অব্যর্থ বলয়।এই উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি যে ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন,তা নিছক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নয়-এ এক সংবিধানিক নবযাত্রার রূপরেখা,এক দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের ম্যানিফেস্টো।
এটা শুধুই ২৪টি পয়েন্ট নয়,বরং ২৪টি বিদ্রোহের ধারা,যা আমাদের রাষ্ট্রটিকে একটি ধনিক-মাফিয়াচালিত উপনিবেশ থেকে মানবিক,গণমুখী ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রে রূপান্তরের রোডম্যাপ হিসেবে দেখা উচিত।
১-২: সংবিধান বদল ও অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি
প্রথম দুই দফাতেই স্পষ্ট হয় এই ইশতেহার কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে পুরনো শাসনব্যবস্থাকে।
“নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক”-এই বাক্যটিই যথেষ্ট আগুন জ্বালাতে। এই সংবিধান আর সংরক্ষিত রাখতে চায় না সেই গোষ্ঠীগত দখলদারিত্ব, যা একদলীয় শাসনকে বহাল রাখে।
“জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার”-এই দাবি স্পষ্ট করে, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার জাগরণকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে, আর যারা বুলেট চালিয়েছিল নিরস্ত্র বুকে,তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেই হবে।
৩-৬:রাষ্ট্র ব্যবস্থার শুদ্ধি
গণতন্ত্র,বিচারব্যবস্থা,প্রশাসন ও পুলিশ-এই চার স্তম্ভে গণমানুষের আস্থা ভেঙে পড়েছে। এনসিপি বলছে:
বিচারব্যবস্থা হতে হবে “ন্যায়ভিত্তিক”,যেখানে অর্থ,পরিচয় বা দলের পরিচিতি নয়,ন্যায় বিচার পাবে একাকী কৃষক বা শহরের রিকশাওয়ালা।
পুলিশ হতে হবে“জনবান্ধব”,যার কাজ হবে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,নয় গুলি চালানো।
৭-৮:ক্ষমতা ছড়িয়ে দিন জনগণের হাতে
“গ্রাম পার্লামেন্ট”-এই শব্দটাই বলে দেয় নতুন রূপকল্প কতোটা র্যাডিকাল।
এনসিপি চায়, প্রতিটি গ্রাম হয়ে উঠুক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র। শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ও গ্রামভিত্তিক আইনসভা গঠনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে চায় নীতিনির্ধারণের ক্ষমতা।
৯-১৩:জাতি গঠনের মানবিক রূপরেখা
এখানে রয়েছে স্বাস্থ্য,শিক্ষা,প্রযুক্তি,ধর্মীয় সহনশীলতা ও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তৃত ভাবনা।
“জাতিগঠনে শিক্ষানীতি”-যেখানে মুখস্থ নয়,থাকবে বিজ্ঞান, যুক্তি,ইতিহাস ও মুক্তচিন্তার চর্চা।
“নারীর নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন”-নারীর শরীর নয়,তার অধিকার হবে রাষ্ট্রীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
১৪-১৮: অর্থনীতি হোক মানবকেন্দ্রিক
বাজার নয়,মানুষ হোক উন্নয়নের মাপকাঠি-এটাই এনসিপির দর্শন।
এখানে রয়েছে-
“কল্যাণমুখী অর্থনীতি”“তারুণ্য ও কর্মসংস্থান”“টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব”“শ্রমিক-কৃষকের অধিকার”এগুলো সেই স্বপ্নের অংশ, যেখানে মুনাফা নয়,মানুষের ঘামে তৈরি হবে উন্নয়নের মানদণ্ড।
১৯-২২:জাতীয় সম্পদ ও প্রবাসনীতির পুনঃনির্মাণ
“জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা”-গ্যাস,কয়লা,নদী,বঙ্গোপসাগর-সব থাকবে জনগণের মালিকানায়।
“প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার”-রেমিট্যান্স পাঠানো শ্রমিক আর টাকার মেশিন নয়,রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিদার নাগরিক।
২৩-২৪:পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা
“বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি”-কোনো সাম্রাজ্যিক বলয়ে বাঁধা নয়,জনগণের স্বার্থে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি।
“জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল”-সেনাবাহিনী হবে পেশাদার, জবাবদিহিমূলক এবং গণতন্ত্র রক্ষার রক্ষাকবচ।
২৪ নয়,একটিই দাবি-নতুন বাংলাদেশ
নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপি বলছে,২৪টি দাবি নয়, মূলত একটিই লক্ষ্য-একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা,যেখানে মানুষ হবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক।
এই দল নিছক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নয়,এটি একটি প্রজন্মের স্পষ্ট প্রতিজ্ঞা। যাদের নেতৃত্বে স্বৈরশাসকের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছিল, সেই নেতৃত্বরাই এখন গণমানুষের প্রত্যাশা-নতুন বাংলাদেশ গড়ার মূল কাণ্ডারি হবে।
এখন প্রশ্ন একটাই-এই ২৪ দফা বাস্তবায়নে কে পাশে দাঁড়াবে,আর কে বাধা হয়ে দাঁড়াবে?
এটাই হবে আগামী রাজনীতির নিয়তি নির্ধারক প্রশ্ন।
লেখক: নবজাগরণ বৈপ্লবিক সম্পাদকমণ্ডলী
পুনঃপ্রকাশের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য
শেয়ার করুন,বিতর্ক করুন,আগুন লাগান চিন্তায়-নতুন বাংলাদেশ আমাদের দরজায়।