পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সন্ত্রাস: ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রের সামনে কঠিন বাস্তবতা

একটি পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ :
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৫ বছর আগে। অথচ আজও হঠাৎ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সশস্ত্র সন্ত্রাস। প্রশ্ন উঠছে-কার স্বার্থে এই অস্থিরতা? কারা এই গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিচ্ছে?

পাহাড়ের ইতিহাস : বাঙালির হাজার বছরের শেকড়
আর্য, দ্রাবিড়, তিব্বতীয়সহ নানা জাতিগোষ্ঠী উপমহাদেশে আসা-যাওয়ার মধ্যেই গড়ে ওঠে বাংলার সভ্যতা।
গৌড়, মউর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, মুঘল-সব শক্তির শাসন-প্রশাসনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি শাসন কাঠামোর অংশ ছিল। চট্টগ্রামের প্রাচীন বন্দর থেকে আরব, চীন ও ইউরোপের বণিকেরা বাণিজ্য করত, যা মূলত বাঙালি সভ্যতার হাত ধরে গড়ে উঠেছিল।

অর্থাৎ, বাঙালি জাতির ইতিহাস এই ভূখণ্ডে কয়েক হাজার বছরের। উপজাতিদের আগমন : শত শত বছরের মধ্যে
গবেষণা বলছে পাহাড়ি গোষ্ঠীগুলোর অধিকাংশই তিব্বত-মিয়ানমার অঞ্চল থেকে বিভিন্ন সময়ে এ ভূখণ্ডে এসে বসতি গড়েছে। চাকমারা এসেছে প্রায় ১৫-১৬ শতকে, মারমারা ১৭ শতকের দিকে, আর অন্যান্য ছোট জাতিগোষ্ঠী আরও পরে। ব্রিটিশরা প্রশাসনিক সুবিধার জন্য তাদের ‘Tribe’ হিসেবে নথিভুক্ত করে।

তাহলে কীভাবে তারা “আদিবাসী”?
যদি তাদেরকে আদিবাসী বলা হয়, তবে হাজার বছরের বাঙালি জাতিকে কোথায় রাখব? তাহলে কি গৌড়-বঙ্গ-সেন-পাল সভ্যতা গড়ে তোলা বাঙালিরাই উপজাতি? এ এক ধরনের ভয়ংকর ইতিহাস বিকৃতি!

সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান:
১৯৭২ সালের পর কিছু পাহাড়ি নেতা ভারতীয় মদদে “স্বাধীন জুম্মল্যান্ড” দাবি তোলে।গঠিত হয় শান্তিবাহিনী, যা ২০ বছর ধরে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাস চালায়।
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির পর শান্তির প্রতিশ্রুতি দিলেও অস্ত্র জমা দেয়নি সব গোষ্ঠী। এখনো বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ চালিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থিতি-
সাম্প্রতিক সময়ে আবার দেখা যাচ্ছে:
বিদেশি ফান্ড ও এনজিও নেটওয়ার্কের ছত্রছায়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর পুনরুত্থান।সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাহীনতা।নতুন করে “আদিবাসী” তত্ত্ব তুলে আন্তর্জাতিক মহলে প্রচারণা।

রাষ্ট্রের করণীয়-
প্রতিটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্র উদ্ধার ও আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিদেশি ফান্ড ও আন্তর্জাতিক লবির হিসাব কষে শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তার যুগপৎ কৌশল নিতে হবে।
“আদিবাসী” শব্দের অপপ্রচার রুখতে হবে গবেষণা, শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রমাণ দিতে হবে।

এখানে আমি একটি চার্ট তৈরি করেছি যেখানে ১৯৫১ ১৯৭৪ ও ২০২২ সালের আনুমানিক সেনসাস অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বনাম উপজাতি জনসংখ্যার পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।
১৯৫১ সালে উপজাতিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, বাঙালি ছিল সংখ্যালঘু।
১৯৭৪ সালের পর বাঙালির সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে।
২০২২ সালে বাঙালি জনসংখ্যা উপজাতিদের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
এই তথ্য পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে, পাহাড়ে “আদিবাসী” শব্দের দাবিটা আসলে ইতিহাস বিকৃতি ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডা-কারণ এখানে হাজার বছরের বাঙালি উপস্থিতি ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করা যায় না।

নবজাগরণের অবস্থান-বাংলাদেশ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। এখানে কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্র, কোনো অস্ত্রধারী গোষ্ঠী বা কোনো ইতিহাস বিকৃতি সহ্য করা হবে না। আজ সময় একটাই দাবি করছে-রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাহাড়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা ও ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য।

লেখক: মো: আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক-নবজাগরণ
অনলাইনে পড়তে :www.thenabajagaran.com
সংবাদটি সবাই শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
#নবজাগরণ_প্রতিবেদন #HillCrisis #Bangladesh #জাতীয়ঐক্য #বিপ্লবীবাংলা #viral #fyp