মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী ধমনী কোথায়?
চট্টগ্রাম বন্দর।দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ৯২% প্রবাহ এই একটি বন্দর দিয়ে আসে-যায়।বাংলাদেশের ব্যবসা, শিল্প, কৃষি, বাজার, রাজস্ব-সবকিছু এই একটি বন্দরকে কেন্দ্র করে।সিঙ্গাপুরে ডাকলে রুট বদলায়, মালয়েশিয়ায় প্রযুক্তি বদলায়, ভিয়েতনামে নীতি বদলায়।কিন্তু বাংলাদেশে?বন্দর উন্নয়ন মানেই লাঠি-সিন্ডিকেটের চিৎকার,চাঁদাবাজদের চুল পোড়া গন্ধ,আর মাফিয়া চক্রের হাহাকার।
কারণ বন্দর যত ধীর,দুর্নীতিবাজরা তত ধনী।
আর রাষ্ট্র যত পিছিয়ে,লুটেরা চক্র তত শক্তিশালী।
এই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো দাঁড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।আর সামনে নেতৃত্বে আছেন-নোবেলজয়ী, বৈশ্বিক উন্নয়নের আইকন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।এই মানুষটির বিরুদ্ধে যত গুজব, নোংরা কথা, অপপ্রচার ছোড়া হয়েছে, তার একটাই কারণ-তিনি সিস্টেমের মাফিয়া-নালী কেটে ফেলতে কাজে নেমেছেন।
বন্দর:উন্নয়ন নয়,ছিল দুর্নীতির স্বর্ণখনী
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান কাঠামো হচ্ছে এক ধরনের “পরিকল্পিত অকার্যকরতা।”কারা এই পরিকল্পনা করেছে?
যারা অদৃশ্য দড়ি ধরে রেখেছিল প্রতি কন্টেইনারে-কমিশন, ঘুষ,চাঁদা,বিলম্ব ফি,অপ্রয়োজনীয় আনলোডিং চার্জসহ ২০টিরও বেশি অবৈধ খরচ।বিশ্বে যেখানে ২৪-৪৮ ঘণ্টায় কন্টেইনার আনলোড,সেখানে বাংলাদেশে লাগে ১৬ দিন।
এটা অদক্ষতা নয়-এটা সাজানো দুর্নীতি।
এটা “ইচ্ছাকৃত ধীরগতি” যেখানে প্রতিটি ঘণ্টা = কারো না কারো পকেটে টাকা।এই পুরো ব্যবস্থাকে ঢেকে রাখা হয়েছে তদারকির নামে,শ্রমিক অধিকারের নামে,রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে।কিন্তু সত্য একটাই-চট্টগ্রাম বন্দরকে ধীর করে রাখা ছিল লুটেরাদের কৌশল।
দেখুন,বন্দর উন্নয়ন মানেই কারা ভয়ে কাঁপে:
বন্দর-মাফিয়াযারা প্রতিটি কন্টেইনার আটকে টাকা তুলে।
যাদের টার্গেট-দেশের ক্ষতি,নিজের লাভ।যাদের হাত এত লম্বা যে প্রশাসনও কথা বলতে ভয় পায়।কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত শ্রমিক-সুপারভাইজার যাদের কাছে ১৬ দিন মানে উৎসব।
৪৮ ঘণ্টা মানে আতঙ্ক কারণ এদের ‘অকার্যক্ষমতা’ই হচ্ছে অসাধু উপার্জনের পথ।রাজনৈতিক কমিশন-বাজ গোষ্ঠী
যারা মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে,এমপির নাম ভাঙিয়ে,স্থানীয় ক্ষমতাবানদের নাম ভাঙিয়ে বন্দরকে বানিয়েছে “ঘুষের হাট।”
পতিত স্বৈরাচারের এজেন্ট ও তাদের দোসররা
তারা উন্নয়ন দেখলে ভয় পায়।কারণ উন্নয়ন হলে তাদের অপকর্ম প্রকাশ পায়।দেশ এগোলে তাদের চুলকায়।বাংলাদেশ জাগলে তাদের আর রুটি হয় না।APM Terminals নিয়ে যেসব বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিদেশি কোম্পানি এলেই সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে?এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যা, সবচেয়ে বড় অর্ধসত্য, এবং সবচেয়ে বড় জনগণ-বিভ্রান্তি।
ইউরোপের ২০টি দেশে বিদেশি কোম্পানি বন্দর চালায়।
সিঙ্গাপুর,কাতার,চীন,জাপান,দক্ষিণ কোরিয়া-সবাই বিদেশি পরিচালনাকে উন্নয়নের অংশ মনে করে। APM Terminals পরিচালনা করে:রটারডাম মিয়ামি সাংহাই বার্সেলোনা আলজেসিরাস কলম্বো গোথেনবার্গ পিপাভাভ তাঞ্জিয়ার…এবং বিশ্বের আরও ৬০টিরও বেশি টার্মিনাল।এসব দেশ কি সার্বভৌমত্ব বিক্রি করেছে? না।বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে।বাংলাদেশে নিরাপত্তা,সীমান্ত,কাস্টমস-সবকিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।শুধু টেকনিক্যাল অপারেশন হবে বিশ্বমানের হাতে,আর কাজ করবে-বাংলাদেশের শ্রমিক ও প্রকৌশলীরাই।এর মানে-শিখবে তারা,লাভ হবে দেশটির।
বাংলাদেশ কি চট্টগ্রাম বন্দর চালাতে অক্ষম?
অক্ষম নয়-অক্ষম করে রাখা হয়েছে।যে দেশে বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাই নিজেদের পকেটে টাকা নিতে আনলোডিং ধীর করে,যে দেশে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ২৪ ঘণ্টার কাজে ১৬ দিন দাবি করে,যে দেশে চাঁদাবাজরা প্রতিটি কন্টেইনার থেকে কামায় কমিশন-সে দেশে কীভাবে বন্দর দ্রুত চলবে?এই ব্যবস্থা ভেঙে না দিলে দেশ মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর-চায়না হতে পারে না।
বন্দর উন্নয়ন হলে দেশের কী কী লাভ হবে? (বিস্তারিত)
মাঝারি উন্নয়ন নয়-বিপ্লব ঘটবে।বছরে ৮ লাখ TEU বাড়তি ধারণক্ষমতা এটা অর্থনৈতিক মহাসড়কের ক্ষমতা ৪৪% বৃদ্ধি। বড় জাহাজ ভিড়বে-দ্বিগুণ সাইজের এর মানে কম খরচে বড় পরিমাণ মাল আনতে পারবে বিশ্ব। ৪৮ ঘণ্টায় আনলোড বাংলাদেশে ব্যবসা হবে গতির উপর, ঘুষের উপর নয়। একাধিক দূরপাল্লার নতুন শিপিং রুট বাংলাদেশ
সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকা রুটে যুক্ত হবে ৫০০-৭০০ নতুন উচ্চমানের চাকরি এবং হাজার হাজার পরোক্ষ চাকরি। LEAN, FLOW Framework প্রযুক্তি বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি বদলে যাবে।দুর্নীতির প্রায় ৮০% কমে যাবে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার কারণে।দেশ প্রথমবার গ্রীন পোর্ট পাবে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমবে, পরিবেশবান্ধব অপারেশন হবে। এই সব শুনলেই সিন্ডিকেটদের গায়ে আগুন লাগে।
ড.মুহাম্মদ ইউনূসের অবস্থান স্পষ্ট:সময় নেই-দেশকে বাঁচাতেই হবে-বাংলাদেশকে ৫০ বছর পিছিয়ে রাখা হয়েছে রাজনীতিবিদদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি,স্বৈরশাসকদের কালো দাপট, এবং ক্ষমতার বাণিজ্যে দেশকে পথে বসানো হয়েছে।
জুলাই আন্দোলন দেশকে নতুন দিশা দিয়েছে-দুর্নীতিহীন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি।ড. ইউনূস সেই ভিত্তিকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন।তাই তাড়াহুড়ো নয়-এটা হলো রাষ্ট্র উদ্ধার অভিযান।
কে আসল দেশদ্রোহী?যারা উন্নয়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
যারা বন্দর ধীর করে লাভবান হয়।যারা অগ্রগতির বদলে বিশৃঙ্খলা চায়।যারা ১৬ দিনের দুর্নীতিকে রক্ষা করতে রাজপথে নামে-এদের উদ্দেশ্য একটাই-দেশকে ভবিষ্যৎহীন রাখা।বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ,যেখানে চুরি-চাঁদাবাজি-ঘুষের পক্ষে আন্দোলন হয়!এটা লজ্জাজনক, ঘৃণিত, এবং দেশের প্রতি অপরাধ।
চট্টগ্রাম বন্দর পুনর্গঠন = নতুন বাংলাদেশের জন্ম
আজ বাংলাদেশের মুখোমুখি থাকা সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত-“আমরা কি লুটতন্ত্রে ফিরে যাব,নাকি উন্নয়নের দিকে হাঁটব?”চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিক করা শুধু একটা প্রকল্প নয়-এটা রাষ্ট্রের পুনর্জন্ম,অর্থনীতির মুক্তি,দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ,আর লুটেরা গোষ্ঠীর কফিনে শেষ পেরেক।রাষ্ট্র এখন জেগে উঠেছে।জনগণ জেগে উঠেছে।সিন্ডিকেটের সময় শেষ।বাংলাদেশ এগোচ্ছে-এবার আর কেউ আটকে রাখতে পারবে না।
মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক,নবজাগরণ
অনলাইনে পড়ুন:www.thenabajagaran.com ২৪/১১/২০২৫ ঢাকা





