খুনের মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি স্বরুপকাঠীর দূর্ধষ সন্ত্রাসী সোহেল শিকদার প্রশাসনের নাকের ডগায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে

আবুল বাসির : বিশ্ববিবেক কাপানো আশুলিয়ায় গুলি করে ছাত্র জনতা হত্যা এবং লাশ পোড়ানো, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞে সশস্ত্র অংশ গ্রহণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে আহত করা, নিজ এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যুবককে অপহরণ করে মারধর করে আহত করার মামলার আসামি সোহেল শিকদার । যুবদলের তকমা লাগিয়ে এখন এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মামলা সূত্রে জানা যায় , উপরোক্ত তিনটি ঘটনায়ই ছিলো তার সশস্ত্র অংশগ্রহন। স্বরুপকাঠী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আল বেরুনী সৈকতের ছবির নিচে নিজের ছবি জুড়ে দিয়ে নিজেকে যুবদল পরিচয়ে ফেইসবুকে পোস্ট করতেও দেখা গেছে তাকে। অনুসন্ধানে সে পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলার সারেংকাঠী গ্রামের মৃত মোবারক শিকদারের পুত্র। ০৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে এলাকার কতিপয় আওয়ামী লীগের বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় থেকে মানুষের উপর হামলা, মিথ্যা মামলাসহ নানান অপরাধে হাত পাকিয়ে ফেলেছে শিকদার।

তার বিরুদ্ধে এলাকার মতিউর রহমান হাওলাদারের পুত্র জালিস মাহমুদকে অপহরণ করে খুন করার প্রচেষ্টার অভিযোগে পিরোজপুরের নেসারাবাদ থানায় গত ২৫.০৬.২০২৪ তারিখে একটি মামলা হয়। যার এফ.আই.আর নং ১২৭৩ ঐ মামলায় সে নেছারাবাদ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে যায়। কিছুদিন পর সে আদালত থেকে জামিন পায়। ঐ মামলার বাদী ভিকটিম জালিস মাহমুদ জানায় গত ১৫ জুন ২০২৪ তারিখ আওয়ামী লীগ কর্মী সোহেল শিকদার তাকে স্হানীয় রাজবাড়ী লঞ্চঘাট থেকে তার নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনীরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। বাঁচার জন্য সে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে তাকে লোহার রড এবং রামদার উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক আহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। ভিকটিম হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ্য হয়ে নেছারাবাদ থানায় মামলা দিতে গেলে তৎকালীন ওসি গোলাম সরোয়ার অস্ত্রের বিষয়টি বাদ দিয়ে মামলাটি এফ আই আর ভুক্ত করেন। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,কারণ সোহেল শিকদার তখন ছিল আওয়ামী লীগ কর্মী তাই তার পক্ষে থানায় তদবির হয়েছিল বলে জানা যায়। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা আশুলিয়ায় ছাত্র জনতা হত্যা মামলা এবং ঢাকা সি এম এম আদালতে দায়ের করা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছাত্র জনতা হত্যা প্রচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি উক্ত সোহেল শিকদার। ইতিমধ্যে দুটি মামলাই পি বি আই তদন্ত শুরু করেছে।

ঢাকার আশুলিয়ায় বিশ্ব বিবেক নাড়া দেয়া গত ০৫ ও ০৬ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ এবং লাশ পোড়ানোর ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ একাধিক ব্যাক্তি গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। ঐ ঘটনায় একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে দীর্ঘ তদন্ত কার্য শেষে সংগঠনের সহ-সভাপতি মোঃ তোহা বাদী হয়ে ঢাকার বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালতে দন্ড বিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬(২) ৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। সি.আর. মামলা নং ১২১৮/২০২৪ (আশুলিয়া)। মামলার বাদীর বক্তব্য সূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের বর্ননায় এই মামলার ৩১ নং আসামী সোহেল শিকদারের সশস্ত্র অংশ গ্রহনের বিষয়টি উঠে আসে। যা পিবিআই তদন্তাধীন রয়েছে।

ইহা ছাড়াও গত ১৯ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনের নামে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় সেখানেও অন্যান্য সন্ত্রাসীদের সাথে সোহেল শিকদারের সশস্ত্র অংশ গ্রহন ছিল বলে মামলা সূত্রে জানা যায়। লোমহর্ষক ঐ ঘটনায় অনেক ছাত্র জনতা হতাহত হয়। ঐ ঘটনায় পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬ (২) ৩৪ ধারায় ঢাকার সি এম এম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সি.আর. মামলা নং ৭৯৮/২০২৪ (যাত্রাবাড়ী) । উক্ত মামলায় সোহেল শিকদার ৩৩ নং আসামী। বাদী এ প্রতিবেদককে জানান, আনদোলনরত ছাত্র জনতার উপর পুলিশ এবং তাদের দোসর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি বর্ষন করে। ঐ ঘটনায় অনেকে নিহত হয়। তিনিও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেন। তিনি আরও জানান ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষনকারী পুলিশ ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে মামলার ৩৩ নং আসামী সোহেল শিকদারও সশস্ত্র অবস্থায় অংশ গ্রহন করে।

উপরোক্ত তিনটি মামলার আরজি, বাদীর বক্তব্য এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উক্ত তিনটি ঘটনায়ই সোহেল শিকদারের সশস্ত্র অংশ গ্রহন ছিলো।

এখন প্রশ্ন আসে প্রতিটি ঘটনায়ই যখন সোহেল শিকদারের সশস্ত্র সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে সে কি ভাড়ায় খাটা অবৈধ অস্ত্রধারী?

কে তার অবৈধ অস্ত্রের যোগানদাতা? কোন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় রয়েছে সে? সে কোনো পেশাদার ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য কি না? এ বিষয়গুলো সামনে রেখে চলছে তথ্য অনুসন্ধান। চোখ রাখুন আগামী সংখ্যায়।