অবৈধ কারখানা, নকল ও ভেজাল ঔষধে চলছে ইউনানী চিকিৎসার নামে প্রতারনা

ইউনানী ঔষধ কারখানার হালচাল পর্ব ( -০১)
আশরাফুল ল্যবরেটরীজ

কে.এ.সাদাত : মানব দেহের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ইউনানী ঔষধের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কম খরচে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় ইউনানী ঔষধ এবং চিকিৎসার উপর এখনও মানুষ অনেকাংশেই নির্ভরশীল। কিন্তু ইউনানী ঔষধ উৎপাদন এবং চিকিৎসা ব্যাবস্থা এখন কিছু সংখ্যক মূর্খ ও প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। তেমনি একটি অবৈধ নকল ও ভেজাল ঔষধ উৎপাদন, বিপণন ও চিকিৎসা কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ নামে ঐ প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ প্রতারনার তথ্য উঠে এসেছে আমাদের অনুসন্ধানে।
যশোর শহরের চাচড়া এলাকার ডালমিল মোড়ে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারনামূলক নানাবিধ বানিজ্য। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নেই কোনো রেজিষ্ট্রেশন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরেরও নেই কোনো অনুমোদন। ঐ প্রতিষ্ঠানটি তার রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ইউ -০৮৪ বলে বিভিন্ন প্রচারনায় উল্লেখ করেছে এবং প্রতিষ্ঠাকাল উল্লেখ করা হয় ২০১০ ইং সাল। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা গেছে ঐ একই রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারে কন্টিনেন্টাল ইউনি ড্রাগ ল্যাবরেটরীজ নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের লক্ষ্যে পত্রিকা অফিস থেকে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর ৮(১) ধারা মোতাবেক প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে গত ১৪.১০.২০২৪ ইং তারিখে আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ বরাবরে একটি আবেদন করা হয়। কিন্তু উক্ত আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ ফেরত আসলেও এ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত ঐ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয় নি। এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এর যশোর জেলা কার্যালয় থেকে সরবারহকৃত ঐ জেলায় সচল ইউনানী ঔষধ কারখানা ও বিপণন এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের তালিকায়ও আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ এর নাম নেই। তাহলে কিভাবে এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার শাখা প্রশাখা বিস্তৃত করে ইউনানী ঔষধ কারখানা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি জেলার প্রত্যান্ত এলাকায় ভুয়া ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। স্হানীয় বেকার যুবক যুবতীদের সমন্বয়ে গড়ে তোলে দালাল চক্র। এলাকার গরীব রোগীদের বাগিয়ে আনার দায়িত্ব রয়েছে ঐ দালাল চক্রের হাতে। ঐ সকল দালালদের মধ্যে একজনের নামে স্থানীয়ভাবে করিয়ে নেয়া হয় একটি ট্রেড লাইসেন্স। আর লাইসেন্সকেই সামনে রেখে চলছে ভেজাল ও নকল ঔষধের রমরমা ব্যবসা। ঐ সকল চিকিৎসা কেন্দ্রের নেই জেলা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেতা পরিচয়ে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে রোগীদের জিম্মি করেই চালিয়ে যাচ্ছিল ঔষধ বিক্রির বানিজ্য।
এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী রোগীর সাথে আলাপ করে পাওয়া গেছে ভয়ংকর তথ্য। তাদের দেয়া তথ্য মতে একবার তাদের ঔষধ সেবন করলে শরীরে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। নিয়মিত ঔষধ সেবন না করলে শরীরে জ্বালা ধরে যায়। এ বিষয়ে এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান ইউনানী ঔষধের বেশির ভাগই যৌন উত্তেজক। ঔষধ তৈরির সময় উহার মধ্যে উচ্চ মাত্রার এলকোহল মিশ্রন করা হয়। যাহা মাদকের উপাদান। চিকিৎসা নিতে গিয়ে দীর্ঘদিন ঔষধ সেবন করে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পরিবর্তে মাদকাসক্ত রোগীতে পরিনত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গরীব রোগীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশরাফুল ল্যাবরেটরীজ এ এক সময়ে চাকরি করা এক কর্মী জানান, এখানকার সকল কাজ কর্মই মিথ্যা ও ফাকির উপরই চলে। তার বর্ননা অনুযায়ী পানির সাথে কালার কেমিক্যাল ও ফ্লেভার যুক্ত করে তার সাথে চিনি মিশ্রিত করা হয় এবং মাদক উপাদান এলকোহল মিশিয়ে বোতলে ভর্তি করে রংবেরঙের মোড়কে পেচিয়ে দালালদের মাধ্যমে বাজার জাত করা হচ্ছে। উড়তি বয়সী যুবকেরা মাদকের বিকল্প হিসাবে যৌন উত্তেজক মরন নেশায় আসক্ত হচ্ছে। সাথে সাথে চিকিৎসার আড়ালে ঐ প্রতিষ্ঠানের কথিত এম.ডি আশরাফুল ইসলাম লিটন নিজেকে একজন সমাজ সেবক হিসেবে জাহির করে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে জনসাধারণের মধ্যে। তার দালাল চক্রের বেশির ভাগ সদস্যই নারী হওয়ায় একাধিক অবৈধ সুযোগও নিচ্ছ বলে তথ্য সূত্রে জানা যায়।
সূত্রে আরো জানা যায় সীমান্তঘেষা জেলায় তার আস্তানা হওয়ায় ভারত থেকে অনায়াসে মাদকদ্রব্য এনে তার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ঔষধ হিসেবে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের সর্বত্র। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠলেও আওয়ামী লীগের ছত্র ছায়ায় থেকে নেতাদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে নির্বিঘ্নে তার অপকর্ম চালিয়ে আসলেও বর্তমান অন্যদের ছত্রছায়ায় তার অবৈধ বানিজ্য বহাল তবিয়তে চলছে।
এদিকে কথিত এম.ডি আশরাফুল ইসলাম লিটন সম্পর্কে একটি সূত্র জানায় তার নেই কোনো প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা। কিন্তু নিজের ঝুলিতে ধারণ করছে একাধিক ভুয়া টাইটেল। সূত্রে আরো জানা যায় তার অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজেকে সমাজ সেবক হিসেবে জাহির করতে একাধিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়। তার পোস্ট করা নথি ঘেটে দেখা যায় সে যশোর রোটারি ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইউনানী ডক্টরস সোসাইটির সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সোসাইটির সদস্য।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো ঔষধ কোম্পানি পত্র – পত্রিকা ইউটিউব, ফেইসবুকসহ কোনো গণমাধ্যমেই প্রচার চালিয়ে ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধ। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশরাফুল ও তার অবৈধ ইউনানী ঔষধের প্রচার প্রচারনার রয়েছে ছড়াছড়ি। সাধারণের মন্তব্য ঔষধ প্রশাসনের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসেই এই ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ পরিক্রমা মানবাধিকার সাংবাদিক সোসাইটির চেয়ারম্যান মো: আসলাম হোসেন বলেন, তদন্ত করে এই ধরনের মানবতাবিরোধী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হবে।