ইউপি নির্বাচনের হাওয়া ( ০১)
সারেংকাঠী ইউনিয়নে বিএনপির একাধিক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করে দল ভারী করার চেষ্টা
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যেমনি মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তেমনি ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরাও তাদের মাঠ গোছাতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। এ উদ্দেশ্যে পিছিয়ে নেই পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ উপজেলার ১০ নং সারেংকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরাও। এ ইউনিয়নে নিজের জন্য বিএনপির সমর্থন দাবি করে ইতিমধ্যে একাধিক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাঠ গোছাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তারা নিজ দলের অংগ সংগঠন সহ সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। একাধিক পদপ্রার্থী হওয়ার কারণে ইউনিয়ন বিএনপি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নিজ সমর্থকদের পাল্লা ভাড়ী করতে তারা নিজ নিজ কৌশল অবলম্বন করছেন।
নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির মতো আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিতর্কও তাদের পিছু ছাড়ছে না। কোনো কোনো চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সাথে গনহত্যা মামলার আসামীসহ একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামীকেও দলে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে নিজের সমর্থনের পাল্লা ভারী করতে আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীদের দলে স্থান দিচ্ছে বলে বিএনপির একাধিক ইউনিয়ন নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে। পট পরিবর্তনের পর সবচেয়ে খারাপ লোক হিসাবে পরিচিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি সমির হালদার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এক নেতার ছত্রছায়ায় সে এলাকায় ফিরে এসে নিরব হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগকে গোপনে পুনর্গঠিত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের আরো অভিযোগ ০৫ আগস্ট পূর্ববর্তী জমানায় যে সব আওয়ামী লীগারদের কূটকৌশল এবং অত্যাচারে সারেংকাঠী ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজনীতি করাই হারাম হয়ে গিয়েছিল তারাই রমজানে ইফতারের দাওয়াত দিয়েছিল বিএনপির হবু ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের। কেউ কেউ তাদের দাওয়াতে সদলবলে হাসিমূখে উপস্থিতও হয়েছেন। উদ্দেশ্য একটিই ওনাদের ভোট পাবেন এবং ইউপি চেয়ারম্যান হবেন। বিনিময়ে আওয়ামী লীগের ঐ সকল দোসররা নিরাপদে এলাকায় বিচরণের ছাড়পত্র নিয়ে নিয়েছে। কোনো কোনো চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে গোপনে এবং প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী, শালিস বানিজ্য, থানা পুলিশের দালালী, চর দখল সহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও দলীয় নির্দেশ অমান্য করে কোনো কোনো চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোটরসাইকেল শোডাউন করছেন বলে তৃণমূল কর্মী সমর্থক সূত্রে জানা গেছে।
মূলত: নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব তিন ভাগে বিভক্ত। এর একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন পিরোজপুর জেলা কমিটির সদস্য মোঃ ফখরুল আলম। আরেকটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ। আর অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল বেরুনী সৈকত। সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপিতেও উক্ত ত্রী- বিভক্তির ছোঁয়া লেগেছে।
আগামী নির্বাচনে সারেংকাঠী ইউনিয়নে বিএনপির তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর তৎপরতা মাঠে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারমধ্যে সৈকত পন্থী সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বাবলু ২০১১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন। ঐ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত একাধিক প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হন। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে শহীদুল ইসলাম বাবলু ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে মাঠে নামেন। কিন্তু নেসারাবাদ উপজেলার এক নেতার মনোনয়ন বানিজ্যের বলি হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ঐ নির্বাচনে সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম গোলাম মোস্তফা সরদারকে শেষ মুহূর্তে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন।
এছাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ গ্রুপের দুজন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে তৎপর দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ০৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ মিলন সরদার। অহিদ গ্রুপের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ। মিলন সরদারের ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তার চাচা মরহুম গোলাম মোস্তফা সরদার ২ বার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এক্ষেত্রে আসাদুজ্জামান আসাদ ব্যাক্তিগতভাবে নির্বাচনী লড়াইয়ের মাঠে নতুন মূখ। তিনি কখনোই ইউপি নির্বাচনে কোনো পদেই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হননি।
এখন পর্যন্ত ফখরুল আলম পন্থীদের কারোরই মাঠে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগে যোগদান করা সারেংকাঠী বিএনপির এক সাবেক নেতা ফখরুল আলমের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পদে লড়বেন বলে একটি সূত্র জানায়। এছাড়া বিএনপি নামধারী এক ইউপি সদস্য যিনি বিএনপির নির্দেশ অমান্য করে টাকার বিনিময়ে গত সংসদ নির্বাচনে পলাতক সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজের নির্বাচনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনিও ফখরুল আলম পন্থী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পদে লড়বেন বলে একটি সূত্র জানায়।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সারেংকাঠী ইউনিয়ন সভাপতি মোঃ গোলাম আযম আছলাম ইউনিয়ন বাসীকে স্বাধীনতা দিবস ও ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে তার আগমনী বার্তা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক ইউনিয়ন নেতাকর্মী জামায়াতে ইসলামীর পতাকাতলে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষা করছে অন্যত্র। একটি সূত্র জানায় আওয়ামী লীগ সরাসরি ইউপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে না। কিন্তু তাদের নেপথ্য সমর্থনে নিরপেক্ষ এবং গ্রহনযোগ্য কাউকে দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইউনিয়ন বিএনপির ত্রি – সংকুল অবস্থার কারণে দলের তৃণমূল সমর্থকরা দ্বিধা দ্বন্দের মধ্যে ভুগছে। তাই কোনো সভার আয়োজন করা হলে তারা তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সেক্ষেত্রে বিএনপির এই বিভক্ত রাজনীতি তাদের স্হানীয় নির্বাচনে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে সচেতন মহল মনে করেন। সচেতন মহলের ধারণা ইউনিয়ন বিএনপি তাদের মতভেদ গোছাতে না পারলে আগামী ইউপি নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
( সারেংকাঠীর আগামী ইউপি নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সার্বিক অবস্থান জানতে চোখ রাখুন নবজাগরণের পাতায়)





