♦️ভারতে বিতর্কিত ওয়াকফ বিল পাস, ঘটতে পারে ১৯৪৭ এর পুনরাবৃত্তি!!!
মুজাহিদুল ইসলামঃ
ভারতে বিতর্কিত ওয়াকফ বিল পাস, লোকসভায় ২৮২ ভোটের বিরুদ্ধে ভোট পরে ২৩২টি। নিম্নকক্ষে পাস হওয়া আইনটি নতুন বিলে মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে জেলা প্রশাসক কিংবা সমমানের কেউ। আর এতেই আপত্তি জানিয়ে ভারতের সংখ্যালঘু বিশ কোটি মুসলিমদের প্রতিবাদ। তারা বলে মুসলিমদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্পত্তির উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে কট্টরপন্থী বিজেপি সরকার। ভারতে সংখ্যালঘু ২০ কোটি মুসলিমদের দাবি, মুসলমানদের সম্পত্তি সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চায় বিজেপি সরকার। এতে ধর্মীয় সহিংসতাকে উস্কে দিয়ে দেশের মধ্যে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের পাঁয়তারা করছে ক্ষমতাসীন মোদী সরকার। ভারতে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ পরিষদ গঠিত হয় ১৯৬৪ সালে, ওয়াকফ বলতে ইসলামী আইনের অধীনে ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে আল্লাহকে নিবেদিত সম্পত্তি বোঝায়। মুসলিম আইন অনুসারে দানকৃত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অন্য কোনও ব্যবহার বা বিক্রয় নিষিদ্ধ। ভারতে ওয়াকফ আইন, ১৯৫৪ – এর ধারা ৯ (১) এর বিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকার গুলো রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করে। এগুলো জেলা ওয়াকফ কমিটি, মন্ডল ওয়াকফ কমিটি ও পৃথক ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিটি গঠন করে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষার জন্য কাজ করে। এই সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এমন একটি ধারা, যা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দিতে চায় ক্ষমতাসীন মোদী সরকার। গত বুধবারের লোকসভা আলোচনায় বারবার উঠে এসেছিল ওয়াকফ আইনের সেই ৪০ নং ধারার কথা, তৃণমূল সংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, যদি ৪০ নং ধারা বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তবে ওয়াকফ বোর্ড দাঁতহীন পুতুলে পরিণত হবে। যদি এই ধারা না থাকে, তবে ওয়াকফ বোর্ডের প্রয়োজনই থাকবে না। কোনও সম্পত্তি ওয়াকফের কিনা, তা নির্ণয় করার ক্ষমতা আইনের এই ধারা। এই ধারায় উল্লেখ আছে কোনও জমি বা সম্পত্তি ওয়াকফের কি না, তা একমাত্র ওয়াকফ বোর্ডই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই ধারায় সাব সেকশন ১ – এ বলা হয়েছে, যদি কোনও সম্পত্তি ওয়াকফের বলে মনে হয়, তবে ওয়াকফ বোর্ড নিজে সেই সম্পত্তি সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে পারে। বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে । ৪০ (২) ধারায় ওয়াকফ বোর্ডকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে কোনও সম্পত্তি নিয়ে বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে, যদি না তা ওয়াকফ ট্রাইবুনাল প্রত্যাহার বা পরিবর্তিত করে। এতে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোন ভূমিকা থাকে না। অর্থাৎ কোনও জমিকে ওয়াকফের দাবি করা হলে, সে ক্ষেত্রে রাজ্য বা কেন্দ্র চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। ৪০ (১) (৩) ধারায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, সম্পত্তি ওয়াকফের নয়, অন্য কোনও ট্রাস্ট বা সোসাইটির নামে রয়েছে, সে ক্ষেত্রে কী হবে ? ওই ধারায় বলা হয়েছে, যদি ওয়াকফ বোর্ড মনে করে সরকারি রেজিস্টার্ড অন্য কোন সোসাইটি বা ট্রাস্টের জমি আসলে ওয়াকফের জমি, তবে বোর্ড এই সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে তদন্ত করতে পারে।
৪০ (১) (৪) ধারায় ওয়াকফ বোর্ডের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, তাকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ ট্রাইবুনাল ছাড়া অন্য কেউ এই সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে না। নতুন ওয়াকফ সংশোধনী বিলে অয়াকফ আইনের এই ৪০ ধারাই মুছে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ ওয়াকফ বোর্ডের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে বিজেপি মোদী সরকার। আর এই নতুন সংশোধনী ভারত সংবিধানের পরিপন্থী। এই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে যা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে। এই আইন মুসলিম জাতির প্রতি অবিচার ও ধর্মীয় আইনকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যা একটি বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম মানব কুলে ভারতীয় মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। মুসলিম অয়াকফ আইন সংস্কারের নামে মুসলমানদের ধর্মীয় আইনের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। এই অয়াকফ আইন সংশোধনী ও মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর জোরপূর্বক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় মোদী প্রশাসন। তাই সংশোধন আইনের মার-প্যাচে মুসলিম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে অমুসলিমদেরকে। এই বিল ভারতীয় মুসলিমদের ঈমান ও ইবাদতের উপর সরাসরি হামলা স্বরূপ আঘাত হানছে যা পুরো মুসলিম জাতির কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এই বিলটি নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে ভারতের সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা যা আইয়ামে জাহেলিয়াতের আত্মপ্রকাশ ঘটাবে মোদী সরকার। আর এই জাহিলিয়াত বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসলিমদের ধর্মীয় উপশালা ও স্থাপনা গুলো। যেমনঃ মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, কবরস্থান, অনাথ আশ্রম, দরগা, ঈদগা ও হাজার বছরের মুসলিম ঐতিহাসিক স্থাপনা ইত্যাদি। এই আইন ভারত সরকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যালঘুদের কে অন্যের দরজায় দারস্ত করিয়ে দিবে। আর এতে মুসলিম ধর্মীয় অনুভূতিকে সরাসরি আঘাত করবে ভেঙে পড়বে হাজার বছরের মুসলিম ধর্মীয় ইতিহাস ঐতিহ্য ও হাজার বছরের হিন্দু মুসলিম ভ্রাতিত্বের বন্ধন। আর তাতেই ভেঙে পড়বে ভারতের মহারাষ্ট্রীয় কাঠামো। ফাটল ধরবে কট্টরপন্থী হিন্দুত্ব বাদের বন্ধনে। তাই এই অসাংবিধানিক আইন বাস্তবে রূপ দিলে ১৯৪৭ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। পূর্বকাশের সূর্য নতুন উদ্দামে উদিত হয়ে বিভক্ত হতে পারে ভারত। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায় ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিন্তু ইতিহাস ছার দেয়, কাউকে ছেড়ে দেয় না।





