বিশেষ সম্পাদকীয়:
প্রতিটি ঈদেই আমরা গরুর গলায় ছুরি চালাই, কিন্তু সমাজের অন্যায়-অবিচার-দুর্নীতির গলায় কখনও প্রশ্ন ছুঁড়ি না। ঈদুল আজহা এসেছে আবারও। পশু কোরবানির উৎসব-কিন্তু সত্যিকারের প্রশ্ন হলো, আমরা কি আত্মত্যাগের শিক্ষা নিচ্ছি? নাকি কেবল বাহারি পশু দেখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইক আর কমেন্টের প্রতিযোগিতায় নেমেছি?
আমার নিজের ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি মানেই ছিল-মাঠে ছুটোছুটি, মাংস কেটে গরিব প্রতিবেশীর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া, মসজিদে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়া। আজ সেসব কোথায় হারিয়েছে? এখন কোরবানির চামড়াও রাজনীতি আর দামের খেলা। এখন গরুটা কত লাখ টাকায় কিনেছি, সেটাই ঈদের চেয়ে বড় খবর হয়ে দাঁড়ায়।
ঈদের মানে কি কেবল মাংসের ভাগ?
না বন্ধু। ঈদের মানে হলো হৃদয়ের ভাগ। ভালোবাসার ভাগ। যারা সমাজের প্রান্তে পড়ে থাকে-ভাঙা ঘরে, খালি পেটে-তাদের মুখে হাসি ফোটানোই ঈদের সবচেয়ে বড় কাজ। একেকটি পরিবার ঈদের দিনে এক টুকরো মাংস না পেলে তাদের জন্য এই উৎসব কেমন? ভাবি কি আমরা কখনও?
হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কোরবানি কি আজও জীবন্ত?
হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রমাণ করেছিলেন-আল্লাহর জন্য সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিকেও ত্যাগ করতে প্রস্তুত মানুষ কেমন হয়। আজ আমরা কী ত্যাগ করি? একদিনের জন্যও কি বিলাসিতা ত্যাগ করে গরিবের জন্য ভাত রান্না করি? এক বস্তা চাল কি দেই বস্তির মানুষের কাছে? একবেলা খালি পেটে থাকি কি সেই মানুষটার কথা ভেবে, যার সন্তান ঈদের দিনেও না খেয়ে থাকে?
প্রয়োজন পশু নয়, প্রয়োজন পরিশুদ্ধি
পশু কোরবানি করবো-কিন্তু তার আগে কি নিজের ভেতরের পশুটাকেও কোরবানি করছি? অহংকার, লোভ, হিংসা, দুর্নীতি-এগুলোই তো আমাদের ভেতরের আসল পশু। যদি ঈদের দিনে এসব বাঁচিয়ে রেখে কেবল গরু জবাই করি, তবে সে কোরবানি কিসের?
কোরবানি হোক দারিদ্র্য, বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে
আজ যখন ঈদ আসে, তখন আমি ভাবি-আমাদের সমাজে এত রক্ত কেন, কিন্তু এত পরিবর্তন নেই কেন? কেন প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কোরবানির মাংস হয়, অথচ গরিব মানুষ তবু গরিবই থাকে? কারণ ঈদের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করি না, কেবল আনুষ্ঠানিকতায় ভেসে যাই।
এবারের ঈদ হোক মানবিকতার বিপ্লবের সূচনা। যেন প্রতিটি বাড়িতে ভালোবাসার আলো পৌঁছে যায়, প্রতিটি চুলায় রান্না হয় সম্মান ও সহানুভূতির মাংস।
দেশবিদেশের সকল বন্ধু বান্ধব শুভানুধ্যায়ীকে জানাচ্ছি ঈদ মোবারক ।
ভালো থেকো, ভালো রাখো। আসুন, ঈদ হোক কেবল উৎসব নয়-একটি মানবিক প্রতিজ্ঞা।
শুভেচ্ছান্তে-
মো: আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক ও প্রকাশক
নবজাগরণ।
www.thenabajagaran.com





