বৃহত্তর নোয়াখালী রুটে ভাড়া নৈরাজ্য-সেনা অভিযানের দাবিতে জনমতের জোয়ার

 

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :
ঈদ মানে আনন্দ, ভালোবাসা আর ঘরে ফেরার উচ্ছ্বাস। কিন্তু এই আনন্দযাত্রা অনেকের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে নোয়াখালী-ঢাকা রুটে পরিবহন নৈরাজ্যের কারণে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, টিকিট কেলেঙ্কারি, হেলপারদের বেপরোয়া আচরণ-সব মিলিয়ে এই রুট হয়ে উঠেছে এক লুটপাটের মাঠ। সম্প্রতি গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় রাজধানী কিছুটা শৃঙ্খলার দিকে ফিরলেও, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর রুটে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

“ভাড়া ৫৫০ নয়, এখন ১০০০”: বাস্তব অভিজ্ঞতা
সরকার ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে আর বাস সার্ভিস মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। এমন নির্লজ্জতার সীমা ছাড়িয়ে কোথায় দাড়িয়েছে?এমন ঘটনা নতুন করে নয়-চলছে যুগ-যুগান্তর ধরে।

নোয়াখালীর সোনাপুর, মাইজদী, চৌমুহনী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কিন্তু ঈদের সময় এক শ্রেণির পরিবহন মালিক ও সুপারভাইজাররা যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

স্টার লাইন পরিবহন-যেটি ফেনী, চৌমুহনী ও কুমিল্লা হয়ে ঢাকায় যায়-সেখানে একটি সিটের জন্য ঈদের সময়ে নেওয়া হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১২০০ টাকা। অথচ নির্ধারিত ভাড়া ৬০০-৬৫০ টাকার মধ্যে।

কেকে ট্রাভেলস, যারা মূলত চৌমুহনী ও লক্ষ্মীপুর সোনাপুর-সেনবাগ-কানকিরহাট থেকে রাজধানীর গাবতলী-সায়েদাবাদে যাত্রী পরিবহন করে, তারা নির্দ্বিধায় দাবি করছে ৯৫০ টাকা, যার কোনো লিখিত রশিদ দেওয়া হয় না।

এছাড়া ফেনী রোডের লোকাল বাস সার্ভিসগুলো, যারা ঈদের সময়ে “স্পেশাল সার্ভিস” চালানোর নামে দুর্বল মানের বাসে দাঁড়িয়ে বা অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করে, তারা দেড়গুণ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, “স্পেশাল সার্ভিস” টার্মে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং দেখেও না দেখার ভান করে।

কেন এই অবস্থার অবসান জরুরি?

এই লুটপাট কেবল আর্থিক ক্ষতি নয়-এটি একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ঈদের এই যাত্রা যেন অবর্ণনীয় যন্ত্রণা। কোথাও কোনো নিয়ম নেই, নেই জবাবদিহিতা। পরিবহন মালিকরা ‘ঈদের মৌসুমে টাকা কামানোর সময়’ বলে বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন।

প্রশাসন নীরব, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া?
নোয়াখালী- ফেনী -লক্ষীপুর অঞ্চলের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের পেছনে থাকা কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা এই ভাড়া নৈরাজ্যের মূল উদ্যোক্তা-এমন অভিযোগও রয়েছে। জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ বা হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা অনেক সময় ম্যানেজ হয়ে যান, এমন অভিযোগ যাত্রীদের দীর্ঘদিনের।

সমাধানে সেনাবাহিনীর মোবাইল কোর্টের দাবি:
যেখানে সাধারণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ব্যর্থ, সেখানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপেই যে শৃঙ্খলা ফিরে আসে, তা আমরা দেখেছি গাবতলী বা চট্টগ্রাম টার্মিনালে। নোয়াখালী ও ফেনী রুটেও জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট চালু করা হোক।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ:
সোনাপুর,মাইজদী- চৌমুহনী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনালে সেনা মোতায়েন ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা।

স্টার লাইন, কেকে ট্রাভেলস, আস্থা পরিবহন, হিমাচল এক্সপ্রেসসহ অভিযুক্ত পরিবহনের লাইসেন্স পর্যালোচনা ও জরিমানা।

ডিজিটাল হেল্পলাইন চালু করে যাত্রীদের সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ তৈরি।

সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালু।

এবারের উদুল আজাহা উপলক্ষে নির্বিশেষে শেষ কথা হচ্ছে: ন্যায়ভিত্তিক সমাজে ভাড়া সন্ত্রাস বরদাস্ত নয়

ঈদ শুধুই আমদানি নির্ভর অর্থনীতির সময় নয়-এটি একটি জাতির সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। সেই সংস্কৃতিতে যখন ভাড়া নৈরাজ্য, দুর্নীতি আর নির্লজ্জ অর্থলিপ্সা ঘাড়ে চেপে বসে-তখন রাষ্ট্রকে জাগতেই হয়। আর যদি না জাগে, তাহলে জনগণই একদিন জাগিয়ে তুলবে।

বৃহত্তর নোয়াখালীবাসী আর ভাড়া সন্ত্রাসের শিকার হবে না-এটাই আমাদের দাবি। সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপে ফিরুক ন্যায্যতা, ফিরুক ঈদের আনন্দ।