রক্তে লেখা সাহসিকতার নাম: মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারী ও সেনবাগের জুলাই অভ্যুত্থান

রক্তে লেখা সাহসিকতার নাম: মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারী ও সেনবাগের জুলাই অভ্যুত্থান

এমএম তোহা :
জুলাই অভ্যুত্থান শুধু একটি ঘটনার নাম নয়-এটি এক জাতির অস্তিত্বের সংগ্রাম, আত্মমর্যাদার ঘোষণা এবং ঔপনিবেশিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক ঐতিহাসিক জাগরণ। সেই জাগরণে সেনবাগ উপজেলার মাটি সাক্ষী হয়ে থাকবে আরেকজন অবিস্মরণীয় সৈনিকের, যার নাম-মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারী।

বিগত স্বৈরশাসক ভারতের প্রভুত্ববাদী হস্তক্ষেপ ও তার দেশীয় দালালচক্রের বিরুদ্ধে যখন দেশের মানুষ জেগে উঠেছিল, তখন একজন কলমযোদ্ধা, সংগঠক ও চিন্তানায়ক হিসেবে আবু তাহের পাটোয়ারী শুধু সামনে ছিলেন না-তিনি ছিলেন নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে।

তিনি লিখেছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন-আর শেষপর্যন্ত নিজের দু’হাতে মারাত্মক আঘাত নিয়েও থেমে থাকেননি। গণতন্ত্রের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি হয়েছেন আহত, কিন্তু পরাজিত হননি। তাঁর সাহসিকতা, লেখনীর তীব্রতা এবং ত্যাগ সেনবাগের ইতিহাসকে করেছে গর্বিত ও সমৃদ্ধ।

আহত হলেও মাথা উঁচু
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত দমন-পীড়নে তিনি গুরুতর আহত হন। দুই হাতে মারাত্মক আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দীর্ঘ চিকিৎসা গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ হয়নি, আদর্শ থেমে যায়নি। আজ সেই চিকিৎসা শেষে, উপজেলাভিত্তিক যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে, তাঁর নাম সেনবাগ উপজেলার আহত তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে-এটি কেবল প্রশাসনিক স্বীকৃতি নয়, এটি ইতিহাসের ন্যায়বিচার।

সম্মান ও কৃতজ্ঞতা
এই পর্যায়ে এসে মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারী কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন-
সেনবাগ উপজেলা প্রশাসনকে
ছাত্রসমন্বয়কবৃন্দকে সেনবাগ থানাকে
নোয়াখালী জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিসকে

এবং তাঁকে সাহস ও স্নেহ দিয়ে আগলে রাখা সকল সহযোদ্ধা সাংবাদিকদের শুভানুধ্যায়ীকে এবং জুলাই বিপ্লবের আহত সৈনিক শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

তিনি বলেন, “আমার এই যন্ত্রণাবিদ্ধ হাতের প্রতিটি সেলুলায় লেখা আছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের গল্প। চিকিৎসা আমাকে বাঁচিয়েছে, কিন্তু আদর্শ আমাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।”

ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা:
এই বিপ্লবী মননের মানুষটি শুধু রক্ত দিয়ে নয়, লেখা দিয়ে প্রতিরোধ গড়েছেন। তাঁর প্রতিটি শব্দ ছিল একটি বুলেটের মতো, যেটি শাসকের বুক বিদীর্ণ করতো-একটি কলম, যা একেকটি আন্দোলনের সূচনা করতো। জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তাঁর লেখাগুলো আজ পরিণত হয়েছে ঐতিহ্যে।

তাঁর জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়-এই জাতিকে বাঁচাতে কেউ কেউ কলম হাতে যুদ্ধ করেছেন, কেউ রক্ত দিয়েছেন, কেউ আবার দুটোই করেছেন।

মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারীর অন্তর্ভুক্তি শুধু একজন আহত যোদ্ধার স্বীকৃতি নয়, এটি আগামী প্রজন্মকে জানিয়ে দেয়- আদর্শের জন্য ক্ষত হওয়াটাই গর্ব। সেনবাগের এই সন্তান আমাদের সকলের অহংকার, ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তাঁর নাম।

আমরা প্রার্থনা করি তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘ জীবনের জন্য। এবং অপেক্ষা করি, সেই দিনটির জন্য-যখন তাঁর মত সাহসী যোদ্ধাদের ত্যাগ স্বীকার হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত ইতিহাসের অংশ।
লেখক:প্রধান সম্পাদক-নবজাগরণ;মানবাধিকার সাংবাদিক।
www.thenabajagaran.com