লংমার্চ বনাম লাঠিচার্জ: জনগণের অভিমুখ কি গোপালগঞ্জ না গণভবন?

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী:
গোপালগঞ্জ অভিমুখী লংমার্চ।
একটা রাজনৈতিক দলের প্রতীকী কর্মসূচি মাত্র?
না, এটি ছিল একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার হৃদকম্পনে আঘাত হানার সাহসী প্রয়াস।
এনসিপি যখন ‘গোপালগঞ্জ অভিমুখে’ লংমার্চের ডাক দেয়, তারা আসলে পুতুল-গণতন্ত্রের মঞ্চ নয়, নাটকের পরিচালককেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

আর সেখানেই ভয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন কাঠামো।
গোপালগঞ্জ: প্রতীক না কেল্লা?
গোপালগঞ্জ কেবল একটি জেলা নয়-এটি একটি রাজনৈতিক শক্তির পবিত্র দুর্গ, একটি অস্পৃশ্য মূর্তির আশ্রয়স্থল-যেখানে চোখ তুলে তাকানো মানেই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ। অথচ সেখানে জনগণ যাচ্ছে, দলে দলে লংমার্চ করছে-কারণ তাদের প্রশ্ন আছে, ক্ষোভ আছে, প্রতিবাদ আছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির লংমার্চ তাই কেবল একদল রাজনৈতিক কর্মীর যাত্রা নয়, বরং এটি ছিল শোষিত, বঞ্চিত মানুষের হৃদয়ের বহিঃপ্রকাশ।

সংঘর্ষ নাকি বাধ্যতামূলক প্রতিরোধ?
লংমার্চে বাধা দেওয়ার নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ভূমিকা পালন করেছে, তা শুধুই ‘শৃঙ্খলা রক্ষা’ ছিল না-বরং ছিল একটি চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কৌশলগত প্রয়োগ।

গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এসেছে ঠিকই, কিন্তু কে করেছে?
কে প্রথম লাঠিচার্জ করলো?
কে কাদের উস্কানি দিল?
কে আগে কাদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়নি?

এগুলো যাচাই না করে রাষ্ট্র যেভাবে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে সন্ত্রাসবাদে পরিণত করতে চায়, তা আসলে তাদের দুর্বলতার নগ্ন প্রকাশ। জনগণের পক্ষে দাঁড়ানো মানেই যদি ‘অগ্নিসংযোগকারী’ উপাধি দেওয়া হয়, তবে আজ থেকে আগুনই প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠবে।

এই পথ রাজপথ, এখানে ঘুমায় বিপ্লব!
“রাজনীতি মানেই ক্ষমতা নয়, এটি প্রতিরোধের শিল্প” -এনসিপি সেই শিল্পের একটি সাহসী ক্যানভাস এঁকেছে।
তারা দেখিয়েছে‘ভোট চুরি করে রাষ্ট্র চালানো যায়, কিন্তু চেতনার লংমার্চ থামানো যায় না।’

গোপালগঞ্জ অভিমুখী লংমার্চ হচ্ছে সেই দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের ফাটল ধরা বিস্ফোরণ। এটা শুরু, শেষ নয়। ক্ষমতার মুকুটধারীরা যদি এটাকে দমন করতে চায়, তবে ভুল করছে। কারণ, লাঠি দিয়ে আদর্শ থামানো যায় না।

রাষ্ট্র কি সত্যিই প্রস্তুত গণতন্ত্রের জন্য?
এই ঘটনায় রাষ্ট্র আরেকবার প্রমাণ করেছে, তারা এখনো গণতন্ত্রকে ভয় পায়। তারা এখনো মনে করে, গণতন্ত্র মানে নেতার বন্দনা, নির্বাচন মানে অনুমোদিত অনুগতদের নাটকীয়তা, আর বিরোধী কণ্ঠ মানে রাষ্ট্রবিরোধিতা।

এনসিপির এই লংমার্চ শুধু সরকার নয়,এই পুরো পঁচে যাওয়া রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। আর সে জন্যই রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া এসেছে আক্রমণাত্মক,হিংস্র ও প্রতিহিংসাপরায়ণ।

আগুন কার হাতে? পেট্রোল বোমা কার নির্দেশে?
একটা কথাই বারবার আসে:‘কোন পক্ষ আগুন ধরিয়েছে?’
কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন:
এই আগুন কেন জ্বলছে?
এটা কি রক্তপাতের নেশা, নাকি রাষ্ট্র ব্যবস্থার গলিত হাড়গোড়ের গন্ধে ধ্বংসের ঘোষণা?

যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র নিজেই স্বচ্ছ না হয়, সত্য প্রকাশ না করে, স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন না বসায়-ততক্ষণ এই সহিংসতার দায় তাদের ঘাড়েই থাকবে। আমরা জনগণ হিসেবে জানতে চাই:

আগুন কে ধরালো?
গুলি কে চালালো?
প্রতিবাদ কেন দমন করা হলো?

এখন সিদ্ধান্ত সময়ের?
আমরা এক সংকটজনক মুহূর্তে আছি। গোপালগঞ্জ অভিমুখী লংমার্চ থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ আজ এক অনিবার্য প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে: এই রাষ্ট্রটা কাদের?
চাঁদাবাজদের?
লুটেরাদের?
নাকি জনগণের?

নাহিদ ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টি হোক এক নতুন কণ্ঠ-এক নতুন প্রবাহ-যে প্রবাহ রাষ্ট্রকে বদলাবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে, আর বিদ্যমান চক্রান্ত-নির্ভর রাজনৈতিক নাটককে গুঁড়িয়ে দেবে।

গোপালগঞ্জের ইউএনও’র গাড়িতে হামলা!?
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘জুলাই পদযাত্রা’কে কেন্দ্র করে আজ বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাটি সদর উপজেলার গান্ধীয়াশুর এলাকায় ঘটেছে এবং এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ইউএনও জানান,জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে পদযাত্রা ও পথসভা করার কথা রয়েছে। তাদের কর্মসূচি বানচালের জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা প্রথমে পুলিশের ওপর হামলা করে, পরে তার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।

আমরা আর দমন দেখতে চাই না, আমরা প্রত্যাবর্তন দেখতে চাই-গণতন্ত্রের, ন্যায়ের, স্বাভাবিক মানুষের।