নতুন বাংলাদেশের ডাক: অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বান ও আমাদের দায়িত্ব

মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারী:
আজ ইতিহাসের আরেকটি নতুন বাঁকে দাঁড়িয়ে আমরা স্মরণ করছি সেই সাহসী আত্মত্যাগীদের,যাদের রক্তের স্পন্দনে জন্ম নিয়েছিল একটি জাগ্রত জনতার আশা-‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন। ‘জুলাই শহীদ দিবস’ আজ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে,আর ঠিক এই দিনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের সামনে রেখেছেন এক অনন্য আহ্বান-ঐক্যবদ্ধভাবে বৈষম্যহীন,দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত একটি রাষ্ট্র গড়ার প্রতিজ্ঞা।

এই আহ্বান শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি এক বিপ্লবী রাষ্ট্রচিন্তার সূচনা। এমন একটি রাষ্ট্রচিন্তা যেখানে রাষ্ট্রের কেন্দ্রে থাকবে জনগণ, পেছনের সারিতে থাকবে না কেউই-ধর্ম, অঞ্চল, লিঙ্গ কিংবা অর্থনীতির বৈষম্যে বিভক্ত না হয়ে, সব নাগরিক হবে সমান মর্যাদার অধিকারী।

জুলাই শহীদরা কী চেয়েছিলেন?
তারা চেয়েছিলেন-
এক জনগণের রাষ্ট্র, যেখানে পুলিশ নয়, মানুষ নিরাপত্তার প্রতীক হবে। এক সুশাসনের বাংলাদেশ, যেখানে দারিদ্র্য নয়, থাকবে অর্থনৈতিক ন্যায্যতা।

এক আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে নির্বাচন নয়, জনগণের মত হবে ক্ষমতার উৎস।
এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এক দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র, যেখানে রাষ্ট্রীয় পদ ব্যবহার হবে সেবা ও স্বচ্ছতার জন্য, শোষণ ও লুটপাটের জন্য নয়।

অথচ বাস্তবতা কী?
আমরা জানি, বিগত দশকে রাষ্ট্র যেভাবে লুটেরাদের হাতে বন্দি ছিল-তারপরের এই পরিবর্তন হঠাৎ আসেনি। এটিকে সম্ভব করেছে রক্ত, গণআন্দোলন, ছাত্র-শ্রমিক-নারীর ত্যাগ আর কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিপ্লব তো এখানেই থামে না। রাষ্ট্রের গঠন, সংবিধান, প্রশাসন-সবকিছু নতুন করে নির্মাণ করতে না পারলে, এই ত্যাগ বৃথা যাবে।

অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বান কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অধ্যাপক ইউনূস কেবল একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ নন-তিনি এখন সেই সংবিধান সংস্কারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা একজন জাতীয় রূপান্তরের স্থপতি। আজকের এই বাণীতে তিনি রাষ্ট্রীয় স্তরে ‘জুলাই চেতনা’কে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটি শুধু শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, এটি এক নতুন রাজনৈতিক দিগন্তের উন্মোচন।

তিনি যখন বলেন, “দৃপ্ত পদভারে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে সবাই এগিয়ে যাবো”, তখন বুঝতে হবে এটি কেবল ভাষাগত অলংকার নয়, এটি একটি স্টেট ক্রাফট প্ল্যান-যেখানে রাষ্ট্রীয় নকশা রচনার কাজ শুরু হয়েছে।

আমাদের করণীয় কী?
১. শহীদদের স্মরণ নয়, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।
২. একটি নতুন সংবিধান রচনার দাবিতে সাংবিধানিক কাঠামো সংস্কারের জন্য গণদাবি গড়ে তুলতে হবে।
৩. দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-স্বৈরাচারী রাজনীতিকদের একঘরে করতে হবে-আইন ও নৈতিকতার শক্তি দিয়ে।
৪. ‘জুলাই চেতনা’কে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস ভুলে না যায়।

‘নতুন বাংলাদেশ’ এক অলীক কল্পনা নয়-এটি বাস্তব সম্ভাবনা, যদি আমরা সাহস করি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে। অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বান আমাদের কানে বাজুক এক বিপ্লবী ঘণ্টাধ্বনির মতো। আজ, ১৬ জুলাই, আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক-এই শহীদদের রক্ত যেন ইতিহাসের পাতায় আটকে না থাকে, বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নীতিতে, আইনে, ন্যায্যতায় তার প্রতিচ্ছবি যেন দৃশ্যমান হয়।
জুলাই চেতনা হোক নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের প্রধান ভিত্তি।