জনতার বজ্রনিনাদে কাঁপলো রাজধানী- জামায়াতের

নবজাগরণ রিপোর্ট : ১৯ জুলাই ২০২৫
আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এক অভূতপূর্ব জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। ইসলামী মূল্যবোধ, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকে আয়োজিত এই জাতীয় সমাবেশে লাখো জনতার ঢল নামে। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথ, মহাসড়ক, গলি-সব জায়গা থেকেই মিছিল আর স্লোগানে ছেয়ে যায় রাজধানী।

চরম নিরাপত্তা, কিন্তু প্রতিরোধ অপ্রতিরোধ্য
মহাসমাবেশকে ঘিরে মোবাইল নেটওয়ার্কে বিভ্রাট, পুলিশের কঠোর অবস্থান, ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ব্যারিকেড-সবকিছু উপেক্ষা করেই লাখোলাখো মানুষ অংশগ্রহণ করে।
সোহরাওয়ার্দীর চারপাশে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। সাধারণ মানুষের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। তবুও জনতার ঢল থামেনি।
জনতার স্লোগানেই স্পষ্ট বার্তা
সমাবেশে এক স্লোগান ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো:

“চাঁদাবাজদের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, গুঁড়িয়ে দাও!”
“বাংলার চাঁদাবাজদের মাটিতে থাকতে দেওয়া হবে না!”

মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন যাঁরা:
এই ঐতিহাসিক সমাবেশে দেশের ইসলামী ও গণতান্ত্রিক শক্তির প্রায় সব নেতারাই একত্রিত হয়েছেন। বক্তৃতা দিয়েছেন-ড. শফিকুর রহমান -আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি;মাকসুদুর রহমান -সেক্রেটারি জেনারেল, জামায়াত ইসলামী;আনিসুর রহমান -নায়েবে আমীর;মাওলানা রফিকুল ইসলাম – ইসলামী ঐক্যজোট;
মুফতি মাহমুদুল হাসান -বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস;
হাফেজ ইকবাল আহমেদ -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ড.সাখাওয়াত হোসেন – খেলাফত আন্দোলন;আবু তাহের মিয়া -ইসলামী মহাজোট;মাওলানা জসিম উদ্দিন – স্বতন্ত্র আলেম পরিষদ; মো. রায়হানুল হক -নবপ্রজন্ম ছাত্র আন্দোলন;শেখ আব্দুল হান্নান -ইসলামী যুব শাখা;
মাওলানা ফারুক আজাদ -ইসলামি শ্রমিক সংগঠন;
ভিপি নুরুল হক নুর -চেয়ারম্যান,গণঅধিকার পরিষদ।

জনতার চোখের তারা, রাষ্ট্রবিপ্লবের কণ্ঠস্বর
এই সমাবেশের সবচেয়ে আলোচিত বক্তা ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের চেয়ারম্যান ভিপি নুরুল হক নুর। আমিরে জামায়াত ডা:শফিকুর রহমান তিনবার অসুস্থ হয়ে মঞ্চে পড়ে গেলেও, হার মানেননি। বসে থেকেও তিনি তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন।
তার কণ্ঠে ছিল না ক্লান্তির লেশমাত্র। বরং সেই কণ্ঠে ছিল-

“আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে-বাংলার মানুষ পরিবর্তন চায়।
খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী রেখে, তরুণদের মুখ বন্ধ করে, ইসলামী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে বিগত সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি।
ইসলামী শক্তি ও গণতান্ত্রিক তরুণরা আজ একসাথে-এই রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে হবে!”

মহাসমাবেশে অংশ গ্রহনকারি অন্যান্য দরগুলো হচ্ছে:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি;গণঅধিকার পরিষদ;ইসলামী ঐক্যজোট;বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস;
খেলাফত আন্দোলন;ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ;ইসলামী মহাজোট;স্বতন্ত্র আলেম পরিষদ;নবপ্রজন্ম ছাত্র আন্দোলন।

রাজনীতির নতুন সংলাপ: ধর্ম, গণতন্ত্র ও মুক্তি
এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে, ইসলামপন্থী দল ও তরুণ প্রজন্মের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো একজোট হয়ে যাচ্ছে একটি বড় রাজনৈতিক অক্ষ গঠনের দিকে।
জনতার বার্তাটি পরিষ্কার-

❝বাংলাদেশে আর চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, পশ্চিমপন্থী ফ্যাসিবাদ চলবে না।
শোষণহীন, ন্যায়ভিত্তিক, ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্র চাই-এখনই।❞

একটি ঐক্যের সূচনা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধুমাত্র একটি সমাবেশ নয়-এটি একটি বৈপ্লবিক রাজনৈতিক রূপরেখার সূচনা।
যেখানে ধর্মীয় দল, তরুণ নাগরিক নেতৃত্ব এবং রাজপথে সক্রিয় গণতান্ত্রিক শক্তির মিলন ঘটছে-অসন্তোষ, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে।

এই যুগান্তকারী জনসমাবেশ আমাদের শেখায়-নেতৃত্ব মানে শুধু কথায় নয়, আত্মত্যাগে।
ভিপি নুরের মতো তারুণ্যদীপ্ত; অদম্য নেতৃত্বই পারে জাতিকে ঘুম থেকে জাগাতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে পথে নামাতে।

আমিরে জামায়াত ডা.শফিকুর রহমান রাতে সোসাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন
এখন আমি অনেকটাই সুস্থ। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশ্রামের জন্য বাসায় এসেছি।

আমার এ সাময়িক অসুস্থতার কারণে আজকের সমাবেশে যে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটি আমার ইচ্ছাকৃত নয়। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন কল্যাণ রেখেছেন।

অসুস্থ হওয়ার পরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানসহ দেশ-বিদেশে অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন ও দো’য়া করেছেন।

হাসপাতালে স্বল্প সময়ে থাকাকালীন বিএনপি মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জনাব শফিকুল আলম, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদসহ নেতৃবৃন্দর একটি টিম, খেলাফত মজলিসের আমীর হযরত মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ, মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের এবং খেলাফত মজলিসের অন্যতম সিনিয়র নেতা জনাব আহমদ আলী কাসেমী, খেলাফত আন্দোলন, এনসিপি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সম্মানিত নেতৃবৃন্দ তাঁরাও সরাসরি খোঁজখবর নিয়েছেন।

দেশ-বিদেশে অসংখ্য সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, এমনকি বাংলাদেশীদের বাহিরেও অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন মাননীয় উপদেষ্টাসহ আরো অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন। আমি তাদের সকলের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। দো’য়ার জন্য ঋণী। তাঁদের এ ভালোবাসা ও আন্তরিকতার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকলকে যেন দান করেন।

রাব্বুল আলামিন তাঁর এ গোলামকে বাকি জিন্দেগি তাঁর পছন্দমত মানবতার জন্য কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সমাবেশে অসুস্থ হয়ে পড়া!
এর আগে আজ শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যান জামায়াত আমির। তখন মঞ্চে থাকা নেতারা তাকে ধরে তোলেন।

মিনিটখানেক অপেক্ষা করে ডা. শফিকুর রহমান আবার বক্তব্য শুরু করেন। কিন্তু আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। এরপর মঞ্চে থাকা দলের নেতারা তাকে ধরে বসান। পরে না দাঁড়িয়ে মঞ্চের ওপর পা মেলে বসেই বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় তার পাশে চিকিৎসকদেরও দেখা যায়।

জামায়াতের কেউ এমপি-মন্ত্রী হলে সরকারি প্লট-ফ্ল্যাট গ্রহণ করবে না: আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আল্লাহর ইচ্ছা ও জনগণের ভালোবাসায় বাংলাদেশে মানুষের যদি জামায়াতে ইসলামী সেবা করার সুযোগ পায়-তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে কোনো এমপি-মন্ত্রী সরকারি প্লট-ফ্ল্যাট গ্রহণ করবে না, ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়িতে চড়বে না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ ও আমিরের অঙ্গীকার

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে আজ শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে জামায়াত আমির মঞ্চে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তিনি বলেন, “আমি এখানে জামায়াতের আমির হিসেবে কথা বলতে আসিনি। কারো পক্ষ হয়ে কথা বলতে আসিনি। আমি ১৮ কোটি মানুষের হয়ে কথা বলতে এসেছি। কিন্তু শরীর আমাকে সহযোগিতা করেনি। এটাও আল্লাহর ইচ্ছা-আমি এখন কথা বলতে পারছি।”

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আগামীতে জামায়াতে ইসলামী থেকে যদি কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয় তাহলে কোনো এমপি ও মন্ত্রী সরকারি প্লট গ্রহণ করবেন না, ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়িতে চড়বেন না, নিজের হাতে টাকা চালাচালি করবেন না। নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন তাহলে কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দেশের ১৮ কোটি মানুষের সামনে প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য থাকবেন।

জামায়াত আমির বলেন, “চাঁদা আমরা নেবো না, দুর্নীতি আমরা করবো না। চাঁদা আমরা নিতে দেবো না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করবো না। এই বাংলাদেশটাই আমরা দেখতে চাই।”

জামায়াত আমির জানান, জামায়াতের আজকের প্রোগ্রামে তিনজন মারা গেছেন। এদের একজন সমাবেশস্থলে মারা যান। তিনি নিহতদের জন্য দোয়া করে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
আল্লাহ যেন এ জাতিকে প্রকৃত নেতা, সত্যিকারের পথপ্রদর্শক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র উপহার দেন।

বিস্তারিত জানতে পড়ুন অনলাইনে শেয়ার করুন : www.thenabajagaran.com