উত্তরায় মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা: মাইলস্টোন কলেজে বিধ্বস্ত বিমান, নিহত ১৯, আহত ১৬৪, সেনাবাহিনীর দুর্ধর্ষ উদ্ধার অভিযান

উত্তরা, ঢাকা ২১ জুলাই ২০২৫ নবজাগরণ ডেস্ক:
ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন কলেজের ছাদে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত ও ১৬৪ জন আহত হয়েছেন। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ উদ্ধার অভিযান একটি বিপর্যয়কে রূপান্তর করে তুলেছে এক নাটকীয় মানবিক লড়াইয়ে।

কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
সোমবার দুপুর ১২টা ৪২ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরা দিয়াবাড়ির আকাশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন কলেজের ছাদে বিধ্বস্ত হয়। সরাসরি সংঘর্ষে কলেজের ছাদ ও তৃতীয় তলায় আগুন ধরে যায়।

দুর্ঘটনার ফলে মুহূর্তেই দগ্ধ হয়ে নিহত হন কলেজের তিনজন কর্মচারী ও চারজন শিক্ষার্থী। পাইলটসহ বাকিরা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বা পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে মারা যান।

উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী ও হেলিকপ্টার টিম
প্রথম ধাক্কায় ১০ তলা ভবনের ছাদে আটকে পড়েন প্রায় ৭০–৮০ জন শিক্ষার্থী। সিঁড়ি ধোঁয়ায় বন্ধ, লিফট অকেজো। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায়। এ সময় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও প্যারা-রেসকিউ টিম দ্রুত হস্তক্ষেপ করে।

ছাদ থেকে দড়ি ঝুলিয়ে একে একে নামিয়ে আনা হয় আহত ও আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের।
ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
প্রায় তিন ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী ৭২ জনকে সরাসরি ছাদ থেকে উদ্ধার করে।

আহতদের অবস্থা ও চিকিৎসা কেন্দ্রসমূহ
আহতদের মধ্যে অধিকাংশই আগুনে দগ্ধ ও ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন:

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট: ৪৮ জন
উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল: ৩৬ জন
কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল: ২৭ জন
কুর্মিটোলা, সিএমএইচ, লুবানা ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালে বাকি আহতরা
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সেল আহতদের জন্য হেল্পলাইন চালু করেছে:
📞 হটলাইন: ০১৯৪৯-০৪৩৬৯৭
রাষ্ট্রীয় শোক ও প্রধানউপদেষ্টার শোকবার্তা
প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক শোকবার্তায় বলেন,
“এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা জাতির জন্য এক গভীর দুঃখের ঘটনা। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”

সরকার ২২ জুলাই মঙ্গলবারকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

আকাশপথে প্রশিক্ষণের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনবহুল রাজধানীর আকাশে প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনাটি আমাদের সুশাসন ও বিমান নিরাপত্তা নীতির দুর্বলতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। সিভিল অ্যাভিয়েশনের মতে, ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে ঢাকার বাইরে নির্ধারিত আকাশপথে স্থানান্তরের বিষয়টি চিন্তা করা জরুরি।

নবজাগরণ-এর মন্তব্য:
এই দুর্ঘটনা কেবল প্রযুক্তিগত বা প্রাকৃতিক নয়-এটি আমাদের দায়িত্বহীন পরিকল্পনার ফল। সেনাবাহিনীর দ্রুত উদ্যোগ না থাকলে প্রাণহানি আরও ভয়াবহ হতো। এখন সময় এসেছে আমাদের নগর পরিকল্পনা, বিমান নীতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্যোগ প্রস্তুতির বিষয়গুলোতে নতুন করে দৃষ্টি দেওয়ার।

নিহতদের স্মরণে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। আহতদের সুস্থতা কামনায় সংহতি জানাই।
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫
ফলো করুন: facebook.com/nabajagaran/www.thenabajagaran.com