মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
২২ জুলাই, ২০২৫-তারিখটা শুধু একটি রাজনৈতিক দলের জেলা সফর নয়, এটি এক নতুন গণআকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। এটি সেই আহ্বানের উত্তর, যা শুরু হয়েছিল ঢাকার রাজপথে, পুলিশের বুলেট আর ছাত্র-জনতার রক্তে লেখা হয়েছিল যার প্রথম অধ্যায়-ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থান। আজ তার উত্তরসূরিরা-জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-নোয়াখালীর মাটিতে এসে দাঁড়াচ্ছে সেই গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রত্যয়ে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ নোয়াখালী সফর?
নোয়াখালী-যেখানে পূর্বে শাসকগোষ্ঠী শুধু ভোট চাইতে এসেছিল, প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলে গিয়েছিল, সেখানে এবার আসছে এক নতুন রাজনৈতিক শক্তি-যারা চায় রাষ্ট্রের পুনর্গঠন, শাসনব্যবস্থার আমূল সংস্কার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
এনসিপি জানে-এই রাষ্ট্রব্যবস্থা একদল সুবিধাভোগী আমলা-উপরতলার হাতে বন্দি। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস, স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাণিজ্যে পরিণত, বিচারব্যবস্থা দুর্নীতির আখড়া আর প্রশাসন রীতিমতো গ্যাং-স্টার পরিচালিত। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তরুণ-যুবা যারা রাস্তায় নেমেছিল, তারা এসবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। আজ সেই আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিণতিই এনসিপি।
এই সফর শুধু সফর নয়-এ এক শপথ!
আগামীকাল ২২ জুলাই, সকাল ১১টা, নোয়াখালীর মাইজদীর সুপার মার্কেট মোড়ে যখন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা দাঁড়াবেন, তখন তারা শুধু বক্তব্য দেবে না-তারা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রস্তাব নিয়ে আসবে। এই প্রস্তাব চায়:শিক্ষায় গণতান্ত্রিক সংস্কার
কৃষক-শ্রমিককে উৎপাদনের মালিক বানানো
সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে জনগণের জবাবদিহিতায় আনা
সাংবিধানিক কাঠামো পুনর্গঠন করে জনগণকেই রাষ্ট্রক্ষমতার উৎসে পরিণত করা
এনসিপি শুধু একটি দল নয়-এ এক আদর্শিক আন্দোলন
বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে, ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্র বদলায়নি।জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে-এবার শুধু সরকার নয়, রাষ্ট্রই পাল্টাতে হবে। সেই রাষ্ট্র হবে জনগণের মালিকানায়, যেখানে পাহাড়ি-বাঙালি, উপকুলীয়; হিন্দু-মুসলমান, শহর-গ্রাম সবাই সমান মর্যাদায় বসবাস করবে।
সবাই আসুন, নোয়াখালী থেকে নতুন অধ্যায় শুরু হোক
নোয়াখালী শুধু রাজনৈতিক সফরের কেন্দ্র নয়, এটি প্রতীক হয়ে উঠতে পারে এক জাতীয় পুনর্জাগরণের-যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বলবে, “আমরাও রাষ্ট্র গড়ার দাবিদার”। তাই এ আহ্বান শুধু এনসিপি’র সমর্থকদের নয়, জুলাই অভ্যুত্থানের সব সপক্ষ শক্তি, তরুণ, ছাত্র, নারী, শ্রমিক, কৃষক এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নে বিশ্বাসী সবার প্রতি।
চব্বিশে জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক ভুমিকা পালনে নোয়াখালীবাসীর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবদান অনস্বীকার্য
২২ জুলাইয়ের এই জনসমাবেশ-এটি হবে এক শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের অগ্রপদ। যারা ইতিহাসে নিজেদের নাম লেখাতে চায়, তারা যেন মাইজদী মোড়ে উপস্থিত হয়।এনসিপি হয়ত রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই,কিন্তু তাদের হাতে আছে ভবিষ্যতের নকশা। আর ভবিষ্যৎ তৈরির লড়াইয়ে একজন মানুষও যেন অনুপস্থিত না থাকেন-এই হোক আমাদের নোয়াখালী শপথ।
লেখক:সম্পাদক,নবজাগরণ
জুলাই যোদ্ধা-আহত সাংবাদিক।
প্রকাশের তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৫