নবজাগরণ ডেস্ক রিপোর্ট-৮ আগস্ট ২০২৫
গত বছরের আজকের এই দিনে-২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, সেনাবাহিনী কর্তৃক সেনবাগ উপজেলার ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নের মইশাই পালপাড়ার চিকিৎসক দুলাল চন্দ্র পালের মেয়েকে ইস্যু করে পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারনে সেনাবাহিনী কর্তৃক তিনজনকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এই ঘটনার পেছনের বাস্তবতা একেবারেই আলাদা-তা ছিল একটি পারিবারিক বিরোধ, যার প্রেক্ষিতে ১৪ নভেম্বর ২০২৩ সালে একটি পিটিশন মামলা (নং ১৬৯ সিআর / মামলাঃ ৪৬০) নোয়াখালী জেলা আদালতে দায়ের করা হয়, যা এখনো বিচারাধীন।
সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম মিজানুর রহমান ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “২০২৩ সালের একটি পুরাতন পারিবারিক ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলাটি দায়ের হয়েছিল এবং এটি বর্তমানে আদালতের বিচারের অপেক্ষায় আছে। এটি একটি সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত ইস্যু নয়।”
বিভ্রান্তির উত্স কী?
গত কয়েকদিন ধরে আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পুরনো ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন এটি সাম্প্রতিক কোনো রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের অংশ। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে।
চিকিৎসক দুলাল চন্দ্র পাল এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন-
“একটি মহল পরিকল্পিতভাবে পুরনো একটি পারিবারিক ঘটনাকে নতুন করে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক নিপীড়নের সম্পর্ক নেই।”
ভারতের মিডিয়া কভারেজ ও বহিরাগত আগ্রহ
ঘটনার আকস্মিক ও নাটকীয় চেহারায় রূপ নেয়ার অন্যতম কারণ-ভারতীয় কিছু অনলাইন মিডিয়ার অতি উৎসাহী কভারেজ। ২০২৪ সালের ৮ আগস্টে ভারতের কয়েকটি বাংলা ও হিন্দি নিউজপোর্টাল এই ঘটনাটিকে “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়ন” আখ্যা দিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বে উত্তীর্ণ করার চেষ্টা চালায়। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পারিবারিক বা স্থানীয় ঘটনায় বিদেশি মিডিয়ার হস্তক্ষেপ প্রমাণ করে, একটি চক্র নানাভাবে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে আগ্রহী।
প্রশ্ন উঠে: কারা এই ঘটনার পেছনে?
এই ঘটনার মূল রহস্য আসলে এখানেই-কে বা কারা এই পুরনো ঘটনাকে হঠাৎ করে ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে নতুন করে সামনে আনছে?এটি কি শুধুই রাজনৈতিক অপপ্রচার?
না কি এর পেছনে আছে ভারতীয় মিডিয়া বা গোয়েন্দা সংস্থার কোনো বড় এজেন্ডা?
রাষ্ট্রকে অস্থির করার জন্য কি এটাই এক নতুন প্রপাগান্ডা মডেল?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করাটা এখন অত্যন্ত জরুরি। বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা?
বিচারাধীন কোনো মামলার প্রেক্ষিতে যদি গণমাধ্যমে একতরফা প্রচার চালানো হয় এবং সেই প্রচার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করে-তাহলে তা শুধু ন্যায়বিচারকে প্রভাবিত করে না, বরং দেশের স্বার্বভৌমত্বের ওপরও আঘাত হানে।
এমন উদাহরণ অতীতে বহুবার দেখা গেছে যেখানে পুরনো ভিডিও, বিভ্রান্তিমূলক ক্যাপশন ও প্রোপাগান্ডা কনটেন্ট ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। সেনবাগের দুলাল চন্দ্র পালের ঘটনাও সম্ভবত সেই ধারারই একটি নতুন অধ্যায়।
আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই-
বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্ট শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
বিচারাধীন মামলা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করা থেকে সাবধান থাকুন।
দেশবিরোধী অপপ্রচারে না জড়িয়ে বরং প্রকৃত সত্য উন্মোচনে সচেতন থাকুন।
বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা, বিচারপ্রাপ্তি ও সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব-এবং সেটি পারিবারিক কিংবা রাজনৈতিক হোক, বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখেই সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়াই কাম্য।





