মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
কলকাতায় ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিস খোলার ঘটনাটি নিছক কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ নয়-এটি বাংলাদেশের ভূরাজনীতি,অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার ওপর এক ভয়ানক আঘাত। বিবিসির খবরে প্রকাশিত এই তথ্য যে কতটা গুরুতর এবং তাৎপর্যপূর্ণ, তা নিয়ে এখন জাতির সামনে স্পষ্ট ও নির্ভীক আলোচনা আবশ্যক।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আরেক রূপ
আওয়ামী লীগ কোনো সাধারণ রাজনৈতিক দল নয়- এ দল এক সময় স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছিল, আবার সেই দলই পরবর্তীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতালিপ্সু ও দীর্ঘস্থায়ী দুঃশাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সেই দল যদি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন নিয়ে ভারতে আনুষ্ঠানিক অফিস স্থাপন করে-তাহলে এর অর্থ কী?
এর অর্থ হল, ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে একটি দল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চায়। একটি ক্ষমতাচ্যুত দল, যার জনগণের রায় নেই, তারাই যদি ভারতের মাটি থেকে ‘প্রবাসী অফিস’ খুলে বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে, তাহলে সেটা তো পরস্পরবিরোধী রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের সরাসরি লঙ্ঘন।
জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতার বড় উদাহরণ
প্রশ্ন হচ্ছে-কেন বাংলাদেশের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা এই খবর আগেভাগে জানতে পারল না? কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন কী করছিল এতদিন?
এত সাংবাদিক, এত কলকাতা প্রতিনিধি থাকার পরেও বাংলাদেশের কোনো মিডিয়া কেন এই সংবাদ আগে প্রকাশ করতে পারল না?
এই ঘটনাগুলো আমাদের কূটনৈতিক অবসান, রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার নগ্ন প্রমাণ।ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র? এটা কি ১৯৭১-পরবর্তী ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
আমরা ভুলে যাইনি-১৯৭১-এ ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল,কিন্তু তার পরেই সেই ভারত আমাদের জল, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্যিক অসমতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের দীর্ঘ ইতিহাস রচনা করেছে। এখন যদি আবার সেই ভারত তার ভূখণ্ডে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলকে আশ্রয় দেয়-যার লক্ষ্য হতে পারে “প্রবাসী সরকার”ঘোষণা, তাহলে কি এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ নয়?
আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সম্পর্ক বহু পুরনো। কিন্তু এখনকার এই অফিস খোলা কেবল সম্পর্ক নয়-এটি একটি পলিটিক্যাল ফ্রন্ট। তাদের লক্ষ্য হতে পারে:অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাধাগ্রস্ত করা
দেশকে ‘ফেল স্টেট’ প্রমাণ করার চক্রান্ত
ভারতে অবস্থানরত সমর্থকদের ব্যবহার করে প্রবাসী সরকার বা ছায়া সরকার গঠন জাতিসংঘ, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করে ‘গণতন্ত্র পুনঃস্থাপনের’ নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও ছাত্র-জনতার হত্যাকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব চলাকালে ভারতীয় কিছু মিডিয়া যেভাবে প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছে, তা মোটেও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। তারা আন্দোলনকারীদের ‘বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী’, ‘চরমপন্থী’ বলেছে। এমনকি অনেকে সরাসরি ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় ‘বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের’ ইঙ্গিত দিয়েছে। আর এখন দেখা যাচ্ছে-যারা আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল,তারাই কলকাতায় অফিস খুলছে!
একদিকে ছাত্র-জনতা নিহত হচ্ছে রাস্তায় রক্ত ঝরিয়ে, অন্যদিকে ভারতীয় ভূখণ্ডে বসে আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করছে। এই দ্বিচারিতা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম আর সহ্য করবে না।
কী করতে হবে এখনই?
১. বাংলাদেশ সরকারকে এখনই বিবিসির রিপোর্ট তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করে জাতিকে অবহিত করতে হবে।
২. কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস বন্ধে ভারত সরকারের কাছে কড়া কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানাতে হবে।
৩. প্রয়োজনে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে ‘নন-ইন্টারফেয়ারেন্স’ চুক্তির লঙ্ঘন বিষয়ে অভিযোগ তুলতে হবে।
৪. কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের ব্যর্থ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সব রাজনৈতিক দলের উচিত দেশপ্রেমে একমত হয়ে এই ঘটনায় জাতীয় ঐক্য গঠন করা।
এটি একটি বিষফোড়া, দেরি হলে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়বে
কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস খোলা এক নতুন ধরনের হাইব্রিড যুদ্ধের সূচনা হতে পারে- যা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা গণতন্ত্র, এবং স্বাধীনতাকে ভেতর থেকে ধ্বংস করতে সক্ষম। এই ঘটনাকে উপেক্ষা করা মানেই ভবিষ্যতের জন্য আরো বড় বিপদের বীজ বপন করা।
এখন সময় এসেছে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার। এই অফিস বন্ধ না হলে, ভারতের সাথে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। কারণ স্বাধীনতা অর্জন করেছি -কারো দয়ায় নয়, আমাদের রক্তে। এখন সেই রক্তের মর্যাদা রক্ষার সময়।
www.thenabajagaran.com





