জনজীবনে আতঙ্ক,অবহেলায় বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
মোঃ শহিদুল ইসলাম খোকন:
লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী মহাসড়ক-নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার মানুষের অন্যতম প্রধান যোগাযোগের lifeline। প্রতিদিন হাজারো মানুষ কর্মস্থল, ব্যবসা কিংবা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে এই সড়কে যাতায়াত করেন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক আজ পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। বিশেষ করে “আনন্দ পরিবহন” নামের একটি বাস সার্ভিস যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের সমার্থক হয়ে উঠেছে।
শনিবার সকালে চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুরগামী আনন্দ পরিবহনের একটি বাস চন্দ্রগঞ্জস্থ কফিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ গেইটের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই অন্তত ৩ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন আরও ১৫ জন যাত্রী। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের শেখপুর গ্রামের জয়নাল ও মোরশেদ।
চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ফয়জুল আজীম নোমান জানিয়েছেন-আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বেপরোয়া গতি ও অনিয়মের রাজত্ব
স্থানীয় যাত্রী ও সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেছেন-
ফিটনেসবিহীন যানবাহন: আনন্দ পরিবহনের অধিকাংশ বাসই যথাযথ ফিটনেস ছাড়াই সড়কে চলছে।
অদক্ষ ও প্রশিক্ষণহীন চালক: অধিকাংশ চালকের নেই সঠিক প্রশিক্ষণ, ফলে তারা যাত্রীবাহী বাস চালাচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। গতির প্রতিযোগিতা: চালকেরা একে অপরকে পেছনে ফেলতে গিয়ে ভয়ঙ্কর গতিতে বাস চালান, হঠাৎ ওভারটেক ও বিপজ্জনক ব্রেক কষেন।
আইন প্রয়োগের অভাব: স্থানীয়রা মনে করেন, প্রশাসনের নীরবতা ও শিথিল মনোভাবের কারণে চালকেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
একজন নিয়মিত যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-
“বাসে উঠলেই মনে হয় জীবনের শেষ যাত্রা শুরু করেছি। চালকেরা যেন পাগলা ঘোড়ার মতো গাড়ি চালান। যাত্রীদের জীবনের কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে।”
অবহেলার মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৫-৬ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়-সর্বাধিক দুর্ঘটনা ঘটে মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা রুটে। এর বড় অংশের জন্য দায়ী বেপরোয়া গতি ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন।
লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী মহাসড়কও এর ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ছোট-বড় একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে এই রুটে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো শাস্তি বা প্রতিকার না থাকায় পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত-
স্থানীয় সচেতন মহল ও সড়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন-
ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিয়মিত চেকপোস্ট ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ছাড়া কোনোভাবেই এ সমস্যা কমবে না।
চালক প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সিং কঠোর করতে হবে। শুধু লাইসেন্সধারী নয়, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক ছাড়া যাত্রী পরিবহন চালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না।
সড়কে সিসিটিভি ও গতির সীমা নির্ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে ব্যস্ত ও দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় ডিজিটাল মনিটরিং চালু করতে হবে।
প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন মালিক ও চালকের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দায়বদ্ধতার আওতায় আনতে হবে।
মানবিক আহ্বান-
প্রতিদিন হাজারো যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। মায়ের কোল থেকে সন্তান ছিটকে পড়ছে, ভাই হারাচ্ছে ভাইকে, আর ঘর শোকের মাতমে ভরে যাচ্ছে। অথচ সড়কে নৈরাজ্য রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই।
এখনই যদি প্রশাসন, পরিবহন মালিক, চালক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সমন্বিত উদ্যোগ না নেন, তাহলে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে বাধ্য।
জনগণের একটাই দাবি- সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন, যাত্রীদের জীবন রক্ষা করুন।