( ফলোআপ প্রতিবেদন)
এম.এম.তোহাঃ গত ২৭ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলার পশ্চিম নান্দুহার নিজামিয়া ফোরকানিয়া,হাফিজিয়া,নুরানি তা’লিমুল কোরআন মাদ্রাসার মাহফিল বন্ধ করা নিয়ে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মাহফিল বন্ধ হওয়ার পর ঢাকায় অবস্থানরত নান্দুহার নিবাসী এড. সোহেল মোল্লার একটি ফেইসবুক লাইফ ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জনমনে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। মূহুর্তের মধ্যে বিষয়টি উপজেলা, জেলা ছাপিয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বিযটি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত মাহফিল বন্ধ করার জন্য সকল দায়দায়িত্ব এখন নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদের ঘাড়ে। তিনিও ফেইসবুক লাইভে বক্তব্য দিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছেন। তার শুভাকাঙ্ক্ষীরাও ফেইসবুকে তার পক্ষে বিভিন্ন স্টাটাস দেয়া অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ততক্ষণে পানি বহুদূর গড়িয়েছে। উক্ত মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের। আর তারই আগমনকে প্রতিহত করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছেন বিএনপির ঐ নেতা।
বিভিন্ন ফেইসবুকে দেয়া মন্তব্য, পত্রিকা অফিসে প্রেরন করা ক্ষুদ্র বার্তা, মাহফিল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এবং পূর্বাপর ঘটনা বিশ্লেষণে বেড়িয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক , সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং এক সময়ের মাঠ কাপানো ছাত্র নেতা মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ। এলাকাবাসী ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্হানীয় বিএনপির একাধিক নেতা কর্মী সূত্রে জানা যায় ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তার মধ্যে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। আর তা হল রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে থাকা এবং বিএনপির জন্য ক্ষতিকর স্হানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বাসন করা। জনশ্রুতি আছে বিএনপি নেতা ওয়াহিদুজ্জামান অহিদের পৃষ্ঠপোষকতায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল কবির সহ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি পূর্বের ন্যায় প্রকাশ্যে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সাথে রয়েছে ঐ বিএনপি নেতার দহরমমহরম সম্পর্ক। নিজ দলের ত্যাগি নেতা কর্মীদের চেয়ে ঐ সকল আওয়ামীলীগারদের মূল্য তার কাছে বেশি। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে আওয়ামী লীগের ঐ সুযোগ সন্ধানীরা।
নান্দুহার এলাকার ঐ মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল পন্ড করার নেপথ্য ভুমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগের ঐ সুযোগ সন্ধানী দলটি। আর দাবার গুটি হিসেবে ব্যাবহার করেছে বিএনপি নেতা মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদকে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে উক্ত মাদ্রাসার বিভিন্ন কমিটিতে স্থান ছিল অবৈধ বালু সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল কবিরের। কিন্তু এবার তাকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোনো কমিটিতে স্থান না দেয়ায় তার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সাবেক নেছারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হক যিনি বিগত দিনে যে কোনো অনুষ্ঠানে বড় চেয়ারে বসার অধিকারী ছিলেন তিনিও বঞ্চিত হন। তারা দু জনেই ফন্দি আঁটে ওয়াজ মাহফিল পন্ড করার। সাথে নিয়ে নেন ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রাজনীতিতে অপরিপক্ক তৌহিদ কাজীকে। এই তৌহিদ কাজী মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদের একান্ত কাছের লোক হওয়ায় তার মাধ্যমেই ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। সে মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানকে বুঝাতে সমর্থ হন যে, যদি চরমোনাই পীর এই মাহফিলে উপস্থিত হন তাহলে এখানে হাজার হাজার লোকের সমাগম হবে। যা বিএনপির কোনো সভায় ইতিপূর্বে উপস্থিত হয় নি। ইহাতে আপনার নেতৃত্বের উপর ভবিষ্যতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। যেই বলা সেই কাজ। মাদ্রাসা ও মাহফিল সংশ্লিষ্টদের নিজ গৃহে তলব। সরাসরি নির্দেশ মাহফিল হবে না। কারণ চরমোনাই পীর সাহেব একজন রাজনৈতিক নেতা। এখানে রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। উপস্থিত মাহফিল আয়োজকরা তার গৃহ থেকে বের হয়ে সর্বত্র জানিয়ে দেন। মাহফিল বন্ধ। বিএনপি নেতা ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ নির্দেশ দিয়েছেন। তড়িৎ গতিতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে সংবাদটি। ধর্মপ্রান মুসলমানদের মনে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। ধিক্কার দিতে থাকে মাহফিল বন্ধ করার সাথে জড়িত মুসলমান নামধারীদের। আর আওয়ামী লীগের কুশীলবরা এক ঠিলে দুই পাখি শিকার করতে সমর্থ হয়েছে। দুটোই তাদের শক্র। চরমোনাই পীর সাহেবকে স্বরুপকাঠীতে আসতে দেয় নি। অন্য দিকে বিএনপি নেতা ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ কে ধর্মপ্রান মুসলমানদের নিকট ভিলেন বানিয়েছে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের সূচনা করেছে। সাথে সাথে বিএনপি দলের প্রতি এমন কর্মকান্ডের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ক্ষোভ ফুঁসে উঠেছে।
মন্তব্য :-
স্বরুপকাঠীর উক্ত মাহফিল বন্ধ করার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ্ আল বেরুনী সৈকত এর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটা মুসলিম দেশ এবং এখন আওয়ামী জমানা নাই। মাহফিল ইসলাম প্রচারের একটি মাধ্যম। আওয়ামী লীগ আমলে মাহফিলে বাধা দেয়া হয়েছে। ইসলাম প্রচারে বাধা দেয়া আল্লাহর সাথে শক্রতা করা। তাই আজকে তাদের এই অবস্থা। কোনো ব্যাক্তির দায় দল নেবে না। কেউ যদি মাহফিল বন্ধ করার নির্দেশ দেয় তার জন্য নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপি দায়ী নয়।
ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির এক নেতা মন্তব্য করেন ০৫ আগস্টের পর পিরোজপুর জেলার ৬ টি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানরা পলাতক রয়েছে। সেখানে নেছারাবাদের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতার সেল্টারে থাকে কিভাবে। তবে ঐ নেতা কি আওয়ামী লীগের দালাল।
কাউখালী উপজেলার জনৈক বিএনপি নেতার মন্তব্য : মাহমুদুল কবির বালু চুরির ব্যাবসা করে অবৈধ টাকার মালিক হয়েছে। সে মহারাজ-মিরাজের দোষর। তার সাথে একই স্টেজে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। দলীয় শৃঙ্খলা ভংগের জন্য তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।