রাজাকার” কেবল মুসলমান নয়: ইতিহাসের অসম, একচোখা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দায় চাপানো কেন?

নবজাগরণ ডেস্ক :
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে কাজ করা রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের নাম শুনলে আজও জাতি কেঁপে ওঠে। তাদের বিরুদ্ধে আছে ধর্ষণ, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধরপাকড়, বিশ্বাসঘাতকতার অসংখ্য অভিযোগ।

কিন্তু আজ প্রশ্ন উঠছে-
রাজাকার কি কেবল মুসলমানরাই ছিল?
অন্য ধর্মের কেউ কি পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেনি?
তাহলে রাজাকার শব্দটি কেবল মুসলমানদের গালি হয়ে দাঁড়ালো কীভাবে?
এ কি ইতিহাসের ভুল? না কি পরিকল্পিত এক ইসলামবিদ্বেষী অপপ্রচার?

রাজাকার বাহিনীর গঠন ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভাঙা আয়না
১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল মূলত পাকিস্তানি মিলিটারি ও প্রশাসনের সহায়তায়, যার মধ্যে ছিলেন:

জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার
মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম পার্টির কিছু নেতা
জমিদার, ব্যবসায়ী ও সুবিধাবাদী উচ্চবিত্ত
পুলিশ, আনসার, বিডিআর থেকে ছাঁটাই হওয়া লোকজন
তবে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা উচিত-সব রাজাকার ছিল না মুসলমান।
তথ্যসূত্রে যেসব অমুসলিম রাজাকারের নাম পাওয়া যায়:

১. রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী অঞ্চলে পাকিস্তানপন্থী হিন্দু জমিদারদের একটি অংশ স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তা করেছিল।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে উপজাতীয় নেতাদের একটি অংশের সহযোগিতার প্রমাণ মেলে-বিশেষ করে যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চাইত না।
৩. খুলনার দৌলতপুরে একজন খ্রিস্টান ব্যবসায়ী ও তার পরিবার পাকিস্তানিদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল।
৪. ঢাকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক (যাদের ধর্মীয় পরিচয় খ্রিস্টান ও হিন্দু ছিল), পাকিস্তান সরকারের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ একটি ষড়যন্ত্র’ বলে।

এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন হলেও তা প্রমাণ করে-রাজাকার বাহিনী ধর্মনিরপেক্ষভাবে বিশ্বাসঘাতকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। তবে এসব তথ্য আজও গোপন, কারণ এক শ্রেণি ইতিহাসকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একচোখা করে তুলেছে।

তাহলে কেন অপবাদ শুধু মুসলমানদের ঘাড়ে?
রাজনৈতিক এজেন্ডা:
স্বাধীনতার পর এক শ্রেণির বামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী মুসলমানদের ধর্মীয় পরিচয়কে রাজাকারের প্রতীক বানিয়ে ফেলে-বিশেষ করে দাড়ি, টুপি, সুরমা, পাঞ্জাবি।

আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষ:
বিশ্বমঞ্চে মুসলমানদেরকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘চরমপন্থী’, ‘ব্যাকওয়ার্ড’ হিসেবে চিত্রিত করার যে চক্রান্ত চলে, তার সাথে এই প্রচারণা মিলে যায়।

প্রমাণ গোপন:
অন্যান্য ধর্মের রাজাকারদের তথ্য নথিভুক্ত না করা, আদালতে উপস্থাপন না করা এবং মিডিয়ায় না তোলা-এই সমন্বিত অপপ্রচারের মাধ্যমে “রাজাকার = মুসলমান” ধারণা তৈরি করা হয়।

ফলাফল:
১. ধর্মবিশ্বাসী মুসলমানরা আজও অপবাদভোগী, শুধু পাঞ্জাবি-টুপি পরলেই সন্দেহ।
২. প্রকৃত রাজাকারদের অনেকেই পার পেয়ে গেছে, কারণ তারা মুসলমান ছিল না বলে বিচার হয়নি!
৩. মুসলমানদের রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে কোণঠাসা করার বিস্তৃত অপারেশন চালানো হয়েছে এই ট্যাগ দিয়ে।

ঐতিহাসিক সত্য: মুক্তিযুদ্ধে হাজারো মুসলমান শহীদ হয়েছেন, রাজাকার ছিলেন বহু অমুসলিমও
রাজাকার মানেই মুসলমান নয়, আবার মুসলমান মানেই রাজাকারও নয়।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান-তাদের নাম কেউ মুখে আনে না।
খাগড়াছড়ির মতো জায়গায় পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করেছে কিছু উপজাতীয় নেতা-তারা আজও মুক্তিযুদ্ধের বইয়ে “নির্দোষ”!
আমরা কী চাই?
১. সকল ধর্মের রাজাকারদের নাম ও তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
২. রাজাকার শব্দকে ধর্মনিরপেক্ষভাবে ব্যবহার করতে হবে-শুধু মুসলমানদের টার্গেট করা চলবে না।

৩. মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই দীর্ঘদিনের অপবাদ ও চরিত্রহনন বন্ধ করতে হবে।
৪. ধর্ম নয়, অপরাধের ভিত্তিতে রাজাকারের পরিচয় নির্ধারণ করতে হবে।
আমাদের প্রশ্ন:
“রাজাকার” কি শুধু মুসলমান হওয়ার জন্য কেউ হয়?

একজন হিন্দু যদি পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করে, সে কি রাজাকার নয়?
একজন খ্রিস্টান বা উপজাতি যদি মুক্তিযোদ্ধার নাম ফাঁস করে পাকিস্তানিদের, তবে?
তাহলে কেন এই অপবাদ শুধু মুসলমানদের ওপর চাপানো হলো? এটা কি মুক্তিযুদ্ধের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে ইতিহাসে গোপন যুদ্ধ নয়?

আমাদের করণীয় : সত্যকে ফিরিয়ে আনো, ইতিহাসকে শুদ্ধ করো

“রাজাকার” একটি অপরাধমূলক রাজনৈতিক পরিচয়-এটি ধর্মীয় পরিচয় নয়।
মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-যেই হোক, পাকিস্তানের সহযোগী যারাই ছিল, তারা রাজাকার।
কিন্তু শুধুমাত্র মুসলমানদের গায়ে এই ট্যাগ সেঁটে দেওয়া হয়েছে-এটা ইতিহাস নয়, এটা অপরাধ।।।।