চরবৃত্তির মেহরাব: মোসাদ থেকে র’-এর ছায়া বাংলাদেশে কত গভীরে প্রবেশ করেছে?

তথ্যনির্ভর ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন-নবজাগরণ ডেস্ক :
ইরানে পনেরো বছরের ইহুদি ইমাম এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে- বাংলাদেশ কি এর ব্যতিক্রম?
আমাদের দেশে কি কখনও কোনো ধর্মীয়, রাজনৈতিক, মিডিয়া কিংবা একাডেমিক প্ল্যাটফর্মে চর-অনুপ্রবেশ ঘটেনি? ইতিহাস জানলে আপনি স্তব্ধ হয়ে যাবেন।

ঐতিহাসিক নজির: বাংলাদেশের চর-অনুপ্রবেশের ভয়াবহ উদাহরণ

১. ১৯৭১ সালে ‘রাজাকার’ নয়, বহু বিদেশি গোয়েন্দা এজেন্টও কাজ করেছে!

অনেকে জানেন না, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে শুধু রাজাকার বা আলবদর ছিল না- আইএসআই (ISI) সরাসরি বাংলাদেশে বহু ধর্মীয় পোশাকে ছদ্মবেশী চর ব্যবহার করেছিল। এরা মসজিদে-মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করত।

কিছু মাদ্রাসা ছিল আইএসআইয়ের আউটপোস্ট -এটা ১৯৭২ সালের ভারতীয় RAW ও ভারতীয় সেনার অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে উল্লেখ ছিল।

২. জিয়া আমলের ‘ইমাম ট্রেইনিং’ প্রকল্প: ধর্মীয় পর্দার আড়ালে চর-সৃষ্টির চেষ্টা?

১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে ‘ইমাম প্রশিক্ষণ’ প্রজেক্ট শুরু করেছিল, তা ছিল ধর্মের নামে এক প্রকার ‘চেতনানির্দেশিত প্রকল্প’। পরবর্তী তদন্তে উঠে আসে- বহু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম ছিল রাজনীতিনির্ভর ও বিদেশি আরব অর্থায়িত ইসলামপন্থী গোয়েন্দা তৎপরতার বাহক।

CIA ও সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কিছু চ্যানেল ছিল এই প্রশিক্ষণের ফান্ডিংয়ে জড়িত- এমন অভিযোগ জাতীয় গোয়েন্দা রিপোর্টে বারবার উঠে এসেছে।

৩. ২০১৩-১৪: হেফাজত আন্দোলনে ‘পেট্রোডলার চর’ ঢুকেছিল?

শাপলা চত্বরে লাখো মানুষ জমায়েত হয়েছিল। ধর্মীয় আবেগ ছিল, কিন্তু এর ভেতর ঢুকে পড়েছিল বিদেশি এজেন্ডা-নির্ভর কিছু মুখপাত্র, যারা সরাসরি আরব রাজতন্ত্রের কৌশলগত চিন্তা প্রচার করছিল।

শেখ হাসিনার সরকার পরে এক গোয়েন্দা তদন্তে পায়, কিছু বক্তা সৌদি বা কাতারি গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় উপকূলীয় অঞ্চলে মাদ্রাসা স্থাপন করে আগ্রাসী চিন্তা প্রচার করছিল।

৪. র‍্যাডিক্যাল মিডিয়া, ইউটিউব দাওয়াতি মিশন ও ছদ্ম আলেমের উত্থান (২০১৬-বর্তমান)

বর্তমানে বেশ কিছু ইউটিউব ও ফেসবুকভিত্তিক “আলেম” বা “মুফাসসির” এর উত্থান ঘটেছে- যারা দাওয়াতের নামে রাষ্ট্রবিরোধী, আরবপন্থী রাজতন্ত্রের চেতনা ছড়াচ্ছে।

এদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি তুরস্ক, কাতার বা সৌদি ফান্ডেড- এবং বাংলাদেশে “ভিতর থেকে” ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ নয়, উম্মাহ জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশভাগ্য নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় আছে।

চর-অনুপ্রবেশের ধরন এখন বদলে গেছে
পুরনো চর আধুনিক চর

সীমান্ত পেরিয়ে অস্ত্র নিয়ে ঢুকত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বক্তৃতা দিয়ে ঢোকে
গোপনে তথ্য চুরি করত খোলাখুলি চিন্তা প্রভাবিত করে
বিদেশি পোশাকে আসত মুসলিম আলেম, স্কলার, এক্টিভিস্টের পোশাকে আসে
মসজিদে সন্দেহজনক মনে হতো আজ তাকে মধ্যপন্থী বা আধুনিক চিন্তাবিদ ভাবা হয়

বাংলাদেশের কিছু সম্ভবনাময় ঝুঁকি: কোথায় নজর দেওয়া দরকার?

১. ইসলামী বক্তা ও মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের ব্যাংক ট্রান্সফার ও যোগাযোগ চ্যানেল তদন্ত।
২. মাদ্রাসা ও দাওয়াতি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ফান্ডিং নিরীক্ষা।
৩. ইমামদের লাইসেন্সিং ও নজরদারি ব্যবস্থা।
৪. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠক্রম ও বিদেশি পাঠ্যপুস্তকের উৎস যাচাই।
৫. সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সংবিধানবিরোধী বক্তব্য ছড়ানো ‘বিনামূল্যের জ্ঞান বিক্রেতা’দের চিহ্নিত করা।

চেতনার যুদ্ধ চলছে- মেহরাবের ভেতরে ঢুকে পড়েছে চর!
ইরানের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ইস্যু নয়।
বাংলাদেশেও চরদের ‘মাহদী’ সাজিয়ে, ‘আলেম’ সাজিয়ে, ‘শিক্ষাবিদ’ সাজিয়ে আমাদের মনোজগৎ দখল করতে চায় উপনিবেশবাদী চিন্তা ও তার আধুনিক মুখপাত্ররা।

এখন সময় এসেছে জাতীয়ভাবে “চেতনা-নিরাপত্তা কমিশন” গঠনের।
সময় এসেছে মাদ্রাসা ও মসজিদ কেন্দ্রিক চর-তৎপরতা প্রতিরোধ নীতি তৈরির।
সময় এসেছে জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তাদের জন্য ওপেন ট্রায়াল প্ল্যাটফর্ম চালু করার- যেন ধর্মের নামে কেউ রাষ্ট্রবিরোধিতা বা চেতনার দখল চালাতে না পারে।