নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ সম্পর্কে যাদের সামান্যতম ধারণা নাই তাঁরাই শ্লোগান দেয় আমরা জিয়ার সৈনিক। জিয়াউর রহমান আজ বেঁচে থাকলে তাদেরকে ধরে এনে জিজ্ঞেস করত আমার সৈনিক হওয়ার মতো তোমার মধ্যে কি যোগ্যতা আছে ? উত্তরে তারা কি বলত তারাই ভালো জানে। তবে আমার দৃষ্টিভংগীতে তারা একটি যোগ্যতার কথাও তুলে ধরতে পারবে না। জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও তার অনুসারীদের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য তুলে ধরে বিভিন্ন মন্তব্য করতে গিয়ে এ সব কথা বলেন পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক পরিচয়দানকারীরা তার সম্পর্কে কয়েকটি সস্তা শ্লোগান দিয়ে মাঠ গরম করে স্হানীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু সেই শ্লোগানের ভাবার্থও তারা জানেনা এবং সে অনুযায়ী কোনো কর্মও তারা করে না।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদানের বিষয়টি কোন্ আদর্শের সৈনিকের মধ্যে আছে? তিনি তখন পাকিস্তান আর্মির একজন মেজর। তিনি যে তার ইউনিট নিয়ে বিদ্রোহ করেছেন সে বিষয়টি পাকিস্তান আর্মি আচ করতে পেরেছিল। বিদ্রোহ মানেই দেশদ্রোহী। একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তিনি পিছনে ফিরে তাকান নি। স্ত্রী সন্তান ফেলে ঝাপিয়ে পড়লেন মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস কোথায় রয়েছে পরিবার খোঁজ নেয়ারও সুযোগ হয়নি। তৎকালীন তার আদর্শের অনুসারীরা সাথে ছিলো। অনেকেই তার আদর্শ শেষ জীবন পর্যন্ত ধারণ করে গেছেন। আবার অনেকে ছিটকেও পড়েছে।
১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনে দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জিয়াউর রহমানকে বন্দী করা হয়। মৃত্যু ছিল অনিবার্য। তার আদর্শের সৈনিকেরা বুক চিতিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে মুক্ত করে। তারা বুক ফুলিয়ে বলতে পারে আমরা জিয়ার আদর্শের সৈনিক। তখন দেশের অবস্থা বর্তমান সময়ের চেয়েও শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়। জাতির ক্রান্তীলগ্নে সেনা প্রধান হিসাবে জিয়াউর রহমান মার্শাল’ল জারী করেন। তার আদর্শের সৈনিকদের সাথে নিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। ঐ সময়ের বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে তিনি বাকশাল বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপিও প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে দেশের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন।
তিনি উন্নয়ন তরান্বিত করতে বাছাইকৃত সৎ ও যোগ্য রাজনীতিবিদদের নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন। যোগ্যদের স্হানীয় প্রশাসনসহ সচিবালয়ে পোস্টিং দেয়া হয়েছিল। মেধাবীদের নিয়ে ছাত্রদল যুবদল গঠন করেন। ঐ ছাত্রদল যুবদলে কোনো চাঁদাবাজ, দখলবাজ, টেন্ডার বাজ ছিলো না। মন্ত্রী সভায় কোনো দূর্নীতিবাজ, তৈলবাজ ছিলো না। প্রশাসনে কোনো ঘুষখোর ছিল না। রাজনৈতিক অংগনে তার পিতৃকুল ও শশুর কুলের কোন লোক ঘেঁষতে পারেনি। কারণ জিয়াউর রহমান আদর্শবাদী নেতা। আমৃত্যু তিনি দেশ বিদেশের কোথাও কোনো সম্পদ কিংবা বাড়ি করেন নি। নিজ সন্তানদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করিয়েছেন। তিনি কঠোর হস্তে দেশ শাসন করেছেন। মন্ত্রী পরিষদ সহ রাজনৈতিক নেতা কর্মী ও প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা সর্বদা টেনশনে থাকত। এই বুঝি কোনো ভুল হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট এখনই ডেকে পাঠাবেন। রাত দিনের কোনো বালাই ছিলোনা। যখনই তলব তখনই হাজির। তিনি দেশের প্রবীন ও মরহুম নেতাদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে সন্মানের সাথে কথা বলতেন। কাউকে কখনো কটাক্ষ করতেন না। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাকে অনেক কঠোরতা অবলম্বন করতে হয়েছে।
এবার তুলে ধরছি তার আদর্শের সৈনিকদের নীতি আদর্শের কর্ম কাহিনী। জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসাবে শ্লোগান দেয়া আদর্শবাদীরা যখন চাঁদাবাজী, শালিস বানিজ্য, মামলা বানিজ্য, জমি দখল, হাটবাজার দখল, অপহরন, মাদক কারবার , ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুটপাট করে তখন জিয়াউর রহমানের আদর্শের সাথে তাদের আদর্শের কোনো মিল পাইনা। তারা শ্লোগান দেয় ” জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই কর”। কিন্তু বাস্তবে এসব আদর্শের সৈনিকদের দেখা যায় নিজেদের মধ্যে মারামারি হানাহানি ও নিজের দলের লোকজনকে হত্যা করতেও তারা পিছপা হচ্ছে না। যেখানে জিয়াউর রহমান কখনো বিরোধী মতাদর্শীদের গালাগালি ও কটাক্ষ করে কথা বলেন নি সেখানে তার আদর্শের সৈনিকেরা বেয়াদবির এ আদর্শ কোথায় পেল? অশ্লীল ভাষায় রাজনৈতি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যে শ্লোগান ও বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে তা দেশের ইতিহাসে বিড়ল। রাজনৈতিক কথাবার্তার কোনো শিষ্টাচারই তারা মেনে চলে না। ফলে যা ঘটার তাই ঘটেছে। দেশে এত কিছু ঘটেছে কিন্তু জিয়াউর রহমানের ছবিকে কেহ কখনো অসম্মান করেনি। কিন্তু জিয়ার সৈনিক নামধারীদের বেপরোয়া আচরণের জন্য আজ একজন আদর্শবান নেতার ছবিকেও পদদলিত করা হয়েছে। এ জন্য দলের নীতিনির্ধারণী নেতারাও অনেকাংশে দায়ী। কারণ তারা এ প্রজন্মের কাছে জিয়াউর রহমান কে ছিলেন? তার আদর্শ কি? তা তুলে ধরতে সক্ষম হননি। ২০ বছরের যুবকও বিএনপির আদর্শ হিসেবে অন্তরে ধারন করে ১৫ বছর খাইনি এখন খাব। আর এ খাওয়া খাইতে গিয়ে বিএনপিকে প্রায় একঘরে করে ফেলেছে।
গত বছরের ০৫ আগষ্টের পর থেকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। যার কারণে তারা বেপরোয়া আচরণ করতে থাকে। তারা ধরে নিয়েছে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহন করবে। তারপর তাদের আর থামায় কে। এ আচরণের কারণে আজ বিএনপি জনগণের মুখোমুখি অবস্থানে দাড়িয়েছে। জিয়াউর রহমানের আদর্শ যাদের মধ্যে নেই তারাই বিএনপিকে ডোবাচ্ছে। বিএনপির অস্তিত্বের প্রয়োজনে জনগণ জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া বিএনপি হিসাবে দেখতে চায়। ( চলবে)