নিরাপদ সড়ক ও উন্নত সমাজ গড়তে যুব শক্তির ঐক্য এখন সময়ের দাবি

মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারী:
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ৩নং ডমুরুয়া ইউনিয়নের পলতি-তারাবাড়িয়া এলাকার মাটি এখন নীরবে এক বিপ্লবের সাক্ষী।শ্রীপুর পোলের মাথা থেকে মিঝি পুকুর পর্যন্ত প্রধান সড়কজুড়ে বৃষ্টির পানিতে গর্ত,ট্রাক্টরের লোহার চাকার নির্মমতা,আর প্রশাসনিক অবহেলার ঘনঘোর অন্ধকার ভেদ করে উদয় হয়েছে এক আশাবাদের আলো-তারাবাড়িয়ার যুব সমাজ নিজ হাতে রাস্তা সংস্কারের কাজে নেমে পড়েছে!

এটা শুধুই এক রাস্তা মেরামতের ঘটনা নয়। এটা একটা মনোজাগরণের ইঙ্গিত। এটা এক ঘোষণাপত্র,যেখানে লেখা আছে-“আমরাও পারি, চাইলে বদলে দিতে পারি আমাদের চারপাশ।”

যেখানে রাষ্ট্র নেই,সেখানে জনগণই রাষ্ট্র হয়ে উঠে!
সড়কটির করুণ হাল যে কোনো সচেতন নাগরিকের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। খানা-খন্দে ভরা রাস্তায় প্রতিদিন স্কুলগামী শিশুরা, বৃদ্ধ মানুষ, রোগী, কৃষক, নারী-সবাই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অথচ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সেই দুর্ভোগের চিত্র একই রয়ে গেছে। স্থানীয় সরকার, ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেই। কারো দায় নেই, লজ্জাও নেই।

এই নির্লজ্জ শাসনযন্ত্রের ব্যর্থতাকে মুখের ওপর থাপ্পড় মেরে পলতির যুব সমাজ প্রমাণ করে দিল-ক্ষমতা মানে পদ নয়, দায়িত্ববোধ। আর দেশপ্রেম মানে সেলফি তুলে পোস্ট দেওয়া নয়, প্রয়োজনে নিজের ঘাম ঢেলে পথ গড়ে দেওয়া।

একটি পলতি, একটি তারাবাড়িয়া-একটি আন্দোলনের প্রতীক হতে পারে পলতির যুবকরা কোন এনজিওর অর্থ নেয়নি, কোন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির আশ্বাস পায়নি, কোন টেন্ডার বা বরাদ্দ ছিনিয়ে আনেনি। তবুও তারা এই কাজ করেছে। এই কাজের পিছনে আছে দায়িত্ববোধ, আছে জনগণের প্রতি ভালোবাসা, আর আছে পরিবর্তনের এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা।

এই ঘটনাটি কোনো ছোটখাটো খবর নয়-এটি একটি জাতীয় নৈতিক নবজাগরণের বীজ। কারণ, যুব সমাজ যখন নিজ গ্রাম, নিজ রাস্তা, নিজ খাল, নিজ মাঠকে নিজের দায়িত্ব মনে করে তখনই প্রকৃত গণতন্ত্রের বীজ বপিত হয়।

যুব শক্তি যদি চায়, বাংলাদেশ বদলাতে সময় লাগবে না!
আজ বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি ৫০ জন যুবকও এই মনোভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ায়, তবে ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ধারক হয়ে উঠতে পারে-যেখানে রাষ্ট্র মানেই ‘উপরে বসে হুকুম দেওয়া নয়’, রাষ্ট্র মানে ‘আমরা সবাই মিলে আমাদের গড়া সমাজ’।

আজ এই তারাবাড়িয়ার যুব সমাজ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে-স্বপ্ন শুধু ‘উন্নয়নের বুলি’ নয়; স্বপ্ন হচ্ছে ‘মাটি স্পর্শ করা বাস্তবতা’, যেখানে মাটি কাটার কোদালও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা নেমে পড়ি।

আমরা চাই যুবকরা শুধু ভোট না দিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে গড়ে তুলুক!
তারাবাড়িয়ার যুবদের মতো হাজারো যুবক আজ গড়ে তুলুক নিজ নিজ অঞ্চলের সড়ক, কৃষিখাল, স্কুলের মাঠ, ক্লিনিক। একদিন এই গাঁয়ের ছেলে মেয়েরাই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক হবে। যারা এখন কোদাল নিয়ে রাস্তা বানাচ্ছে, একদিন তারাই শাসকের চেয়ারে বসবে-তবে ‘শোষণ’ নয়, ‘সেবক’ হয়ে।

পলতি তারাবাড়িয়ার এই রাস্তাটি একটি প্রতীক হোক জাতীয় পুনর্গঠনের!
পলতির এই যুবশক্তির কাজকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এই উদ্যোগকে মিডিয়া,সামাজিক সংগঠন, এবং নীতিনির্ধারকদের বোঝা উচিত-“বদল আনতে বড় পদ লাগে না,বড় মন লাগে!”

আজ তারাবাড়িয়ার রাস্তায় যে ঘাম ঝরছে,তা আসলে পুরো বাংলাদেশের নতুন রাজনীতির বীজতলায় সেচ দিচ্ছে। আর এই নতুন রাজনীতি হবে-অংশগ্রহণের, উদ্যোগের,দায়িত্ববোধের।এবং এই রাজনীতি শুরু হবে নিচ থেকে-পাড়ায় পাড়ায়,গাঁয়ে গাঁয়ে,পলতি তারাবাড়িয়া।
লেখক:সম্পাদক-
নবজাগরণ।