নবজাগরণ বিশেষ প্রতিবেদন:
তারিখ:৮ আগস্ট ২০২৫
“আমি সত্য লিখব, প্রয়োজনে নিজের রক্ত দিয়ে লিখব!”- তুহিনের শেষ ফেসবুক পোস্ট।
এই কথাগুলো লিখে ঠিক ৩৬ ঘণ্টা পর, পাওয়া গেল তার নিথর দেহ। গলা কাটা, চোখে স্কচটেপ, দুই হাত পিছনে বাঁধা, শরীরে ছুরিকাঘাতের দাগ। যেন তার মুখ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা।
তুহিন ছিলেন একজন সাহসী, তরুণ সাংবাদিক। কাজ করতেন -স্থানীয়/জাতীয়/গণমাধ্যমে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্টিং করতেন, নাম নিয়েই লিখতেন, ভয় পেতেন না।
কিন্তু এবার তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হলো চিরতরে।
ঘটনাস্থল: পাথরে ঠেকা এক মৃত্যুর সাক্ষী সেই রাত
তুহিনকে সর্বশেষ দেখা যায় রাতে একটি চায়ের দোকানে সহকর্মীদের সঙ্গে। এর পর আর ফোন ধরেননি।
পরদিন সকালে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায় শহরের উপকণ্ঠে পরিত্যক্ত একটি ইটখোলার পাশে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, “হত্যার ধরন পেশাদার খুনিদের মতো।”
স্থানীয়দের মুখে শোনা গেল:
“রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকটা মটরসাইকেল টোকা টোকা শব্দ কইরা যাইতেছিল… আমরা ভয় পেয়ে জানালাও খুলি নাই।”
পরিবারের কান্না: “আমার ছেলে শুধু কলম ধরেছিলো, তার শত্রু কারা ছিল?”
তুহিনের বৃদ্ধ মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন:
“ওর শত্রু কই ছিল? সারাদিন রিপোর্ট কইরা ঘুইরা আসতো… কয়জনের অন্যায় লিখছিলো, তাই কি রক্ত নিতে হইলো?”
তার স্ত্রী দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। একটাই দাবি-বিচার চাই।
সহকর্মীদের বক্তব্য: “তুহিন আমাদের আয়না ছিল, আজ সেই আয়না রক্তে মাখা”তুহিন যে এলাকায় কাজ করতেন, সেই অঞ্চলের সাংবাদিকরা বলছেন:
“তুহিন ছিল সাহসী। অনেক রিপোর্ট লিখছিলো অবৈধ দখল, ঠিকাদারি সিন্ডিকেট আর ছাত্ররাজনীতির নামে ত্রাস নিয়ে। আমরা আগেই ভয় পেয়েছিলাম-ওর কিছু হলে, দায় কার?”
রাজনীতির বিষাক্ত খেলা: কে কার লোক? এই প্রশ্ন আজ আমাদের নষ্ট করে দিচ্ছে।
সাংবাদিক হত্যার পরপরই স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয় দোষারোপের খেলা।
এক পক্ষ বলছে: হত্যায় জড়িত সরকার-সমর্থিত সন্ত্রাসী।
আরেক পক্ষ বলছে: এটা বিরোধীদের সাজানো নাটক।
কেউ আবার বলছে: প্রেমঘটিত ব্যাপার!
বস্তুত, এরা সবাই তুহিনকে ব্যবহার করছে নিজেদের রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার জন্য। কিন্তু আমরা জিজ্ঞেস করি-তুহিন কি মানুষ ছিল না? তার একটা পরিবার ছিল না? তার রক্ত কি দল দেখে ঝরেছিল?
প্রশ্নগুলো থেকে যাবে না!
১. কে বা কারা তুহিনকে খুন করল?
২. কেন পুলিশ ১২ ঘণ্টা পরে লাশ উদ্ধার করল?
৩. কেন তার রিপোর্টিং এলাকায় হঠাৎ করে এত চুপচাপ?
৪. কে চাইছিল তুহিন যেন সত্য না লেখে?
৫. কেন এখন মিডিয়ার একটি অংশ এই ঘটনাকে গুম করতে চাচ্ছে?
আমাদের দাবি, স্পষ্ট ও একতরফা:
সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করুন, তারা যে দলেরই হোক না কেন।
বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করুন।
তুহিনের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দিন।
সাংবাদিক নিরাপত্তা আইন দ্রুত পাস করুন।
আমরা হারিয়ে ফেলেছি একজন সৈনিক,কিন্তু হারাতে পারি না ন্যায়বিচার
তুহিন আজ আর নেই। কিন্তু তার রক্তের দাগ শুকাবে না-যদি অপরাধীরা ধরা না পড়ে, যদি আবারও কোনো সাংবাদিককে খুন হতে হয়।
তুহিন একাই ছিলেন না-আমরাও তার পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।
তুহিনের মৃত্যু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়,এটি রাষ্ট্রের জন্য এক কলঙ্ক। আর সেই কলঙ্ক মুছবে একটাই উপায়ে-
“বিচার চাই।এখনই। দলমত নির্বিশেষে।”





