তারা চাচার খোলা চিঠি – ৫

প্রাপক: মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রেরক: গেরামের তারা চাচা
পক্ষ: এই মাটি-মানুষ, ভাঙা ঘরের গরীব-দুখি বাঙালির পক্ষ হইতে

আসসালামু আলাইকুম, চাচা।

এই চিঠি আপনার হাতের নাগাল পাইবো কি না জানি না। তবু আমরা যারা গেরামের হাওর-বাঁওড়, টেকের বাঁক, ধানের শিষ আর মাছের ঘ্রাণে গড়া-তারা এখন শুধু চিঠি লিখি না, আমরা চিৎকার করি।

চাচা, টঙ্গীতে সাংবাদিক ভাইটারে আসাদুজ্জামান তুহিনকে জবাই করে যেভাবে হত্যা করা হইলো, এইটা তো আর একটা দুর্ঘটনা না, এইটা একেবারে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। গেরামের ভাষায় কইলে -“এটা খুন, খাঁটি খুন! আর এই খুনের বিচার হইতে হইবো রাজাকারের বিচার যেমনে হইছিল!”
আপনে চুপ কইরা থাকলে, আপনার নীরবতাও এই হত্যাকাণ্ডের দায় বহন করবো!

সাগর-রুনি খুন হইছিল ২০১২-তে। আজ ২০২৫- বিচার নাই। তাই চাচা, এইবার আর সেই ‘অপেক্ষার বিচারে’ চলবো না। টঙ্গীর সাংবাদিক হত্যার বিচার চাই এখনই, একদম খোলাসা, জনসম্মুখে!

আর একটা কথা-
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে, ঘুমন্ত চালকরে দিয়া গাড়ি চালাইলে কি হয় দেখছেন তো চাচা? এক পরিবারের ৭ জন মানুষ-যারা প্রবাসী বাহারের স্বজন আছিল-তারা সব গাড়িসহ পানির নিচে দাফন হইয়া গেলো।
এটা কেবল দুঃখ না-এটা রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার জ্যান্ত প্রমাণ।

চাচা, আপনি বলেন দেশে পরিবর্তন আসতেছে। মানুষ এখন বুকভরা আশা নিয়া তাকায় আপনার দিকে।
তাই চাচা, এই কথা হাওরে যেমনে কয়:

“একবার গদিতে বইলা থাকলে সবদিক ঠাহর কইরা চলতে অয়! গোটা গেরাম আপনারে এখন দেখতেছে!”

আপনার কিছু সংস্কার শুরু হইছে শুনি-
কিন্তু চাচা, আমরা চাই ‘তোলা বাজ’ মুক্ত এক বাংলাদেশ।
আমরা চাই, প্রবাসীরা নিরাপদে বাড়ি আইতে পারুক।
আমরা চাই, সাংবাদিকরা মাইর খাইয়া মরা না যাই!
আমরা চাই, মীরজাফরের বংশ শেষ হয়-আপোষের রাজনীতি খতম হয়!

আজকে এই যে গেরামের চিঠি আপনার পানে উড়াই দিলাম, এইটা শুধু আমার একার না, এইটা লক্ষ লক্ষ তারা চাচার হাহাকার।

চাচা, আপনি সাহস কইরা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত লইয়া ফেলেন-
না হয় ইতিহাস আপনেও মাফ করবো না।

তারা চাচার কবিতা: “চিঠির ভিতর চিৎকার”

চিঠির ভিতর চিৎকার জমে,
গেরামের মুখে আঁধার নামে।
একটা সাংবাদিক মরে গেলে শহরে,
চাচা, আপনি কি ঘুমান শান্ত সোহাগে?

নোয়াখালীর রাস্তায় কান্না,
সাতটা প্রান গেলো, কোন্‌ বানের পানিতে?
ঘুমন্ত চালকের নামে বাঁচে না দেশ,
আমরা বলি-আপনার হাতে হোক শেষ!

আপনে বলেন-বদল আসবে,
এই রাষ্ট্র নতুন সুরে বাঁজবে।
কিন্তু চাচা, তোলা তোলে এখনো আগের মত,
চোখের সামনে গরীব পীড়িত, মুখে কারা সুত।

প্রবাসীরা সোনার ছেলে- ফিরলে খোঁজ নাই,
গাড়িতে পইড়া মরে, প্রশাসন বলে দায়!
চাচা, আর না! আমরা গেরামের চাষা,
কিন্তু আমাদের বুকেও উঠে বিপ্লবের ভাষা।

মীরজাফর এখন কোটি কোটি বেশে,
আপনে যদি নাহি ডাকেন, মরবে কি দেশে?
একবার সাহস কইরা থাপ্পড় দেন জোরে,
এই দেশ চাই শুদ্ধ হাওয়ায়, নতুন আলোর ঘোরে।

চিঠি লিখি খালি নয়নে পানি,
আশা করি আপনি বদল আনবেন জানি।
গেরামের চিঠিতে আজ গর্জে উঠে সারাদিন,
এই কবিতা নয়-এটা রক্তে লেখা চিঠির ধ্বনি।
ছড়িয়ে দিন এই চিঠি-কবিতা

ইতি,
আপনেরই গেরামের তারা চাচা
(জয় বাংলা, জয় গণতন্ত্র)