গেরামের তারা চাচার খোলা চিঠি-৭

গেরামের তারা চাচার খোলা চিঠি-৭

প্রাপক: মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রেরক: গেরামের তারা চাচা

মাননীয় উপদেষ্টা,আসসালামু ওলাইকুম
আমগো গেরামে একটা কথা আছে- “একই দাওত দইবারে দুইবার খাইলে পেট ভরলেও লজ্জা বাড়ে।” এখন গেরামের মানুষ এই লজ্জাতেই পুড়তেছে। আমরা যে জুলাই মাসে বুক দিয়ে ঝড় ঠেকাইছি, জীবন দিয়েছি, সেই স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার বদলে আবার যেন পুরনো ফাঁদে আটকা।

এমআইএস-এর তালবাহানা
জুলাই যোদ্ধাদের তথ্যভাণ্ডার (MIS) হইবার কথা আছিল। কিন্তু এখনো কাগজে-কলমে তালবাহানা হয়নি। প্রশ্ন ওঠে-কারা দায়িত্ব পাইয়া বসে আছে, আবার কারা আড়ালে ষড়যন্ত্র কইরা বিলম্ব করতেছে?
গেরামের ভাষায় কইলে, “মইরা যাওয়া গরুরে আবার জুইল্যা পোকা কামড়ায়।” দেরি মানে ষড়যন্ত্র, আর ষড়যন্ত্র মানে আবার অন্ধকারে ঠেলা।

চাঁদাবাজ-তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য
গেরামের হাটে এখনো চাঁদাবাজরা দাওয়াতের মতো বসে টাকা উঠায়। তোলাবাজরা ঘুড়ির মতো উড়তেছে, কিন্তু কেউ সুতো কাটে না। আমরা চাইছিলাম চাঁদাবাজ-তোলাবাজ মুক্ত নির্ভেজাল বাংলাদেশ, কিন্তু এখনো তারা দাপাইতেছে।
নির্বাচন যদি হয় এই অবস্থা থাইকা, তবে এই নির্বাচনের খাতায় নাম লিখা হইবো জাতির লজ্জা, ইতিহাসের অভিশাপ।

শিক্ষা: জাতির কবর না কি ভবিষ্যৎ?
সাড়ে ছয় লক্ষ ছেলেমেয়ে ফেল করল-এটা শুধু তাদের দুঃখ না, পুরো জাতির লজ্জা। শিক্ষা কমিশন গঠন করা হইবার কথা আছিল, কিন্তু এখনো হয়নি। গেরামের প্রবাদে কইলে, “গরু মরল গাঙে, ঢেঁকি গেল বাঙ্গে।” এরা ফেল কইরা এখন জীবনের মোড়ে দাঁড়াইছে-এখানেই যদি হারা যায়, তবে জাতি হারা যাবে।

উৎপাদন-কর্মসংস্থান-দারিদ্র্য বিমোচন
কথায় আছে, “খালি হাঁড়িতে ভাত রাঁধে না।” উৎপাদন বাড়াইতে হবে, নতুন কর্মসংস্থান করতে হবে, দারিদ্র্য দূর করতে হবে। গেরামের তরুণেরা আজ কাজ খোঁজে শহরে ঘুরতেছে, কিন্তু হাতে কিছু নাই। এই ছেলেগো যদি কাজে না লাগানো যায়, তবে এই আগুন আবার ছড়াইয়া পড়বে।

প্রশাসনের নীরবতা ও পাথর দস্যু
ভোলাগঞ্জের পাথর দস্যুরা কোটি কোটি টাকার পাথর লুটে নিল, অথচ প্রশাসন তখন নীরব। মনে হয় সরকারের ভিতরে আবার আরেকটা সরকার আছে, যে সরকার বাঁধা দিতেছে, পেছন দিয়া ষড়যন্ত্র করতেছে। গেরামের প্রবাদে কইলে, “ঘরে আগুন দিলে দোষ দেয় শালিক পাখিরে।” অথচ আসল দোষীরা সামনেই দাড়ানো।

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,
আমরা আশা করি-আপনি সব বাঁধা ভাঙবেন, ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ খুলবেন। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, উৎপাদন-সবকিছু একসাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তখনই গেরামের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরবে।

তারা চাচার কবিতা।।

মাটির বুক ফুঁড়ে ধান উঠে দাঁড়ায়,
রোদে পুড়েও কৃষক হাসে, গান গায়।
কিন্তু হায়! যারা পাথর চুরি করে,
তারাই আবার রাষ্ট্র চালায়, আইন গড়ে।

নদীর পানি যেমন বাঁধ মানে না,
জনতার রক্তও নষ্ট যায় না।
জুলাইয়ের সন্তান বুক দিয়ে লড়ে,
তাদের স্বপ্ন নষ্ট হোক কেমনে করে?

মাঠে শস্য, কারখানায় ধোঁয়া,
এমন বাংলাদেশ চাই-শুদ্ধ, নতুন, সোঁয়া।
চাঁদাবাজ, দস্যু, তোলাবাজ হারায়,
স্বাধীনতার আলো ঘরে ঘরে জ্বলে যায়।

যে ছেলেমেয়েরা ফেল কইরা বসে,
তাদের চোখের জল মাটির সাথে মিশে।
তাদেরে যদি তুলি না আমরা হাতে,
লজ্জার কলঙ্ক লাগবে জাতির কপালে।

হে প্রধান উপদেষ্টা, সৎ থাকুন দৃঢ়,
অন্যায়ের বাঁধন ভাঙুন, হউক মুক্ত নীড়।
প্রতিটি ঘরে আলো,প্রতিটি মুখে গান,
বাংলাদেশ হউক সোনার, স্বপ্নভরা প্রাণ।

তারা চাচার ছড়া।।

ধানের শিষে সোনার দানা,
কষ্ট কইরা বানাই খানা।
রোদে পুইড়া গায়ে ঘাম,
দেশটা হইব সোনার ধাম।

চুরি-ডাকাত, তোলা-বাজ,
সবাই মিলে করতেছে সাজ।
সরকার ভেতর আরেক সরকার,
বাঁইধা দিতেছে বারবার।

জুলাই যোদ্ধা বুক পেতে মরে,
তাদেরে কেন ভুইলা রইলেন পরে?
রক্তের দামে পাইছি স্বাধীন,
এখনও কেন আঁধার গোপন দিন?

সাড়ে ছয়লাখ ছেলে-মাইয়া,
ফেল কইরা বসে কইর‍া কান্না।
ওরা যদি আগাইতে না পারে,
জাতির কপালে লজ্জা ভরসা ধ্বরে।

পাথর দস্যুর লুটের খেলা,
প্রশাসন তখন কেন আছিল নীলা?
চোরে চোরে তাল তো ভাই,
আইনের গন্ধও পায় নাই।

হে ইউনূস সাহেব, রাখেন খেয়াল,
নির্ভেজাল চান গেরামের কাল।
চাষাবাদে সুখ, কারখানায় ধোঁয়া,
বাংলাদেশ হউক নতুন সোঁয়া।

ইতি,
হতভাগা গেরামের তারা চাচা
১৬ আগস্ট ২০২৫