মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
❝এ দাবী প্রশাসনিক নয়-অস্তিত্বের। এ লড়াই রাজনৈতিক নয়-ইতিহাসের। নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণাই এখন উপকূলের চূড়ান্ত ডাক।❞
উপকূলের জনতার নবজাগরণ
সেনবাগে নোয়াখালী বিভাগ দাবীতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশের মধ্য দিয়ে উপকূলের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা যেন নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে।জনতার কণ্ঠে একটাই স্লোগান-“বিভাগ না পাওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।” প্রবীণ-নবীন,লেখক-সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী, প্রবাসী-সব শ্রেণির মানুষ আজ এই দাবির পাশে দাঁড়িয়েছে।তাদের কণ্ঠে এখন কেবল অঞ্চল নয়, এক নতুন রাষ্ট্রদর্শনের প্রতিধ্বনি-বিকেন্দ্রীকরণের, ন্যায্যতার, আত্মমর্যাদার।
এক শতাব্দীর অবহেলার ইতিহাস
১৯১০ সালে ব্রিটিশ প্রশাসন নোয়াখালীকে আঞ্চলিক সদর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। আজও নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের মানুষকে সামান্য প্রশাসনিক কাজের জন্য ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় চট্টগ্রাম বা ঢাকায়। এই ভৌগোলিক দূরত্বই যেন রূপ নিয়েছে রাষ্ট্রীয় অবহেলার প্রতীকে।নোয়াখালী বিভাগ দাবিটি তাই কোনো দলীয় স্লোগান নয়-এটি এক ইতিহাসগত ন্যায্যতা পুনরুদ্ধারের আহ্বান।
সরকারের নীরবতা: অবজ্ঞা নাকি ভয়?
জনজাগরণের ঢেউ এখন সেনবাগ থেকে সুবর্ণচর, হাতিয়া থেকে দাগনভূঞা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায় অদ্ভুতভাবে নীরব।এই নীরবতা প্রশাসনিক জড়তা নয়-এক প্রকার রাজনৈতিক উদাসীনতা, যা জনআস্থাকে ক্ষয় করছে। রাষ্ট্রের এই নীরবতা যেন মনে করিয়ে দেয়-যেখানে জনতার কণ্ঠরোধ করা হয়, সেখানেই বিপ্লব জন্ম নেয়।
ষড়যন্ত্রের চোরাবালি: বছরের পর বছর ধরে নোয়াখালী বিভাগ গঠনের প্রসঙ্গটি “গবেষণার জন্য বিবেচনায়” রেখে ফাইলবন্দি হয়েছে। কখনো চট্টগ্রাম-কেন্দ্রিক প্রশাসনিক লবির কারণে, কখনো ফেনীকে আলাদা রাখার গোপন পরিকল্পনায়,কখনো ঢাকার রাজনৈতিক সুবিধার ভারসাম্যে-এই দাবিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ষড়যন্ত্রের চোরাবালিতে।কিন্তু আজকের যুগে মানুষকে আর বিভক্ত রাখা যায় না।নোয়াখালীর মানুষ এখন ডিজিটালভাবে ঐক্যবদ্ধ, প্রবাসে প্রভাবশালী, দেশে সাহসী। তাদের কণ্ঠ আজ প্রশাসনিক টেবিলের চেয়ে শক্তিশালী।
একটি বিভাগের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ
নোয়াখালী বিভাগ মানে কেবল প্রশাসনিক ভবন নয়-এটি এক নতুন অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের সূচনা।উপকূলীয় কৃষি, মৎস্য ও লবণ শিল্পে নতুন বিনিয়োগ সুযোগ। চর ও দুর্যোগ এলাকায় টেকসই পুনর্বাসন ব্যবস্থা। নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কারিগরি ইনস্টিটিউটের বিকাশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মধ্যবর্তী করিডোরে শিল্প-বাণিজ্যিক কেন্দ্র গঠন।অর্থাৎ,নোয়াখালী বিভাগ মানে রাষ্ট্রের উন্নয়নের নতুন হৃদপিণ্ড।
আন্দোলনের ভেতরে এক নবজাগরণ
আজ সেনবাগে যে মিছিল চলছে, সেখানে কোনো রাজনৈতিক পতাকা নেই-আছে একটাই পতাকা, ন্যায় ও সম্মানের। এই আন্দোলনের প্রতিটি কণ্ঠ আসলে বলছে-“আমরা নোয়াখালীবাসী, আমরা অবহেলিত নই।”
এই মনোভাবই এখন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় রাজনীতির জন্য নতুন বার্তা-অঞ্চলভিত্তিক ন্যায্যতা ছাড়া জাতীয় ঐক্য সম্ভব নয়।
চূড়ান্ত ডাক রাষ্ট্রের নীরবতা যত দীর্ঘ হবে, আন্দোলনের সুর তত তীব্র হবে। নোয়াখালী বিভাগ আর কোনো দাবী নয়-এটি ইতিহাসের ঋণ, যা রাষ্ট্রকে এখনই পরিশোধ করতে হবে। উপকূলের জাগ্রত মানুষ আজ শপথ নিয়েছে-
“ষড়যন্ত্রের শৃঙ্খল ভেঙে আমরা আমাদের ভাগ্য নিজের হাতে লিখব।”
নোয়াখালী বিভাগ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন থামবে না।
এটাই ইতিহাসের দাবি,এটাই উপকূলের অঙ্গীকার।
লেখক:সম্পাদক-
নবজাগরণ
নোয়াখালীর সন্তান
অনলাইনে পড়তে:www.thenabajagaran.com