মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বাংলাদেশের উপকূলের সন্তান নোয়াখালী-যে মাটি একদিকে মেঘনার তীরে দাঁড়িয়ে ঢেউয়ের সঙ্গে লড়েছে, অন্যদিকে মানবতার বীজ বপন করেছে শিক্ষা, সাহস আর শ্রমের ঘামে। সেই নোয়াখালী আজ আবার তার প্রাপ্য মর্যাদা দাবি করছে-একটি নিজস্ব বিভাগ, নিজের নামে, নিজের ঐতিহ্যে।এ আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়, এটি ইতিহাসের ন্যায়সঙ্গত দাবি-একটি জাতিগত মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম।
আত্মপরিচয়ের উচ্চারণে আব্দুল হান্নান মাসুদ
নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য–সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ উচ্চারণ করলেন-“কখনও নোয়াখালীর মানুষ কুমিল্লার সঙ্গে বিভাগে যুক্ত হবে না।”এই বাক্যটি যেন এক প্রজন্মের দীর্ঘ নীরব প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি।তিনি আরও বলেন,“নেতা হিসেবে নয়, আমি নোয়াখালীর সন্তান হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই। এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়; এটি আঞ্চলিক মর্যাদা ও ঐতিহ্যের প্রশ্ন।”
তার এই ঘোষণা কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য নয়-এটি এক সামাজিক বিদ্রোহ, এক সাংস্কৃতিক চেতনার পুনর্জন্ম।
নোয়াখালীর ঐতিহ্য: ইতিহাসের গর্ব, অবহেলার প্রতিবাদ
নোয়াখালী মানে শুধু একটি জেলা নয়-এটি এক ইতিহাস, এক শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী সত্তা।প্রবাসী রেমিট্যান্স, কৃষি উৎপাদন, শিক্ষা ও সাংবাদিকতায় নোয়াখালী বহুদিন ধরেই জাতীয় অবদানের শীর্ষে।তবুও এই অঞ্চলকে প্রশাসনিকভাবে সবসময় দ্বিতীয় সারিতে রাখা হয়েছে।কখনও চট্টগ্রামের ছায়ায়, কখনও কুমিল্লার নিয়ন্ত্রণে-বারবার নোয়াখালীকে উপেক্ষা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার টেবিলে।এই দীর্ঘ অবহেলা এখন এক জ্বলন্ত জাগরণে রূপ নিয়েছে-“নোয়াখালী বিভাগ চাই” শ্লোগানে।
কুমিল্লা নয়, নোয়াখালীই বিভাগের কেন্দ্র
আব্দুল হান্নান মাসুদের সেই বক্তব্য-“নোয়াখালীর ঐতিহ্যের ধারে কাছেও কুমিল্লা নেই”-একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা প্রকাশ করে।ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও জীবনধারার দিক থেকে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর একসূত্রে গাঁথা-একই নদী, একই উচ্চারণ, একই ইতিহাস।অন্যদিকে কুমিল্লা এই উপকূলীয় সংস্কৃতির বাইরে।তাই ‘নোয়াখালী বিভাগ’ কোনো স্বপ্ন নয়-এটি ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতার নাম।
এ আন্দোলন রাজনীতি নয়-এটি মর্যাদার আন্দোলন
এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণা কোনো দলীয় পতাকায় বাঁধা নয়।এটি এক আত্মপরিচয়ের ডাক।মাসুদের মতো নেতারা যখন বলেন, “আমি নেতা হিসেবে নয়, নোয়াখালীর সন্তান হিসেবে কথা বলছি,”তখন বোঝা যায়-এই জাগরণ ক্ষমতার নয়, ভালোবাসার।এটি এক মাতৃভূমির প্রতি সন্তানের দায়িত্ববোধ;এটি এক জনপদের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
জাগছে নোয়াখালী: জনতার নতুন স্লোগান আজ ফেনী থেকে হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ থেকে রামগতি পর্যন্ত এক সুর
“নোয়াখালী বিভাগ চাই!”দেশ-বিদেশে থাকা প্রবাসীরাও সামাজিক মাধ্যমে একত্র হচ্ছে এই দাবিতে।ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শ্রমিক-সবাই একত্রে এই লড়াইকে পরিণত করছে এক ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে।এই আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়; এটি নোয়াখালীর নিজের অস্তিত্বের পক্ষে।
নোয়াখালী বিভাগ কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়-এটি ইতিহাসের স্বীকৃতি।যে অঞ্চল স্বাধীনতা, শিক্ষা,মানবতা ও শ্রমে দেশকে দিয়েছে অফুরন্ত সম্পদ,সে অঞ্চল আজ নিজ নামেই চায় প্রশাসনিক মর্যাদা।এটি সময়ের দাবি,এটি ন্যায়ের দাবি, এটি মানুষের দাবি।নোয়াখালী হবে বিভাগ-এটি এখন আন্দোলন নয়,এটি অঙ্গীকার।আর সেই অঙ্গীকারের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন আব্দুল হান্নান মাসুদ-যার কণ্ঠে উচ্চারিত এই একবাক্য এখন নোয়াখালীর প্রতিটি ঘরে ঘরে নতুন আশার স্লোগান: “নোয়াখালী বিভাগ হবে-এবারই হবে!”
অনলাইনে পড়তে: www.thenabajagaran.com
https://www.facebook.com/share/p/1CvQt4fxUw/





