নোয়াখালী সমিতি ঢাকা:নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও এম এ খান বেলাল-আবদুল মাবুদ দুলাল পরিষদের অঙ্গীকার

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
নোয়াখালী সমিতি ঢাকা শুধু একটি আঞ্চলিক সংগঠন নয়, বরং এটি নোয়াখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও অগ্রযাত্রার একটি প্রতীক। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বৃটিশ আমল, পাকিস্তানি দুঃশাসন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের নানা বাঁকবদলে এই সমিতি বাঙালির আত্মমর্যাদা ও আঞ্চলিক ঐক্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে যখন কার্যকরী পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন এটি কেবল আনুষ্ঠানিক কোনো ভোট নয়-বরং এটি আগামী দিনের নোয়াখালীর নতুন প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা তৈরির এক ঐতিহাসিক সুযোগ।

এই নির্বাচনে এম এ খান বেলাল-আবদুল মাবুদ দুলাল পরিষদ ৩১ জনের পূর্ণাঙ্গ পরিষদ গঠন করে “বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদ” নামে যে প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়েছে, তা শুধু নির্বাচন জেতার জন্য কোনো কৌশল নয়-বরং এটি প্রবাসী ও রাজধানীমুখী নোয়াখালীবাসীর জন্য নতুন আশার আলো। তারা যে ২০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তার ভেতরে রয়েছে আজীবন সদস্যদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে সমিতিকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনবান্ধব করার অঙ্গীকার।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পটভূমিতে যখন আঞ্চলিক চেতনা ও সংগঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন ঢাকায় বসবাসরত শিক্ষিত, সচেতন ও উদ্যমী নোয়াখালীবাসীরা একত্রিত হয়ে “নোয়াখালী সমিতি” গড়ে তোলেন। বৃটিশ আমলে এই সংগঠন শিক্ষাবিস্তারে, গ্রামীণ উন্নয়ন ও আইনি সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছিল। পাকিস্তান আমলে এটি হয়ে ওঠে স্বাধিকার আন্দোলনের নীরব পৃষ্ঠপোষক, আর স্বাধীনতার পর ঢাকায় অবস্থানরত হাজারো নোয়াখালীবাসীর এক সাংগঠনিক ছায়া।

আজীবন সদস্যদের ভোটাধিকার আন্দোলন
সমিতির ইতিহাসে আজীবন সদস্যদের ভোটাধিকার একটি দীর্ঘদিনের বিতর্কিত বিষয়। ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী প্রায়ই সাধারণ সদস্যদের কণ্ঠ রুদ্ধ করে আজীবন সদস্যদের বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে। এম এ খান বেলাল-আবদুল মাবুদ দুলাল পরিষদ এই অবিচারের অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে। এর মাধ্যমে তারা কেবল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেয়নি, বরং সমিতির প্রতিটি সদস্যকে প্রকৃত মর্যাদা দেওয়ার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছে।

৩১ জনের পূর্ণাঙ্গ পরিষদের তাৎপর্য
এই পরিষদে তরুণ-প্রবীণ, পেশাজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, প্রবাসফেরত এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের স্থান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পরিষদ একটি বার্তা দিয়েছে-এটি কেবল প্রথাগত প্রভাবশালী মহলের দল নয়, বরং নোয়াখালীর বহুমাত্রিক সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। এই ৩১ জনই আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নয়নের সেতুবন্ধন তৈরি করবেন।

নতুন প্রজন্মের জন্য ভিশন
এম এ খান বেলাল-আবদুল মাবুদ দুলাল পরিষদের প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলো হলো-
১. শিক্ষা ও স্কলারশিপ ফান্ড: ঢাকায় ও বিদেশে অধ্যয়নরত মেধাবী নোয়াখালী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি তহবিল গঠন।
২. চাকরি নেটওয়ার্কিং সেল: রাজধানীতে বসবাসরত তরুণদের কর্মসংস্থান ও নেটওয়ার্ক গঠনে সহায়তা।
৩. ডিজিটালাইজেশন: সমিতির কার্যক্রমকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনা, যাতে সব সদস্য সহজে সংযুক্ত থাকতে পারেন।
৪. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চা: নোয়াখালীর ভাষা, গান, সাহিত্য ও নাট্যচর্চার জন্য বার্ষিক উৎসব আয়োজন।
৫. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি: সকল আর্থিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সদস্যদের কাছে উন্মুক্ত রাখা।

বিপ্লবী ধারা ও গণতান্ত্রিক স্পিরিট
আজকের এই পরিষদ শুধু সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব পরিবর্তন করছে না; তারা নোয়াখালী সমাজের মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। তারা দেখিয়ে দিচ্ছে, গণতন্ত্র মানে শুধু জাতীয় রাজনীতির বড় পরিসর নয়-বরং এটি ক্ষুদ্র সংগঠন ও প্রবাসী সমিতির মধ্য দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

নোয়াখালী সমিতি ঢাকা ১৯০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত শতবর্ষ পেরিয়ে এসেছে। এই দীর্ঘ যাত্রায় বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেও সংগঠনটি টিকে আছে তার সদস্যদের আত্মত্যাগ, ঐক্য ও আঞ্চলিক ভালোবাসার ওপর ভর করে। আজ ২০২৫ সালের নির্বাচনে এম এ খান বেলাল-আবদুল মাবুদ দুলাল পরিষদ ৩১ জনের পূর্ণাঙ্গ পরিষদ গঠন করে এক নতুন ইতিহাস রচনা করছে। তারা শুধু একটি নির্বাচন জিততে আসেনি-বরং নতুন প্রজন্মের জন্য একটি গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন এবং আধুনিক নোয়াখালী সমিতি গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এই অঙ্গীকার পূরণ করতে পারলে নোয়াখালী সমিতি হবে বাংলাদেশের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর জন্য একটি রোল মডেল। আর এর মাধ্যমে প্রমাণ হবে-ঢাকার বুকে নোয়াখালী শুধু ঐতিহ্যের নাম নয়, বরং আগামী দিনের স্বপ্নেরও নাম।
ভিডিও ধারাভাষ্যকার সাংবাদিক এমএ আউয়াল

লেখক: মো:আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক ও প্রকাশক
সাপ্তাহিক নবজাগরণ
অনলাইনে পড়তে :www.thenabajagaran.com