নবজাগরণ বিশ্লেষণ ডেস্ক:
অরুণাচল প্রদেশের বিপরীতে চীনের তিব্বতের লুনজে এলাকায় নতুন করে ৩৬টি যুদ্ধবিমান বাংকার নির্মাণ-এটি কোনো সাধারণ সামরিক স্থাপনা নয়; এটি এক নতুন ভূরাজনৈতিক বার্তা। চীন জানিয়ে দিয়েছে, লাদাখ বা ডোকলাম নয়, এখন তাদের নজর সরাসরি অরুণাচলের দিকে। এই পদক্ষেপ ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে এক ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকেত ছড়িয়ে দিয়েছে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়-ভারত, যে দেশ প্রায়ই প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা নীতি নিয়ে উচ্চবাচ্য করে,এখন এই বাস্তব হুমকি নিয়েও মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে।
চীনের সামরিক কৌশল: অরুণাচলকে ঘিরে বেল্টের মত বাংকার বেষ্টনী-লুনজে অঞ্চলটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশের একদম সীমান্তবর্তী তিব্বতি এলাকা। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, সেখানে চীন সুসংগঠিতভাবে ৩৬টি ভূগর্ভস্থ বিমান বাংকার নির্মাণ করছে-যার প্রতিটি আধুনিক জে-১৬, জে-২০ যুদ্ধবিমান রাখার সক্ষমতা রাখে। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে চীন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণাত্মক সক্ষমতাও জোরদার করছে।এটি শুধু সীমান্তে এক সামরিক পদক্ষেপ নয়-এটি ভারতের প্রতি একটি প্রকাশ্য বার্তা:“তুমি যদি অরুণাচলকে তোমার দাবি মনে করো, তবে আমরা তাকে ঘিরে যুদ্ধ প্রস্তুতি নেব।”
ভয়ের রাজনীতি ও ভারতের দ্বিচারিতা
চীন সীমান্তে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছে-এ কথা ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্র পর্যন্ত উচ্চারণ করতে ভয় পায়। কারণ ভারত জানে, একবার সংঘাত শুরু হলে, আধুনিক প্রযুক্তি ও রসদে তারা চীনের সমকক্ষ নয়।অন্যদিকে পাকিস্তানকে ঘিরেও ভারতের ভয় জেগে থাকে, যেন প্রতিবেশী নয়-“জমের মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বী।”কিন্তু যখন বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করে, অথবা উত্তরবঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়, তখনই ভারত বলে- “এটি ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
কী আজব রাষ্ট্রীয় মানসিকতা! চীন সীমান্তে বিমান বাংকার গড়ে, পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসবিরোধী মোতায়েন জোরদার করে-সেটি নীরবে মেনে নেয় ভারত। কিন্তু ছোট প্রতিবেশীরা যখন স্বনির্ভর হতে চায়, তখনই ভারতের চোখে “হুমকি”!
 বিগত শাসনের নতজানু নীতি: ভারতের আগ্রাসনের জন্ম
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে ভারতের “অধিপত্যনীতি” কার্যকর হয়েছে অভ্যন্তরীণ দুর্বল নেতৃত্বের কারণেই।যে সময় ভারতের সঙ্গে “একতরফা সহযোগিতা” চুক্তি করা হয়েছে, সেই সময়েই ভারত জলবণ্টন, বাণিজ্য ভারসাম্য, সীমান্ত হত্যা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে সর্বাধিক সুবিধা নিয়েছে।
এমনকি প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ভারত বারবার হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণমূলক ভূমিকা রেখেছে-ফলে জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি ঘৃণা ও সন্দেহ আজ সর্বোচ্চ পর্যায়ে।আজ ভারত নিজেই বুঝছে- দক্ষিণ এশিয়ার কোনো প্রতিবেশীই আর তাকে বন্ধু নয়, বরং সবাই ধীরে ধীরে ভারত-বিরোধী অবস্থানে একতাবদ্ধ হচ্ছে।
 বন্ধু কে? শুধু ইসরায়েল-দখলদার আর হত্যাকারী রাষ্ট্র
ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থান এখন একাকীত্বের দোরগোড়ায়। পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা, এমনকি লাতিন আমেরিকার দেশগুলোও ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের বিরোধিতা করছে, কিন্তু ভারত নীরব নয়-ভারত গর্বিত সহযোগী।একটি দখলদার ও হত্যাকারী রাষ্ট্র ইসরায়েলই এখন ভারতের একমাত্র কূটনৈতিক বন্ধু। এ যেন “হত্যার রাজনীতিতে” দুই রাষ্ট্রের নৈতিক জোট।
 দক্ষিণ এশিয়ার নতুন বাস্তবতা: নীরব বিপ্লব
চীন যখন অবকাঠামো, প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশলে পুরো অঞ্চলকে বদলে দিচ্ছে, ভারত তখনও বসে আছে হুমকি আর বিভ্রান্তির রাজনীতিতে।বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-প্রতিটি দেশ এখন ভারতের একচ্ছত্র প্রভাব থেকে বেরিয়ে বহুমাত্রিক কূটনীতির পথে। এটি ভারতের জন্য সতর্কবার্তা- “হযে রাষ্ট্র প্রতিবেশীদের সমান মর্যাদা দেয় না, তার নিরাপত্তাও কখনো টিকবে না।”
 বাংলাদেশের অবস্থান:স্বাধীন নীতি ও শক্ত প্রতিরক্ষা
বাংলাদেশ এখন তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ বহু দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে।
উত্তরবঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়া বা আধুনিক অস্ত্রচুক্তি করা কোনো “ভারত-বিরোধী” পদক্ষেপ নয়-এটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সার্বভৌম অধিকারের প্রয়োগ।
ভারত যদি সেটিকেও“নিরাপত্তার হুমকি”ভাবে,তবে সেটি ভারতের নিজের ভয়ের প্রতিফলন, বাংলাদেশের নয়।
ভারত আজ এক দ্বিধাগ্রস্ত রাষ্ট্র-চীনের সামনে নীরব, পাকিস্তানের সামনে ভীত,আর প্রতিবেশীদের সামনে আগ্রাসী। এই দ্বিচারিতা ও ভয়ের রাজনীতি চিরকাল টিকবে না। দক্ষিণ এশিয়া এখন জেগে উঠছে-এক নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যেখানে “বড় ভাইয়ের ভয়” নয়, বরং সমতার সম্মান ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ভারসাম্য-ই হবে ভবিষ্যতের পথ। “সাহস আসুক সীমান্তের ওপারে নয়, ভিতরের ভিতর থেকে।”
নবজাগরণ বিশ্লেষণ ডেস্ক:
 অনলাইনে পড়ুন: www.thenabajagaran.com
#Nabajagaran #China #India #Bangladesh #Arunachal #Tibet #Turkey #Israel #SouthAsia #Geopolitics #RevolutionaryEditorial #NTVNews
 
				 
															 
															




