অর্জুনতলার মেধা সংবর্ধনা:পতিত রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে তরুণ মেধার ঘোষণা-“আমরাই ভবিষ্যৎ”

মো:আবু তাহের পাটোয়ারী:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভূগোল এখন দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কেন্দ্রের অপশাসন,শিক্ষানীতির ভাঙন,তরুণ প্রজন্মকে পরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত করা এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রযন্ত্রের চাপ সবকিছুর মাঝেও অর্জুনতলার একটি ছোট আয়োজন আজ দেশের পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় বার্তা হয়ে উঠেছে।সেনবাগের ৫নং অর্জুনতলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সম্মানে যে “মেধা সংবর্ধনা ২০২৫”অনুষ্ঠিত হলো-তা নিছক অনুষ্ঠান নয়;এটি একটি রাজনৈতিক ঘোষণা,একটি সামাজিক বিদ্রোহ,এবং একটি নতুন প্রজন্মের শপথ।

আজ সকালে ছিলোনিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে তরুণদের চোখে যে আগুন,যে স্বপ্ন,যে দৃপ্ত অভিব্যক্তি দেখা গেছে-তা প্রমাণ করে দিয়েছে-পতিত রাষ্ট্রযন্ত্র যাই-ই করুক,বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন আর তাদের হাতের খেলনা নয়; ভবিষ্যৎ তরুণদের।

রাষ্ট্র যখন ব্যর্থ,তখন সমাজ সংগঠিত হয়-অর্জুনতলা তার প্রমাণ-বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে-যখন কেন্দ্র ব্যর্থ হয়, তখন প্রান্তিক মানুষেরাই উঠেপড়ে লাগে।মফস্বলের তরুণরাই তখন পরিবর্তনের বীজ রোপণ করে।অর্জুনতলা ছাত্রদলের এই মেধা সংবর্ধনা দেখিয়ে দিল-শিক্ষাকে মর্যাদা দিতে রাষ্ট্র হাজির না হলেও-সমাজ, সংগঠন আর তৃণমূল রাজনীতি এগিয়ে আসতে পারে।রাষ্ট্র যখন শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ-তখন ছাত্রদলের মতো একটি সংগঠন এগিয়ে এসে দাঁড়ালো মেধার পাশে, হৃদয়ের পাশে, ভবিষ্যতের পাশে।এটাই বিপ্লবের সূচনা।

অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব-জনগণের রাজনীতি বনাম ক্ষমতার রাজনীতি-অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোকলেছুর রহমান, সভাপতি, অর্জুনতলা ইউনিয়ন ছাত্রদল।সঞ্চালনা করেন আমিন উল্লাহ আকরাম।এই দুই তরুণের নেতৃত্বেই প্রমাণ হয় বাংলাদেশের নতুন নেতৃত্ব রাজধানীর উঁচু দালানে জন্ম হয় না; জন্ম হয় অর্জুনতলার মতো জনপদে, যেখানে রাজনীতি মানে মানুষের পাশে দাঁড়ানো,তরুণদের শক্তিকে সম্মান দেওয়া।

লায়ন সৈয়দ হারুন এমজেএফ-মেধা রাজনীতির নতুন প্রতীক-অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লায়ন সৈয়দ হারুন এমজেএফ-বিশিষ্ট সমাজসেবক,শিক্ষানুরাগী,টপ স্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সেনবাগ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। তিনি শুধু বক্তা হিসেবে আসেননি-তিনি এসেছেন ভবিষ্যতের যুব সমাজকে একটি বার্তা দিতে:বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে হলে মেধার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে-সন্ত্রাস,চাঁদাবাজি,

দমনপীড়নের রাজনীতি নয়।তিনি আরও বলেন-যে জাতির তরুণরা স্বপ্ন দেখে,সে জাতিকে কেউ দমাতে পারে না।এই বক্তব্য আজকের বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কারণ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তরুণদের ভয় দেখিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হয়েছে।মেধাবীদের সামনে বাঁধা তৈরি করা হয়েছে।কোটা,দুর্নীতি,শিক্ষানীতি-সবই ছিল মেধার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।অর্জুনতলার এই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে লায়ন হারুন যেনবললেন-অন্ধকারের জাল ভেঙে মেধার রাজনীতি ফিরে আসছে।

বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য:মেধাকে কেন্দ্র করে নতুন সামাজিক চুক্তি-অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হোসেন শহিদ সোহরাওয়াদী,সাবেক সাধারণ সম্পাদক, অর্জুনতলা ইউনিয়ন বিএনপি;হারুনুর রশিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন বিএনপি মো:কামাল উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক;মাওলানা বেলায়েত হোসেন, অধ্যক্ষ;মামুনুর রশিদ পাটোয়ারী,ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, যুবদল;খোরশেদ আলম ভুইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, যুবদল আবদুল জব্বার মাহাদী, যুবদল নেতা তাদের বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল একটাই-মেধাই রাষ্ট্রের মূল শক্তি।শিক্ষার্থীই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের স্থপতি।তাই মেধাকে স্বীকৃতি দেওয়া মানেই রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করা।

৩৮ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা-একটি সংখ্যার চেয়েও বেশি
৩৮-এটা শুধুই একটি সংখ্যা নয়।এটা অর্জুনতলার ভবিষ্যৎ ৩৮টি প্রদীপ।প্রতিটি প্রদীপ মিলেই বদলাবে একটি ইউনিয়ন, একটি উপজিলা, এবং একদিন-পুরো রাষ্ট্র। এই ৩৮ শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট প্রাইজমানি প্রদান করা হয়েছে।কিন্তু মূল উপহার ছিল-সম্মান। স্বীকৃতি। প্রেরণা।একটি জাতি গঠনে এগুলিই সবচেয়ে বড় শক্তি।

অর্জুনতলা-একটি ইউনিয়ন নয়,একটি রাজনৈতিক প্রতীক-আজ অর্জুনতলা পুরো বাংলাদেশকে একটি বার্তা দিয়েছে:রাষ্ট্রীয় স্তব্ধতা ভেঙে নতুন বাংলাদেশ তৈরি হবে মফস্বল-তরুণ-মেধার জোটে।এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করেছে-বাংলাদেশের পরিবর্তন চট্টগ্রাম, ঢাকার বড় হোটেলে জন্ম হয় না।পরিবর্তন জন্ম নেয় এমন হলরুমে, যেখানে ৩৮ তরুণের হাতে একটি ক্রেস্ট দিয়ে বলা হয়-তোমরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।এই হলো জনগণের রাজনীতি।এটাই নতুন বাংলাদেশ গড়ার রাজনীতি।

অর্জুনতলার এই ছোট অনুষ্ঠানই হতে পারে বড় বিপ্লবের শুরু-আজকের মেধা সংবর্ধনা যেন একটি ঘোষণা-রাষ্ট্র যাই ভাঙুক,রাজনীতি যতই কলুষিত হোক,বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিক্রি হয়ে যাবে না।তরুণের মেধা কোনদিন হারাবে না। ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান স্মরণ করিয়ে দিল-বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মেধা,নৈতিকতা এবং দায়িত্ববোধ-আবার ফিরে আসছে।এভাবেই শুরু হয় বিপ্লব-চিৎকারে নয়,স্লোগানে নয়,বরং একটি ইউনিয়নে ৩৮ জন তরুণকে সম্মান জানিয়ে।

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী
সম্পাদক, নবজাগরণ
অনলাইনে পড়ুন:www.thenabajagaran.com